ঘৃণাবাদী মন্তব্যকে প্রাতিষ্ঠানিক রূপ দিয়েছে মিয়ানমার: জাতিসংঘ তদন্তকারী

0
264

খবর৭১:মিয়ানমারে চতুর্থ শ্রেণীর শিক্ষার্থীদের পাঠ্যবইতে মিশ্র রক্তের অধিকারীদের ঘৃণা করতে শেখানো হচ্ছে বলে জানিয়েছেন জাতিসংঘের এক মানবাধিকার তদন্তকারী। মঙ্গলবার প্রকাশিত এক রিপোর্টে দেশটিতে ঘৃণাবাদী মন্তব্যের বিস্তার নিয়ে সতর্ক করেছেন মিয়ানমারের মানবাধিকার তদন্তে জাতিসংঘের নিযুক্ত বিশেষ দূত ইয়ানঘি লী। প্রতিবেদনে তিনি অভিযোগ তুলেছেন ঘৃণাবাদী মন্তব্যকে প্রাতিষ্ঠানিক রূপ দিয়েছে মিয়ানমার। কাতারভিত্তিক সংবাদমাধ্যম আল জাজিরা জানিয়েছে, নতুন এই প্রতিবেদন নিয়ে মিয়ানমার সরকার এখনও কোনও প্রতিক্রিয়া দেয়নি।
জাতিসংঘের নিযুক্ত মিয়ানমার বিষয়ক বিশেষ দূত ইয়ানঘি লী
জাতিসংঘের নিযুক্ত মিয়ানমার বিষয়ক বিশেষ দূত ইয়ানঘি লী

২০১৭ সালে রাখাইনে রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীর বিরুদ্ধে নিরাপত্তা বাহিনীর অভিযান নিয়ে আন্তর্জাতিক সমালোচনার মুখে রয়েছে মিয়ানমার সরকার। ওই অভিযানের কারণে বাংলাদেশে পালিয়ে আসে প্রায় সাড়ে সাত লাখ রোহিঙ্গা। নিরাপত্তা বাহিনীর তল্লাশি চৌকিতে হামলার পর দেশটির সেনাবাহিনী বৈধ অভিযান চালিয়েছে বলে মিয়ানমার দাবি করে আসলেও বিভিন্ন সংবাদমাধ্যমের অনুসন্ধানে উঠে আসে ওই হামলার আগে থেকেই রাখাইনে রোহিঙ্গাবিরোধী মনোভাব তৈরিতে ঘৃণাবাদী মন্তব্য ছড়ানো হয়েছে। প্রসঙ্গত, দীর্ঘদিন মিয়ানমারে বসবাস করে আসা রোহিঙ্গাদের নাগরিকত্ব স্বীকার করে না মিয়ানমার। তাদের বাংলাদেশ থেকে যাওয়া অবৈধ অভিবাসী হিসেবে দেখা হয়।

রাখাইনে রোহিঙ্গা বিরোধী অভিযানে সেনাবাহিনীর বিরুদ্ধে মানবাধিকার লঙ্ঘনের অভিযোগ উঠলে তদন্ত করতে মিয়ানমারে প্রবেশের অনুমতি চেয়ে ব্যর্থ হন জাতিসংঘের বিশেষ দূত ইয়ানঘি লী। দেশটির নোবেল জয়ী নেত্রী অং সান সু চির সরকারস দাবি করে তার আগের রিপোর্টগুলো ‘বস্তুনিষ্ঠ ও নিরপেক্ষ’ না হওয়ায় তাকে ওই অনুমতি দেওয়া হয়নি।

মঙ্গলবার প্রকাশিত নতুন রিপোর্টে ইয়ানঘি লী বলেছেন, গত কয়েক দশক ধরে নিপীড়ন, আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের নিষ্ক্রিয়তা বা বিলম্বিত পদক্ষেপের শিকার হয়েছে মিয়ানমারের মানুষ। আর এসব কারণে আরও বেশি অন্যায্যতার শিকার হয়েছে তারা। প্রতিবেদনে মিয়ানমারের মানবাধিকারের উন্নয়নে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়কে বাস্তব উদ্যোগ নেওয়ার আহ্বান জানান ইয়ানঘি লী।

গত নভেম্বরে মিয়ানমারের ধর্ম ও সংস্কৃতি বিষয়ক মন্ত্রী থুরা অং কো ইসলামকে উগ্রবাদী ধর্ম বেল মন্তব্য করেন। ওই মন্তব্যকে ইঙ্গিত করে ইয়ানঘি লী তার প্রতিবেদনে বলেছেন, ঘৃণাবাদী মন্তব্যের বিস্তৃত ধরণ ভীতিকর, বিশেষ করে যখন তা সরকারের উচ্চ পর্যায়ের কর্মকর্তারা করে। লী জানান, দেশটির প্রাথমিক পাঠ্যসূচিতে বৈষম্যমূলক ও হিংসাত্মক পাঠ্য উপকরণ রয়েছে। উদাহরণ হিসেবে তিনি চতুর্থ শ্রেণীর পাঠ্যবইতে ‘উনথানু স্পিরিট’ বা ‘জাতীয়তাবাদী বা দেশপ্রেমিক মূল্যবোধ’ শিরোনামের একটি অধ্যায়ের কথা উল্লেখ করেন। ওই অধ্যায়ে লেখা রয়েছে, ‘যারা মিশ্র রক্তের অধিকারী তাদের আমরা ঘৃণা করি, জাতীয় অগ্রগতিতে তারা নিষিদ্ধ’। লী বলেন, এধরণের পাঠ্য পড়ানো হলে শিশুরা জাতিগত শ্রেষ্ঠত্ব শিখতে পারে আর সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি নষ্ট হতে পারে।

প্রতিবেদনে লী বলেন, মিয়ানমার সরকার ও সেনাবাহিনী সংশ্লিষ্ট গ্রুপগুলোর সদস্যরা ফেসবুকে ঘৃণাবাদী মন্তব্য ও ভুয়াতথ্য ছড়ানো অব্যাহত রেখেছে। সামাজিক যোগাযোগের মাধ্যমটির কর্তৃপক্ষকে মিয়ানমারের মানবাধিকার রক্ষায় আরও পদক্ষেপ নেওয়ার আহ্বান জানান তিনি।

বিভিন্ন নৃতাত্ত্বিক গোষ্ঠীগুলোর সঙ্গে মিয়ানমারের কয়েক দশকের সংঘাত নিরসনে অং সান সু চির সরকারের প্রতিশ্রুতির বিষয়ে লী বলেন, এই প্রক্রিয়া এগিয়ে নিতে হলে অর্থবহ, উন্মুক্ত এবং অংশগ্রহলমূলক আলোচান জরুরি।
খবর৭১/জি

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here