মো. আবু সাইদ, পত্নীতলা (নওগাঁ) প্রতিনিধি: রক্তশুন্যতা, এ্যাকসিডেন্ট, অপারেশন ইত্যাদি কারণে মানুষের রক্তের প্রয়োজন হয়। মফস্বল শহরে রক্ত সংগহ করা খুব কঠিন কাজ। সহজে কোন মানুষ নিজ শরীরের রক্ত অন্যকে দিতে চায় না। আবার সমস্যা হলো অপরিচিত মানুষের কাছ থেকে রক্ত নিতে গেলে এক ধরণের ঝুঁকি রয়ে যায়। রক্তদান এমন একটি জটিল প্রক্রিয়া যে, গ্রুপ না মিললে ঘনিষ্ঠজনও রক্ত দিতে পারে না। এ কারণে রক্তের প্রয়োজন হলে মানুষকে বিশেষ করে মফস্বল শহরের মানুষকে চরম ভোগান্তির মধ্যে পড়তে হয়।
রক্ত সংগ্রহের এই সমস্যাকে উপলদ্ধি করে নওগাঁর পত্নীতলা উপজেলার বিশিষ্ট ব্যবসায়ী ও নজিপুর বাসষ্ট্যান্ড বণিক কমিটির সাধারণ সম্পাদক গড়ে তুলেছেন ব্লাড ডোনেশন গ্রুপ। এই ব্লাড ডোনেশন গ্রুপের অন্যতম বৈশিষ্ট্য হলো চাহিদার প্রেক্ষিতে বিনে পয়সায় রক্ত সরবরাহের জন্য ডোনারের ব্যবস্থা করা। রক্ত ডোনেট করার জন্য পত্নীতলা ছাড়াও নওগাঁ, জয়পুরহাট, রাজশাহীসহ বিভিন্ন স্থানে রয়েছে ব্লাড ডোনেশান গ্রুপের তালিকাভুক্ত ডোনার। রক্ত গ্রহণের জন্য কেউ অবগত করলেই ব্লাড ডোনার গ্রুপের তালিকাভুক্ত সদস্যরা নিজ উদ্যোগে চাহিদা অনুযায়ী রক্ত প্রদানের ব্যবস্থা করে থাকে। প্রয়োজনে রক্ত প্রদানের জন্য তারা নিজ খরচে বিভিন্ন স্থানে গিয়ে থাকে। বর্তমান প্রেক্ষাপটে টাকার বিনিময়ে যেখানে মানসম্মত রক্ত পাওয়া দুষ্কর সেখানে পত্নীতলা ব্লাড ডোনার গ্রুপের প্রতিষ্ঠাতা মিজানের এই উদ্যোগ এলাকায় বেশ সাড়া জাগিয়েছে। এলাকার বিভিন্ন স্থান থেকে মানুষ ছুটে আসছে বিনে পয়সার ব্লাড নিয়ে জীবণ বাঁচাতে।
এ বিষয়ে ব্লাড ব্যাংক থেকে রক্ত গ্রহণকারী পতœীতলা উপজেলার বড়মহনন্দি গ্রামের বুলবুলি জানান, তাঁর নিজের জন্য রক্তের প্রয়োজন হলে তিনি উদ্যোক্তা মিজানের শরণাপন্ন হন। মিজান ভাই রক্তের ব্যবস্থা করে দিলে তিনি সুস্থ হয়ে ওঠেন। এজন্য তাঁকে কোন খরচ করতে হয়নি। এর পর থেকে তিনি নিজেও ব্লাড ডোনার হিসাবে নাম লিখান এবং রক্ত প্রদান করে থাকেন। মহাদেবপুর উপজেলার কালুশহর গ্রামের আমজাদ হোসেন জানান, তিনি নিয়মিত ব্লাড ডোনেশন গ্রুপে রক্ত প্রদান করে আসছেন।
এ বিষয়ে ব্লাড ডোনেশন গ্রুপের তরুণ উদ্যোক্তা এ, জেড মিজান জানান, ২০১৩ সালে আমি প্রথম বারের মতো একজন মুমুর্ষু রোগীকে রক্তদান করি। রক্ত পাওয়ার ফলে বেঁচে যায় পরিবারের উপার্জনক্ষম একমাত্র মানুষটি। বিষয়টি আমাকে ব্যাপকভাবে নাড়া দেয় এবং একাজে তৃপ্তি লাভ করি। এরপর থেকেই মানুষের জন্য রক্ত সরবরাহ করার চিন্তা আমার মাথায় আসে। প্রাথমিক অবস্থায় কয়েকজন বন্ধু ও নিকট আতœীয়কে নিয়ে তালিকা তৈরী করে ব্লাড ডোনেশন গ্রুপ তৈরী করি। বর্তমানে ব্লাড ডোনানের সংখ্যা প্রায় ৪শতাধিক। এখন যাদের রক্ত সরবরাহ করা হচ্ছে পরবর্তিতে তাঁরাও ব্লাড ডোনার হিসাবে তালিকায় নিজের নাম লিখাচ্ছে। এভাবেই দিন দিন ব্লাড ড্রোনার গ্রুপের সদস্য সংখ্যা বাড়ছে। কোন ব্যক্তি রক্ত নেওয়ার জন্য আসলে আমরা লিস্ট অনুযায়ী ডোনারকে কল করলে তিনি এসে রক্ত দিয়ে যান। প্রয়োজনে নিজ খরচে আমরা রক্ত দাতাদের নওগাঁ ও রাজশাহীতেও পাঠিয়ে থাকি। ব্লাড ডোনেশন গ্রুপের অস্থায়ী অফিস নজিপুর বাসষ্ট্যান্ড হতে প্রতিদিন ৫/৬ জনকে রক্ত সরবরাহ করা হচ্ছে। স্থানীয় ভাবে সহযোগিতা পেলে ভবিষৎতে ব্লাড ডোনেশন গ্রুপের কলেবর বৃদ্ধি করা হবে বলেও তিনি জানান।
এ বিষয়ে পত্নীতলা উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা অফিসার ডাঃ উম্মে হানীর সাথে কথা বললে তিনি জানান, ভাই যে উদ্যোগ নিয়েছে তা সত্যিই প্রশংসিত। আমাদের দ্বারা যে কাজটি সম্ভব হচ্ছে না সে কাজটি খুব সহজেই করে মানুষের জীবণ বাঁচাচ্ছে ব্লাড ডোনেশন গ্রুপ। আমাদের হাসপাতালের কোন রোগীর রক্ত দরকার হলে আমরা ব্লাড ডোনেশন গ্রুপে পাঠিয়ে দিই। ব্লাড ডোনেশান গ্রুপের কার্যক্রম এগিয়ে নেওয়ার জন্য তিনি সার্বিক সহায়তার আশ^াস দেন।
খবর৭১/ইঃ