মিজানুর রহমান মিলন, সৈয়দপুর থেকে:
আগামী ৩০ ডিসেম্বর জাতীয় সংসদের একাদশতম নির্বাচন। এ উপলক্ষে সারাদেশের মত সৈয়দপুরসহ আশেপাশের জেলা উপজেলাগুলোতে উৎসবমুখর পরিবেশ বিরাজ করছে। সৈয়দপুরেও নির্বাচনের কারণে রাজনৈতিক দলগুলোর পাশাপাশি প্রেসপাড়ার মালিক কর্মচারীদের মাঝে ব্যস্ততা শুরু হয়েছে। বাড়তি কাজের অর্ডার নিতে প্রিন্টিং সংক্রান্ত সরঞ্জামের সক্ষমতা বৃদ্ধিসহ প্রেসগুলোর যাবতীয় কাজ শেষ করা হয়েছে। কোটি টাকার ব্যবসা করার পরিকল্পনায় প্রস্তুত প্রেস মালিকরা। নির্বাচনকে ঘিরে হাতে সময় বেশি না থাকার কারণে প্রেস মালিকরা নির্বাচনী পোস্টার, স্টিকার, ডিজিটাল ব্যানার, ফেস্টুনসহ অন্যান্য মূদ্রণের জন্য আগামী অর্ডার নেয়া শুরু করেছেন। প্রার্থীদের ঘনিষ্ঠ প্রতিনিধিদের সাথে যোগাযোগ রেখে এসব অর্ডার নিচ্ছেন তারা। প্রতীক বরাদ্দের সাথে সাথে শুরু হবে ছাপার কাজ।
প্রেসগুলোর সূত্র জানায়, গত সংসদ নির্বাচনে প্রধান বিরোধী দল বিএনপিসহ সমমনা অন্যান্য দলগুলো অংশ না নেয়ায় সৈয়দপুরের ছাপাখানা মালিকরা হাত গুটিয়ে বসে থাকে। সে সময় ব্যবসা মন্দা গেলেও এবার ভালো ব্যবসার আশা নিয়ে প্রস্তুতি নেয়া হয়েছে। সূত্রটি জানায়, বছর শেষে ডিসেম্বর মাসে প্রেসগুলোর একটু ব্যস্ততা বেশি থাকে। কারণ এ সময়ে নতুন বছরের ডায়েরী, ক্যালেন্ডার, স্কুলগুলোর ফলাফল শীট, ভর্তি ফরমসহ অন্যান্য কাজের জন্য চাপ থাকে। এবার এর সাথে যুক্ত হয়েছে নির্বাচন। নির্বাচনে অংশগ্রহণকারী দলের চাহিদার কথা মাথায় রেখে ছাপাখানা মালিকরা ইতিমধ্যে বিভিন্ন কোম্পানীর কাগজ, কালি, প্লেট, কেমিক্যালসহ অন্যান্য উপকরণ সংগ্রহ করেছেন। এর আগে প্রিন্টিং মেশিনগুলোতে যাতে কোন সমস্যা না হয় সে জন্য মেশিনের যন্ত্রাংশ পরীক্ষা-নিরীক্ষার মাধ্যমে মেরামত করা হয়েছে।
এদিকে নির্বাচনকে সামনে রেখে দেশের ছোট বড় পেপার মিল ও ঢাকার বড় বড় কাগজ ব্যবসায়ীরা কাগজের দাম বাড়িয়ে দিয়েছে। বিশেষ করে পোস্টার ও লিফলেট মূদ্রণে ব্যবহৃত কাগজের দাম বৃদ্ধি পেয়েছে সর্বাধিক। গত এক মাস আগেও ৫৫ ও ৬৫ গ্রামের কাগজ প্রতি রীম বিক্রি হয়েছে ১২০০ টাকা থেকে ১৪০০ টাকায়। বর্তমানে ৫৫ গ্রাম কাগজ প্রতি রীম ১৫০০ টাকায় এবং ৬৫ গ্রাম কাগজ ১৭৫০ টাকা থেকে ১৮০০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। নির্বাচনকে কেন্দ্র করে বাড়তি মুনাফা লুটতে পেপার মিল কর্তৃপক্ষ ও বড় কাগজ ব্যবসায়ীরা এর সুযোগ নিচ্ছেন বলে মন্তব্য করেন স্থানীয় কাগজ ব্যবসায়ীরা।
সৈয়দপুর প্রেস মালিকরা জানিয়েছেন, নীলফামারী জেলার ৪টি সংসদীয় আসনসহ আশেপাশের জেলার নির্বাচনী আসনের রাজনৈতিক দলগুলোর প্রার্থীদের পক্ষে পোস্টার, লিফলেট অর্ডার আসতে শুরু করেছে। এদের অনেকেই পোস্টারের ডিজাইন সম্পন্ন করে রেখেছেন।
সৈয়দপুরের প্রেস ব্যবসায়ী একতা অফসেট প্রেসের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট রেজাউল করিম রিপন জানান, একজন প্রার্থী ৫০ হাজার থেকে শুরু করে লাখের উপরে পোস্টার-লিফলেট ছাপান। সে হিসেবে তাদের সাথে দর কষাকষির পর অর্ডার নেয়া হচ্ছে। তিনি জানান প্রিন্টিংসহ স্বল্প লাভে অর্ডার নেয়া হচ্ছে। তাই লাভ কম হলেও প্রোডাকশন বেশী হলে পুষিয়ে নেয়া যাবে।
মদিনা প্রিন্টিং প্রেসের মালিক মাহবুব জানান, প্রতীক বরাদ্দের পর পোস্টার লিফলেট ছাপানোর কাজ পুরোদমে শুরু হবে। তিনি বলেন, নির্বাচনের কারণে এবার একটু ব্যবসা ভাল হবে। সৈয়দপুরের মূদ্রণ ব্যবসায়ীরা জানান, সৈয়দপুরসহ গোটা জেলায় ২০টির মতো বৈধ ছাপাখানা রয়েছে। এর বাইরেও রয়েছে অনিবন্ধিত ২০/৩০টি প্রিন্টিং প্রতিষ্ঠান। আর ওইসব প্রেসবিহীন প্রতিষ্ঠানের কারণে প্রতিযোগিতা সম্মুখীন হতে হয়। তারপরেও এবার সব দল নির্বাচনে আসায় ব্যবসা ভালো হবে।