গণধর্ষণের অভিযোগে সুবর্ণচরে গ্রেফতার ২

0
667

খবর ৭১ঃ নোয়াখালীর সুবর্ণচরে পাঁচ সন্তানের জননীকে (৩৫) গণধর্ষণের অভিযোগে দুইজনকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। সোমবার দুপুরে উপজেলার চরজুবলী ইউনিয়নের চরবাগ্যা থেকে তাদের গ্রেফতার করা হয় বলে সমকালকে নিশ্চিত করেন চরজব্বার থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. শাহেদ উদ্দিন।

গ্রেফতারকৃতরা হলেন- আবুল বাশার (৩০) ও মোহাম্মদ ইউসুফ মাঝি (৪২)।

সোমবার ধর্ষিতার স্বামী বাদী হয়ে চরজব্বার থানায় আটজনের নাম পরিচয় ও চারজনকে অজ্ঞাত আসামি করে একটি মামলা দায়ের করেন। পুলিশের হাতে গ্রেফতার বাশার ও ইউসুফ ওই মামলার আসামি।

ওসি মো. শাহেদ উদ্দিন, সব আসামিকে ধরতে পুলিশ অভিযান অব্যাহত আছে। এ ঘটনায় অভিযুক্ত কেউ পার পাবে না। পুলিশ কঠোর অবস্থানে আছে।

রোববার রাতে চরজুবলী ইউনিয়নের উত্তর বাগ্যা গ্রামে ওই নারী গণধর্ষণের শিকার হয়েছেন বলে অভিযোগ করেন। তাকে রোববার রাত ১২টা ২০ মিনিটে নোয়াখালী জেনারেল হাসপাতালের গাইনি ওয়ার্ড ভর্তি করা হয় বলে জানান হাসপাতালের আবাসিক চিকিৎসা কর্মকর্তা (আরএমও) সৈয়দ মহিউদ্দিন আবদুল আজিম। সোমবার সকালে ঘটনাটি জানাজানি হওয়ার পর হাসপাতালে ছুটে যান জেলার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার দীপক জ্যোতি খীসা।

দীপক জ্যোতি খীসা সাংবাদিকদের বলেন, হাসপাতালে ভর্তি হওয়া ওই নারীর মুখ থেকে ঘটনার বিস্তারিত শুনেছেন। ওই নারী অভিযোগ করেছেন যে স্বামীর সঙ্গে মোটরসাইকেলে করে বাড়ি ফেরার পথে কিছু লোক তাদের পথ রোধ করেন। পরে পাশের একটি কলাবাগানে নিয়ে তাকে ধর্ষণ করা হয়েছে। উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে কোনো এক প্রার্থীকে ভোট দেওয়াকে কেন্দ্র করে কিছু লোকের সঙ্গে তার বাগ্‌বিতণ্ডা হয়। এর জের ধরে এই ধর্ষণের ঘটনা বলে ওই গৃহবধূ দাবি করেছেন। তবে তদন্তে এ বিষয়ে বিস্তারিত বের হয়ে আসবে।

রোববার অনুষ্ঠিত উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে ভাইস চেয়ারম্যান পদের এক প্রার্থীকে ভোট না দেওয়ায় এ নির্যাতন চালানো হয় বলে নির্যাতনের শিকার নারী ও তার স্বামীর অভিযোগ। তারা জানান, ভাইস চেয়ারম্যান পদে তাদের পছন্দের প্রার্থী তাজ উদ্দিন বাবরের চশমা প্রতীকে ভোট দেয়ায় স্বতন্ত্র প্রার্থী মো. ফরহাদ হোসেন চৌধুরী বাহারের সমর্থকরা ভোটের দিন ওই নারী ও তার স্বামীকে দেখে নেয়ার হুমকি দেয়। এতে ভয়ে তারা উপজেলার পশ্চিম চরজব্বার ইউনিয়নে নিজ বাড়িতে না গিয়ে বিকেলে তাদের এক আত্মীয়ের বাড়িতে আশ্রয় নেন। পরে বাড়িতে থাকা সন্তানদের কথা চিন্তা করে রাত ৮টার দিকে মোটরসাইকেলে বাড়ি ফেরার পথে তালা প্রতীকের প্রার্থীর সমর্থক ইউসুফ মাঝি ও বেচু মাঝিসহ কয়েকজন তাদের মোটরসাইকেলের গতিরোধ করে। এক পর্যায়ে লাথি মেরে ফেলে দেয়। এ সময় সন্ত্রাসীরা ওই নারীর স্বামীকে মারধর করে তার মুখ বেঁধে ফেলে। পরে বেচু মাঝি, ফজলু ও আবুল বাসার ওই নারীকে গত সংসদ নির্বাচনে আলোচিত ধর্ষণ মামলার আসামি রুহুল আমিনের কলা বাগানে নিয়ে গণধর্ষণ করে বলে নির্যাতিতা নারী অভিযোগ করেন।

