আজ ২৬ আগষ্ট মাদার তেরেসা ১০৮তম জন্মদিন

0
413

খবর৭১:মাদার তেরেসা, যাঁর আসল নাম আনিয়েজ গঞ্জে বয়াজিউ। মানুষের হাসিই ছিলো তার আনন্দ, মানুষের কল্যাণই ছিলো তার ব্রত। তাকে বিশ্বশান্তির পায়রা বলে অভিহিত করা হতো। শতাব্দীর শ্রেষ্ঠ মহিয়সী নারী, দু:স্থ, দরিদ্র, অসহায়, অবহেলিত মানুষের ত্রাণকর্ত্রীর আজ ১০৮তম জন্মদিন। জন্মদিনে বিশ্ব মানবতার এই দূতকে স্মরণ করছি গভীর শ্রদ্ধায়।

মহিয়সী এই নারী ১৯১০ সালের ২৬ আগস্ট পৃথিবীর আলো দেখেন। তিনি একজন আলবেনীয়-বংশোদ্ভুত ভারতীয় ক্যাথলিক সন্ন্যাসিনী। তিনি ছিলেন নিকোলো ও দ্রানা বয়াজুর কনিষ্ঠ সন্তান। মাত্র ৮ বছর বয়সে বাবা হারান তিনি।

পিতার মৃত্যুর পর তার মা তাকে রোমান ক্যাথলিক আদর্শে লালন-পালন করেন। জোয়ান গ্র্যাফ ক্লুকাস রচিত জীবনী থেকে জানা যায়, ছোট্ট অ্যাগনেস মিশনারিদের জীবন ও কাজকর্মের গল্প শুনতে খুব ভালোবাসতেন তিনি।

১২ বছর বয়সেই তিনি ধর্মীয় জীবনযাপনের সিদ্ধান্ত নিয়ে ফেলেন। ১৮ বছর বয়সে তিনি গৃহত্যাগ করে একজন মিশনারি হিসেবে যোগ দেন সিস্টার্স অব লোরেটো সংস্থায়। এরপর তার মা আর দিদিদের সঙ্গে আর তার কোনো দিন দেখা হয়নি।
অ্যাগনেস প্রথমে আয়ারল্যান্ডের রথফার্নহ্যামে লোরেটো অ্যাবেতে ইংরেজি ভাষা শিখতে যান। কারণ এই ভাষাই ছিল ভারতে সিস্টার্স অব লোরেটোর শিক্ষার মাধ্যম। ১৯২৯ সালে ভারতে এসে দার্জিলিংয়ে নবদীক্ষিত হিসেবে কাজ শুরু করেন এবং ১৯৩১ সালের ২৪ মে তিনি সন্ন্যাসিনী হিসেবে প্রথম শপথ গ্রহণ করেন। স্কুলে পড়াতে তার ভালো লাগলেও কলকাতার দারিদ্র্যে তিনি উত্তরোত্তর উদ্বিগ্ন হয়ে উঠতে লাগলেন। ১৯৪৮ সালে এই মোতাবেক দরিদ্রদের মাঝে মিশনারি কাজ শুরু করেন। প্রথাগত লোরেটো অভ্যাস ত্যাগ করেন। পোশাক হিসেবে পরিধান করেন নীল পারের একটি সাধারণ সাদা সুতির বস্ত্র। এ সময়ই ভারতীয় নাগরিকত্ব গ্রহণ করে বস্তি এলাকায় কাজ শুরু করেন।

১৯৫০ সালে কলকাতায় তিনি মিশনারিজ অফ চ্যারিটি নামে একটি সেবাপ্রতিষ্ঠান প্রতিষ্ঠা করেন। তার কার্যক্রম অচিরেই ভারতীয় কর্মকর্তাদের নজরে আসে। স্বয়ং প্রধানমন্ত্রীও তার কাজের স্বীকৃতি দিয়েছিলেন। তিনি কলকাতার স্বর্গীয় টেরিজা (Blessed Teresa of Calcutta) নামে পরিচিত হন।

১৯৭০-এর দশকের মধ্যেই সমাজসেবী এবং অনাথ ও দুস্থজনের বন্ধু হিসেবে তার খ্যাতি সারা বিশ্বে ছড়িয়ে পড়ে। সুদীর্ঘ ৪৫ বছর তিনি দরিদ্র, অসুস্থ, অনাথ ও মৃত্যুপথযাত্রী মানুষের সেবা করেছেন। প্রথমে ভারতে ও পরে সমগ্র বিশ্বে তাঁর এই মিশনারি কার্যক্রম ছড়িয়ে পড়ে। ম্যালকম ম্যাগাজিনের বই ও প্রামাণ্য তথ্যচিত্র ‘সামথিং বিউটিফুল ফর গড’ তার সেবাকার্যের প্রচারের ক্ষেত্রে একটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছিল।

১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধের সময তিনি দাঁড়িয়ে ছিলেন বাংলাদেশের মানুষের পাশে। একাত্তরের ডিসেম্বরে মাদার তেরেসা খুলনা ও ঢাকার কয়েকটি ক্যাম্প পরিদর্শনের সময় পাকসেনারা পশুর মতো তান্ডব চালিয়েছে তা দেখেন। এসব ক্যাম্পে পাকসেনারা দিনের পর দিন বাংলাদেশী নারীদের ওপর অত্যাচার করে আসছিল।

এসব দেখে ঢাকায় তিনি খোলেন ‘মিশনারিজ অফ চ্যারিটিজ’-এর একটি শাখা। তখন বেশির ভাগ যুদ্ধশিশুকে দেখা হতো ঘৃণার চোখে, তাদের ফেলে দেওয়া হতো ডাস্টবিনে। মাদার তেরেসা ওই সময় পরম মমতায় যুদ্ধ শিশুদের কোলে নিতে থাকেন। তাদের পাঠিয়ে দেন কলকাতা, ফ্রান্স ও সুইডেনে।

১৯৭৯ সালের ১৭ অক্টোবর তিনি তার সেবাকার্যের জন্য নোবেল শান্তি পুরস্কার ও ১৯৮০ সালে ভারতের সর্বোচ্চ বেসামরিক সম্মান ‘ভারতরত্ন’ লাভ করেন। তিনি বিশ্বের ১২৩টি রাষ্ট্রে এইচআইভি/এইডস, কুষ্ঠ ও যক্ষ্মার চিকিৎসাকেন্দ্র, ভোজনশালা, শিশু ও পরিবার পরামর্শ কেন্দ্র, অনাথ আশ্রম এবং বিদ্যালয়সহ মিশনারিজ অব চ্যারিটির ৬১০টি কেন্দ্র নির্মাণে অবদান রেখেছেন। বিভিন্ন ব্যক্তি, সংস্থা ও একাধিক রাষ্ট্রের সরকার তার কাজের ভূয়সী প্রশংসা করে।
খবর৭১/জি:

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here