শায়েস্তাগঞ্জের রেলওয়ে জংশনের অবহেলায় পড়ে আছে গণকবরটি

0
293

খবর৭১ঃ মঈনুল হাসান রতন হবিগঞ্জ প্রতিনিধি: স্বাধীনতার ৪৭ বছরেও হবিগঞ্জ জেলার শায়েস্তাগঞ্জের রেলওয়ে জংশনের গণ কবরের খোঁজ কেউ নিতে আসেনি। এর পাশে গড়ে উঠেছে অপরিকল্পিত বস্তি। ১৯৭১ সালের স্বাধীনতা যুদ্ধের সময় ওই স্থানে ১১ জন চা শ্রমিককে নির্মম ভাবে হত্যা করে পাক হানাদার বাহিনী। সে স্মৃতি বুকে নিয়ে আজও নিরবে, নিভৃতে চোখের অশ্র“ ফেলেন শ্রমিকদের স্বজনরা। তবে স্বাধীনতার ৪৭বছরেও সংরক্ষণ করা হয়নি মুক্তিযুদ্ধের স্মৃতি বিজড়িত গণকবরটির। অবহেলিত পরিত্যাক্ত ভূমির পড়ে আছে কবরটি। ৭১’ র আগষ্ট মাসের ১ম সপ্তাহের শায়েস্তাগঞ্জের পাশ্ববর্তী লালচান্দ চা বাগান থেকে ১১ জন শ্রমিককে ধরে আনে পাক হানাদাররা স্থানীয় রাজাকারদের সহায়তায়। পরে গুলি করে তাদেরকে আহত করে জীবন্ত অবস্থায় মাটি চাপা দেয়। ওই দিন যারা ১১ জনকে মাটি চাপা দিয়েছিলেন তাদের একজন আব্দুল গফুর ঘটনার বর্ণনা দিতে গিয়ে বলেন তখন তার বয়স ১৬/১৭। জ্ঞাতি চাচার চায়ের দোকান দেখতে এসেছিলেন রেলওয়ে জংশনে। এসময় আটক হন পাক সেনাদের হাতে। ওরা তাকে নিয়ে আসে রেলওয়ের গেইট ঘরে। সেখানে তিনি দেখনে ১১ জন লোক হাত-পা বাঁধা অবস্থায় বন্দি। আরও ৫জন লোককে খন্তা-কোদাল হাতে দেখতে পান। ২ জন পাক সেনা তাদের প্রত্যেককে একমগ করে পানি পান করায়। এর পর নিয়ে আসে গেইট ঘরে পেছনে গর্তের মধ্যে। হাত বাঁধা অবস্থায় গর্তে বসিয়ে এদের গুলি করে। কিন্তু মৃত্যু নিশ্চিত হওয়ার আগেই তিনি সহ ৬ জনকে পাক সেনারা নির্দেশ দেয় ১১ জনকে মাটি চাপা দিতে। এ সময় অনেকে আহত অবস্থায় দাঁড়াতে চাইলে হায়নারা পা চেপে ধরে মাটি চাপা দিতে বাধ্য করে। ওই দিন পাক হানাদার বাহিনীর নির্মমতার স্বীকার হন লাল চান্দ চা বাগানের মৃত বেহারী বাউরীর পুত্র কৃষ্ণ বাউরী, রাজেন্দ্র রায় বাউরী, গহর রায় বাউরী, সন্ন্যাসী বাউরীর পুত্র নেপু বাউরী, কুমার গোয়ালার পুত্র রাজকুমার গোয়ালা, বিপক বাউরী, কৃষ্ণ বাউরী পুত্র সুনীল বাউরী, ভুবন বাউরী, মিতাই বাউরীর পুত্র মহাদেব বাউরী, হরিদাস সাধুর পুত্র লাল সাধু, আতাব আলীর পুত্র আনু মিয়া। তাদের স্বজনরা আজও চোখের অশ্র“ ফেলেন নীরবে নিভৃতে। গণ কবরটির সম্পর্কে জানতে চাইলে শায়েস্তাগঞ্জ পৌর মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডার মোহাম্মদ আলী জানান, শায়েস্তাগঞ্জের পার্শ্ববর্তী লাল চান্দ চা বাগানের ১১জন অসহায় নিরীহ শ্রমিককে ধরে আনে পাকিস্তানিরা। কিছু বুঝে ওঠার আগেই হায়নার দল একে একে তাদের গুলি করে হত্যা করে। তিনি গণকবরটি সংরক্ষণ করে স্মৃতিস্তম্ভ নির্মাণের দাবী জানান। গণকবরের পাশে বসবাসকারী মুক্তিযোদ্ধা মাহতাব আলী ক্ষোভের সাথে বলেন স্বাধীনতার ৪২ বছর হলেও এ গণকবরের স্মৃতি রক্ষায় আজও এগিয়ে আসেনি প্রশাসন ও স্থানীয় নেতারা। গণকবরটি পরিণত হয়েছে জংলা ভূমিতে।

খবর৭১ /জি

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here