খবর ৭১:সংবিধান প্রণেতা, গণফোরাম সভাপতি ড. কামাল হোসেন ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন বাতিলের দাবি জানিয়ে বলেছেন, জনমত উপেক্ষা করে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন পাস করা হয়েছে। পাস করা আইন আবার ফেল করানো যায়। ঐক্যবদ্ধভাবে আমরা এই আইন ফেল করাবোই। এই আইন বাতিল না করলে যারা এই আইন পাস করেছে তাদেরকেও ফেল করানো হবে। তিনি বলেন, কন্ঠরোধ গণতন্ত্র নয়, ফ্যাসিজম।
বুধবার জাতীয় প্রেস কাবে বরেণ্য সাংবাদিক আতাউস সামাদের ৬ষ্ঠ মৃত্যুবার্ষিকীর আলোচনা সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব বলেন। আতাউস সামাদ স্মৃতি পরিষদ এই আলোচনা সভার আয়োজন করে। অনুষ্ঠানে ড. কামাল হোসেন আরো বলেন, অনৈতিক, অসাংবিধানিক এই আইন কীভাবে পাস করেছে আমি বুঝতে পারছি না। বাংলাদেশকে একটি গণতন্ত্র ও কল্যাণকর রাষ্ট্রে পরিণত করতে হবে। কথা বলা ও বাক্ স্বাধীনতার অধিকার ফিরে আনতে জাতীয় ঐক্যের কোনো বিকল্প নেই। বাক্ স্বাধীনতার কথা সংবিধানের মধ্যেই বলা আছে। তিনি বলেন, লাখো শহিদের রক্তে অর্জিত সংবিধান কোনো রকম বেঁচে আছে। তার কথাগুলো পালন হচ্ছে না। রাস্তায় না নামলে যারা ক্ষমতায় আছেন তারা যা ইচ্ছা তা করে পার পেয়ে যাবেন। যা ইচ্ছে তা করে আর পার পাওয়া যাবে না। বৃহৎ জাতীয় ঐক্য দরকার। কোনো ব্যক্তি বা গোষ্ঠীর স্বার্থ রক্ষার জন্য নয়, সংবিধান ও মৌলিক অধিকার রক্ষার জন্য জাতীয় ঐক্য করতে বলছি। তিনি অভিযোগ করে বলেন, আওয়ামী লীগের নাম উল্লেখ না করে বলেন, তারা মুক্তিযোদ্ধের চেতনার কথা বলে মুখে ফেনা তুলছে, কিন্তু কাজ করছে তার উল্টো। বিশিষ্ট এই আইনজীবী বলেন, দর্জির দোকানে কালো কোর্ট বানানোর হিড়িক পরছে। যারা বঙ্গবন্ধুর কোর্ট পরে মানবাধিকার লংঘন করছেন তারা বঙ্গবন্ধুকে অসম্মান করছেন। ড. কামাল হোসেন বলেন, শাসন ব্যবস্থার মধ্যে কিছু লোক ঢুকে গেছে। তারা মানবাধিকার ও আইনের শাসনের বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়ে বঙ্গবন্ধুকে অসম্মান করছে। পুলিশের সঙ্গে সাদা পোশাক পড়ে লাঠি হাতে এরা কারা? জানতে চাই। সাংবাদিকরা আজ অনেক তথ্য জানেন, কিন্তু লিখতে পারছেন না। সংবাদপত্রের স্বাধীনতা শহীদের স্বপ্ন। সংবাদপত্রের স্বাধীনতা অবশ্যই থাকতে হবে। তিনি নিজকে আশাবাদী ব্যক্তি ব্যক্ত করে বলেন, অপমানিত হচ্ছি। কিন্তু স্বপ্ন এখনও দেখছি। স্বাধীনতার স্বপ্নকে বাস্তবায়ন করতে প্রয়োজনে জীবন দিতে হবে বলে তিনি মন্তব্য করেন। ড. কামাল হোসেন বলেন, আতাউস সামাদ সংবাদপত্রে যেভাবে সাহসিকতার সঙ্গে নেতৃত্ব দিয়ে গেছেন, তা স্মরণ করে এগিয়ে যেতে হবে।
গণস্বাস্থ্য কেন্দ্রের প্রতিষ্ঠাতা ও ট্রাস্টি ডা. জাফর উল্লাহ চৌধুরী বলেন, ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের চেয়ে খারাপ আইন আর হতে পারে না। কথা বলতে না পারলে গণতন্ত্র থাকবে না। তিনি বলেন, সাংবাদিকরা সমাজের সঠিক চিত্র তুলে ধরেন। কিন্তু এই আইনে তা বন্ধ হয়ে যাবে। সাংবাদিক আতাউস সামাদ সাহসিকতার সঙ্গে সাংবাদিকতা করেছেন। তারা সাহসিকতা না নিতে পারলে আমাদের জন্য অশনি বয়ে আসবে। গণতন্ত্রের জন্য আমাদের সবাইকে সোচ্চার হওয়ার আহবান জানান তিনি।
জাতীয় প্রেস কাবের সাবেক সভাপতি রিয়াজ উদ্দিন আহমেদ বলেন, আতাউস সামাদ নিষ্ঠার সঙ্গে কাজ করতেন। মুক্ত সাংবাদিকতার জন্য কাজ করে গেছেন তিনি। স্বৈরাচারের বিরুদ্ধে লড়েছেন। ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন প্রসঙ্গে সিনিয়র এই সাংবাদিক বলেন, এই আইনে সাংবাদিকতা করা একেবারেই অসম্ভব। অফিস সেক্রেসি আইন চাপিয়ে দেয়া হয়েছে।
আতাউস সামাদ স্মৃতি পরিষদের প্রধান উপদেষ্টা এবং জাতীয় প্রেস কাবের সাবেক সভাপতি শওকত মাহমুদ সভাপতির বক্তব্যে বলেন, আতাউস সামাদকে শিক্ষক হিসেবে পেয়েছি। সহকর্মী হিসেবে পেয়েছি তাকে। গণতান্ত্রিক দেশে হিসেবে বাংলাদেশ গড়ে উঠুক, আতাউস সামাদ এটা চেয়েছিলেন। তার চিন্তা-চেতনা সাংবাদিকতায় প্রভাব পড়েছে। ফ্যাসিবাদের পতন হোক তিনি এটা চেয়েছেন। বাংলাদেশের মানুষ তাদের সব অধিকার ফিরে পাবেন, এটা তার চাওয়া ছিল। আমাদের আলোর দেখা পেতে হবে বলে মন্তব্য করেন সাংবাদিকদের এই নেতা।
অনুষ্ঠানে আরো বক্তব্যে রাখেন বাংলাদেশ ফেডারেল সাংবাদিক ইউনিয়নের সভাপতি রুহুল আমিন গাজী, সাফমার সাধারণ সম্পাদক জাহিদুজ্জামান ফারুক, জাতীয় প্রেস কাবের সাবেক সাধারণ সম্পাদক সৈয়দ আবদাল আহমেদ, ঢাকা সাংবাদিক ইউনিয়নের সভাপতি কাদের গণি চৌধুরী, জাতীয় প্রেস কাবের যুগ্ম সম্পাদক ইলিয়াস খান, ঢাকা সাংবাদিক ইউনিয়নের সাধারণ সম্পাদক শহিদুল ইসলাম, সিনিয়র সাংবাদিক পারভিন সুলতানা ঝমা প্রমুখ। অনুষ্ঠানটি সঞ্চালনা করেন কবি হাসান হাফিজ।