ওই নারীর স্বামীর বলেন, রাত আটটার দিকে ঝড়-বৃষ্টি শুরু হলে হামলাকারীরা সবাই দৌড়ে পালিয়ে যান। এ সময় তিনি চিৎকার দিলে আশপাশের লোকজন এগিয়ে তার স্ত্রীকে অজ্ঞান অবস্থায় উদ্ধার করে হাসপাতালে ভর্তি করেন। তিনি বলেন, নির্বাচনে ভাইস চেয়ারম্যান পদে প্রতিদ্বন্দ্বী দুই প্রার্থীই ছিলেন আওয়ামী লীগের।

নোয়াখালী জেনারেল হাসপাতালের আবাসিক চিকিৎসক সৈয়দ মহিউদ্দিন আজিম জানান, ওই নারী ধর্ষণের স্বীকার হয়েছেন বলে তাকে জানিয়েছেন। তার শরীরে আঘাতের চিহ্ন রয়েছে। আজ (সোমবার) ওই নারীর পরীক্ষা-নিরীক্ষা করা হবে বলে জানান তিনি।

গত ৩০ ডিসেম্বর একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের দিন রাতে সুবর্ণচরের চরজুবলী ইউনিয়নের মধ্যবাগ্যা গ্রামে স্বামী-সন্তানকে বেঁধে রেখে চার সন্তানের জননী চল্লিশোর্ধ এক নারীকে গণধর্ষণের অভিযোগ ওঠে। এ ঘটনা দেশে ব্যাপাক আলোচিত হয়। নির্যাতিতার স্বামী বাদী হয়ে উপজেলার ৫ নম্বর চরজুবলী ইউনিয়নের ৪ নম্বর ওয়ার্ডের সাবেক ইউপি সদস্য মো. রুহুল আমিনকে প্রধান করে ৯ জনের নামে মামলা করেন। নির্যাতিত নারীর অভিযোগ ছিল, ভোটকেন্দ্রে থাকা ব্যক্তিদের পছন্দের প্রতীকে ভোট না দেওয়ার জের ধরে ওই হামলা ও ধর্ষণের ঘটনা ঘটে। ওই ঘটনায় ১৬ জনের বিরুদ্ধে গত ২৭ মার্চ আদালতে অভিযোগপত্র দাখিল করে জেলা গোয়েন্দা পুলিশ (ডিবি)।

রুহুল আমিন সুবর্ণচর উপজেলা আওয়ামী লীগের প্রচার সম্পাদক ছিলেন। সুবর্ণচর উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও চরজুবলী ইউপি চেয়ারম্যান মোহাম্মদ হানিফ চৌধুরীর আশ্রয়-প্রশ্রয়ে রুহুল আমিন এলাকায় আধিপত্য বিস্তার করেছে বলে অভিযোগ উঠে। ধর্ষণের আসামি হওয়ার পর রুহুলকে বহিষ্কার করা হয় দল থেকে।

প্রথমে রুহুল আমিনকে আসামির তালিকা থেকেও বাদ দেয় পুলিশ। এ ঘটনায় চট্টগ্রাম রেঞ্জের ডিআইজি খন্দকার গোলাম ফারুকের কাছে হতাশা প্রকাশ করেছিলেন ওই নারী। পরে রুহুল আমিনকেও আসামি হিসেবে গ্রেফতার করা হয় এবং অভিযুক্ত পুলিশ কর্মকর্তা চরজব্বার থানার ওসি নিজাম উদ্দিনকে প্রত্যাহার করা হয়।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here