নওগাঁর মান্দায় এসিল্যান্ড হাবিবুল হাসানের উদ্যোগে পাল্টে গেছে ভূমি অফিসের চিত্র!

0
519

সুলতান আহমেদ, নওগাঁ প্রতিনিধি: নওগাঁর মান্দায় সহকারী কমিশনার (ভূমি) ও নির্বাহী ম্যাজিষ্ট্রেট এস এম হাবিবুল হাসানের ব্যাতিক্রমী উদ্যোগে পাল্টে গেছে উপজেলা ভূমি অফিসের চিত্র। ভূমি অফিস মানেই দুর্নীতির আখড়া এবং দালালদের অভয়ারণ্য এমনি ধারনা প্রতিটি মানুষের। ঘুষ ছাড়া এই অফিসের কোনো ফাইল নড়া-চড়া করে না, অধিকাংশ ভূক্তভুগী লোকের এমনই বক্তব্য । মান্দার এসিল্যান্ড এই নীতিতে বিশ্বাসী নয়। সহকারী কমিশনার (ভূমি) ও নির্বাহী ম্যাজিষ্ট্রেট এস এম হাবিবুল হাসান নওগাঁর মান্দা উপজেলা ভূমি অফিসে সম্প্রতি  যোগদান করার পর হতেই ভূমি অফিস ঢেলে সাজানোর ব্যতিক্রমী উদ্যোগ গ্রহন করেন। এর অংশ হিসেবে বিভিন্ন উদ্ভাবনী এবং উন্নয়নমূলক কার্যক্রম হাতে নেন তিনি। এসব কার্যক্রম চালুর ফলে বদলে গেছে ভূমি অফিসের চিত্র। জনহিতকর এবং উদ্ভাবনী কর্যক্রম চালু করার ফলে সেবা গ্রহীতাদের ভোগান্তি কমেছে, সাধারন মানুষ কোন প্রকার হয়রানি ছড়াই কাংখিত  সেবা পাচ্ছেন।

জানাগেছে, মান্দার ভূমি অফিসে যোগদানের পর হতেই তিনি নান্দনিক ও জনবান্ধব ভূমি অফিস গঠনের লক্ষ্যে বিভিন্ন কার্যক্রম চালু করেন। মান্দা উপজেলা ভূমি অফিসে প্রবেশ করলে প্রথমেই চোখে পড়বে নানা প্রজাতির দেশী-বিদেশী ফুলের গাছ সমৃদ্ধ এবং বিষমুক্ত সবজি বাগান। রয়েছে উপজেলার বিভিন্ন গ্রাম-গঞ্জ থেকে আসা সেবা প্রত্যাশীদের জন্য সুসজ্জিত বসার স্থান ‘পূন্যাহ’ । পাশেই রয়েছে সুপেয় পানির ফিল্টার।

এসিল্যান্ড এর উদ্ভাবনী চিন্তায় মিউটেশন/নামজারি বা খারিজের আবেদন করার ক্ষেত্রে ডিজিটাল পদ্ধতিতে অনলাইন সিস্টেম চালু করা হয়েছে। এখন নওগাঁ জেলার একমাত্র উপজেলা হিসেবে মান্দাতে শতভাগ ই-মিউটেশন কার্যক্রম চালু হয়েছে। এতে করে ভূমি দস্যুদের দৌরাত্ন্য থেকে সাধারন মানুষদেরকে সচেতন করতে সক্ষম হয়েছে মান্দা উপজেলা ভূমি প্রশাসন। আর এ অভিনব- ব্যাতিক্রমী উদ্যোগকে সাধুবাদ জানিয়ে ভূমি মন্ত্রণালয় ও সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে এই উপজেলাকে মডেল হিসাবে নেয়ার দাবি জানিয়েছে মান্দার সচেতন মহল। দ্রুততম সময়ের মধ্যে নামজারী, ভূমি উন্নয়ন কর আদায়, ভূমি বিষয়ক জনসচেতনতা বৃদ্ধি, স্বেচ্ছা ও জবাবদিহিতা মূলক ভূমি প্রশাসন গড়তে এসিল্যান্ডের নি:সন্দেহে এটি একটি মহৎ উদ্যোগ।

