সৈয়দপুরে ক্ষতিকর কেমিকেল ও রঙ মিশ্রিত মুখরোচক পণ্যে বাজার সয়লাব

0
340

মিজানুর রহমান মিলন, সৈয়দপুর (নীলফামারী) প্রতিনিধি :
সৈয়দপুরে ক্ষতিকর কেমিকেল ও রঙ মিশ্রিত উপাদান দিয়ে তৈরী লজেন্সসহ মুখরোচক পণ্যে সয়লাব হয়ে গেছে শিশু খাদ্যের বাজার। এসব অস্বাস্থ্যকর পণ্য সৈয়দপুরসহ উত্তর জনপদে ছড়িয়ে পড়েছে। শিশুদের আকৃষ্ট করতে মিষ্টান্ন জাতীয় লজেন্সে লোভনীয় বিষাক্ত রঙ ও নিম্নমানের উপকরণ দিয়ে তৈরী লজেন্স দেদারসে বিক্রি হচ্ছে বাজারে। এসব খেয়ে শিশুরা আক্রান্ত হচ্ছে পেটের পীড়া, ডায়রিয়াসহ নানা রোগে। যা জনস্বাস্থ্যের জন্য হুমকি বলে মনে করছেন স্থানীয় স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা। দুই দফা ভেজাল বিরোধী অভিযানে ক্ষতিকর লজেন্স ও রঙ জব্দ করার ঘটনায় এমন ভয়ানক চিত্র মিলেছে।
চলতি জানুয়ারি মাসে সৈয়দপুর শহরে দুই দফা ভেজাল বিরোধী অভিযান চালায় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের রংপুর বিভাগীয় দপ্তর। গত ৫ জানুয়ারি পরিচালিত অভিযানে হাতিখানা ক্যাম্পে অবৈধ লজেন্স তৈরীর ফ্যাক্টরীর সন্ধান পায়। এ সময় ক্ষতিকর রঙ মিশ্রিত ও নিম্নমানের উপকরণে তৈরী বিপুল পরিমাণ লজেন্স, রঙ ও নিম্নমানের উপকরণ জব্দ করা হয়। পরে ধ্বংস করা হয় এসব জব্দ পণ্য। এ সময় ভ্রাম্যমাণ আদালতে ফ্যাক্টরী মালিক আজাদ ওরফে ভাককোলকে ২০ হাজার টাকার অর্থদন্ড দেয়া হয়। একই সঙ্গে সিলগালা করে বন্ধ করে দেয়া হয় অবৈধ ওই ফ্যাক্টরী। সর্বশেষ গত ১৩ জানুয়ারি অপর এক অভিযানে শহরের শহীদ জহুরুল হক সড়কে অবস্থিত পাইকারী বাজারের দুটি দোকান থেকে জব্দ করা হয় ২ বস্তা ক্ষতিকর লজেন্স। এসব ক্ষতিকর লজেন্স দোকানীরা মজুদ করে বিক্রি করে আসছিল। স্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর ওই পণ্য মজুদ ও বাজারজাত করার অভিযোগে ভ্রাম্যমাণ আদালতে দুই দোকানীকে ১৮ হাজার টাকা জরিমানা করা হয়। এর মধ্যে রাজু স্টোরের মালিক মো. রাজুকে ১০ হাজার টাকা এবং এরশাদ স্টোরের মালিক পাপ্পুকে ৮ হাজার হাজার টাকা জরিমানা করা হয়। অভিযান চলাকালে অন্যান্য পাইকারী দোকানিরা ধরা পড়ার ভয়ে তাড়াহুড়ো করে দোকান বন্ধ করে সটকে পড়েন। ফলে পার পেয়ে যান তারা। ভেজাল বিরোধী এ অভিযানে ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা করেন ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের রংপুর বিভাগীয় দপ্তরের সহকারী পরিচালক আফসানা পারভীন। এ অভিযানে সংশ্লিষ্টরা জানান, শিশুখাদ্যের পণ্যের বাজারে সস্তা দামের এসব মিষ্টান্ন জাতীয় পণ্যের বিপুল চাহিদা থাকায় বাজারজাত করা হত এসব বিষাক্ত পণ্য। যার কোন বিএসটিআই অনুমোদন নেই। নি¤œমানের উপকরণের সঙ্গে ক্ষতিকর কেমিক্যাল ও রঙ মিশিয়ে শহরের বিভিন্ন ফ্যাক্টরীতে তৈরী করা হয় রঙ-বে-রঙের লজেন্সসহ ওইসব পণ্য।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, সৈয়দপুর শহরের পাড়া-মহল্লায় অসংখ্য ছোট বড় লজেন্স, চাটনি, চিপস, সন্দেশ, সিঙ্গারা, ও জুস তৈরীর ফ্যাক্টরী গড়ে উঠেছে। এসব অধিকাংশ ফ্যাক্টরীর বৈধ কোন অনুমোদন নেই। এরা প্রশাসনের চোখকে ফাঁকি দিয়ে ওই ক্ষতিকর পণ্য তৈরী করে থাকে। যা স্থানীয় বাজারসহ পাড়া-মহল্লার দোকানে বাজারজাত করে। কোমলমতি শিশুদের নজর কাড়তে ক্ষতিকর      রঙ মিশিয়ে এক শ্রেণীর অসাধু ব্যবসায়ী ও ফ্যাক্টরী মালিকরা দীর্ঘদিন থেকে ব্যবসা চালিয়ে আসছে। এছাড়াও ময়দা দিয়ে তৈরী নিম্নমানের চিপস, মিষ্টি লাড্ডুসহ শিশু খাদ্যের পণ্য শুধু সৈয়দপুরই নয়, গোটা উত্তর জনপদে এসব পণ্যের রয়েছে বিশাল বাজার। সস্তা দামে এসব পণ্য পাওয়া যাওয়ায় শিশুদের মাঝে এর জনপ্রিয়তা রয়েছে। ফলে ভালো মুনাফার আশায় ব্যবসায়ীরা এসব পণ্য মজুদ ও বিক্রি করে থাকেন। যা শহরের পাইকারী বাজার হয়ে স্থানীয় বাজারসহ উত্তরের বিভিন্ন স্থানে ছড়িয়ে যায়।
ক্ষতিকর এসব লজেন্সসহ অন্যান্য খাদ্য খেলে শিশুদের কি ক্ষতি হতে পারে সে সম্পর্কে শহরের বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক ডা. নজরুল ইসলাম জানান, স্থানীয়ভাবে তৈরী সস্তা দামের মুখরোচক লজেন্স জাতীয় পণ্যে সাধারণ রঙ ব্যবহার করা হয়, যা শরীরের জন্য খুবই ক্ষতিকর। এসব লজেন্স খেলে পেটের পীড়া ও ডায়রিয়াসহ পরিপাকতন্ত্র ক্ষতিগ্রস্থ হয়। এর প্রভাবে ক্যান্সার, কিডনী ও চর্ম রোগের জটিল অসুখে আক্রান্তের সম্ভাবনা অনেক বেশি। ক্ষতিকর উপকরণে তৈরী বিভিন্ন খাদ্য পণ্য খাওয়ায় এখন অল্প বয়সে মানুষের মধ্যে দূরারোগ্য ক্যান্সারের মত রোগের বিস্তার বাড়ছে। আগে এমনটি দেখা যেত না। তিনি খাদ্য পণ্যে ভেজাল রোধে ভেজাল বিরোধী অভিযান আরও জোরদার করার তাগিদ দেন।
খবর৭১/ইঃ

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here