নওগাঁর মান্দায় এসিল্যান্ডের উদ্ভাবনী এবং ব্যাতিক্রমী এসব উদ্যোগে পাল্টে গেছে ভূমি অফিস। বিশেষ করে মান্দা উপজেলা ভূমি অফিস ছিলো অনেকদিন যাবত বেনামী। সাধারন মানুষদের বোঝার মতো কোন উপায়  ছিল না যে এটি কোন অফিস। তিনি যোগদানের পর অফিসটি যাতে সাধারন মানুষ সহজে চিনতে পারেন সেজন্য অফিসের নামকরন লিপিবদ্ধ করা হয়েছে এবং ওই অফিসের অধীনে কর্মরত সকল কর্মকর্তা- কর্মচারীদের পরিচিতি কার্ড তৈরী করে দেয়া হয়েছে। যাতে করে সাধারন মানুষ সেবা নিতে এসে বিভ্রান্তি বা প্রতারণার স্বীকার না হয়। এছাড়াও জনগণকে ভূমি উন্নয়ন কর প্রদানে উৎসাহিত করতে এসব বিশেষ উদ্যোগ গ্রহন করা হয়েছে।

তিনি আরো জানান, ইতোমধ্যে মান্দা উপজেলা ভূমি অফিসের উদ্যোগে আত্রাই নদীর বালুমহালের ম্যাপিং, জলমহাল, খাস জমি, ভিপি সম্পত্তির ছবি সহ ডাটাবেইজ তৈরী করা হয়েছে। ফলে মুহুর্তের মধ্যেই সেবা গ্রহীতাদের জানিয়ে দেয়া সম্ভব হয় এ সকল তথ্য। ভূমি দস্যুদের থেকে খাস জমি রক্ষায় গঠন করা হয়েছে বিশেষ টাস্কফোর্স। তিনি যোগদানের পর মিঠাপুর, চকবালু এবং বড়বেলালদহ মৌজার প্রায় ৯ একর বেদখলকৃত সরকারি সম্পত্তি পুনরুদ্ধার করেন। বিশেষ করে মান্দা উপজেলায় খাস পুকুরগুলো মান্দাবাসীর জন্য আশির্বাদ। আবার কখনো বা ওই সকল খাস পুকুরগুলোই অভিশাপ। এর কারন হচ্ছে সচেতনতা এবং ভূমি আইন সম্পর্কে জ্ঞানের অভাব। তাই তিনি ছবিসহ ডাটাবেজ তৈরী করে এর সমাধান করেছেন। জন হয়রানি লাঘবে সপ্তাহে প্রতি বুধবার একদিন গণশুনানির আয়োজন করা হয়। এখানে সেবা নিতে আসা জনগনের ভূমি বিষয়ক সমস্যা শুনে সমাধান কিংবা পরামর্শ দেয়া হয়।

শুনানিতে আসা মহাদেবপুর উপজেলার গোপালকৃষ্ণপুর গ্রামের মৃত আকবর আলী মন্ডলের ছেলে সাংবাদিক ও সার্ভেয়ার মাহবুবুজ্জামান সেতু জানান, জমির নামজারী করতে এসেছেন তিনি, মাত্র ১৫ দিনেই তার নামজারী অনুমোদন হয়েছে কোন ঝামেলা ছাড়াই। ভূমি অফিসের পরিবেশ দালালমুক্ত বলেও জানান তিনি। যে কোন পরামর্শ ও অভিযোগ জানানোর জন্য স্থাপন করা হয়েছে অভিযোগ বক্স।

আর এসব অভিযোগ পড়ার সাথে সাথে ওই নাগরিকের সমস্যার সন্তোষজনক সেবা প্রদান করে ভূমি অফিস।  ফেসবুক পেজ থেকে নাগরিকদের সাথে সরাসরি যুক্ত থাকেন এসিল্যান্ড হাবিবুল হাসান। কেউ দালাল কিংবা অফিসের কোন কর্মকর্তা, কর্মচারীর হয়রানির শিকার  হলে ওই ফেসবুক পেজে অভিযোগ জানালে তিনি অভিযুক্তের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহন করেন।

এ ব্যাপারে সহকারী কমিশনার (ভূমি) ও নির্বাহী ম্যাজিষ্ট্রেট এস এম হাবিবুল হাসান জানান, ভূমি অফিস সম্পর্কে সকলের যে নেতিবাচক ধারনা রয়েছে তা পাল্টে দেবার চেষ্টা করে যাচ্ছেন তিনি।

আর তাঁর এই প্রচেষ্টায় আন্তরিকভাবে সহযোগীতা করছেন উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মুশফিকুর রহমান ও জেলা প্রশাসক মো. মিজানুর রহমান।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here