বেস মেক-আপের খুঁটিনাটি

0
462

খবর৭১ঃ ফাউন্ডেশন, কমপ্যাক্ট সবই নিজের জায়গায় ছিল। সঙ্গে মানানসই আইশ্যাডো, লিপস্টিক, ব্লাশার কিন্তু তাও কিছুক্ষণের মধ্যেই সাজ ঘেঁটে ঘ! বেসের দিকে নজর না দিলে, পরিণতি তো এরকমই হবে। জেনে নিন বেস মেক-আপ করার টিপস।

বাড়ি থেকে বেরনোর সময় সব ঠিকই ছিল, সবকিছুই নিপুণ হাতে করেছিলেন, অথচ রাস্তায় বেরতেই কিছুক্ষণের মধ্যে সব মিলে মিশে একাকার। সত্যিই তো, ভিত মজবুত না হলে গঠন কীভাবে ঠিকঠাক হবে? মেক-আপ করার ক্ষেত্রে বেস যদি সঠিক না হয়, তাহলে কোনও মেক-আপই খোলতাই হবে না। থাকবেও না বেশিক্ষণ। অতএব, বেস মেক-আপেই লুকিয়ে আছে মেক-আপ টেকসই করার আসল উপায়। কীভাবে কী করবেন তা তো জানাবই, তবে তার আগে বেক মেক-আপের জন্য ব্যবহৃত জিনিসগুলোর ব্যাপারে একবার নজর বুলিয়ে নিই। বেক মেক-আপের মূল সামগ্রীগুলো হল ময়েশ্চারাইজ়ার, প্রাইমার, ফাউন্ডেশন, কনসিলার, কমপ্যাক্ট এবং অতি অবশ্যই এগুলো অ্যাপ্লাই করার জন্য সঠিক ব্রাশ বা স্পঞ্জ। দোকান থেকে এগুলো কেনার ক্ষেত্রে বিশেষ লক্ষ্য রাখবেন। বিজ্ঞাপন দেখে, অথবা কাউকে ব্যবহার করতে দেখেই কিনে ফেলবেন না। সব ত্বকে একই ধরনের প্রোডাক্ট কিন্তু কাজে দেবে না। বেস মেক-আপের সামগ্রী কেনার আগে ভালভাবে জেনে নিন আপনার জন্য উপযোগী কোনগুলো।

ময়েশ্চারাইজ়ার: বেস মেক-আপ নিখুত করতে হলে চাই ভাল স্কিন। ময়েশ্চারাইজ়ার ব্যবহার করলে একদিকে যেমন ত্বক এবং মেক-আপের মাঝে একটা ব্যবধান তৈরি হয়, ফলে মেক-আপ ত্বকের তেমন ক্ষতি করতে পারে না। আবার অন্যদিকে ফাউন্ডেশন যাতে ভালভাবে ত্বকের সঙ্গে মিশে যায়, তাতেও সাহায্য করে। তাই নিজের ত্বকের ধরন অনুযায়ী ওয়াটার বেসড অথবা ক্রিম বেসড ময়েশ্চারাইজ়ার অবশ্যই ব্যবহার করুন।

প্রাইমার: কয়েক বছর আগেও এর এতটা প্রচলন ছিল না। কিন্তু আজকাল বাজার ছেয়ে গেছে প্রাইমারে। অনেকেই হয়তো জানেন, কিন্তু যাঁরা জানেন না, তাঁরা নাম শুনেই বুঝতে পারছেন এর কাজ। দেওয়ালে রঙ টেকসই করার জন্য যেমন প্রাইমার ব্যবহার করা হয়, তেমনি ত্বকে ফাউন্ডেশন যাতে ভালভাবে বসে এবং যাতে অনেকক্ষণ থাকে, তার জন্য ব্যবহৃত হয় প্রাইমার। ক্রিম বা জেল মূলত এই দুধরনেরই প্রাইমার হয়। চোখ, মুখ এবং ঠোঁটের জন্য আলাদা আলাদা প্রাইমার পাওয়া যায়। যাঁদের ত্বক তৈলাক্ত তাঁরা জেল বেসড প্রাইমার ব্যবহার করুন কারণ এগুলো ম্যাট ফিনিশ দেয়। আর শুষ্ক ত্বকের জন্য ক্রিম ফিনিশ প্রাইমার। যাঁদের ত্বক মিশ্র প্রকৃতির, তাঁরা তৈলাক্ত অংশে জেল এবং শুষ্ক অংশে ক্রিম প্রাইমার লাগান।

ফাউন্ডেশন: এখন বাজারে নানা ধরনের ফাউন্ডেশন পাওয়া যায়ক্রিম, লিক্যুইড, মুজ়, কেক, স্টিক। ত্বক শুষ্ক হলে আদর্শ হল ক্রিম ফাউন্ডেশন। স্বাভাবিক ত্বকে মোটামুটি সব ধরনের ফাউন্ডেশন ব্যবহার করা যায়। ত্বক তৈলাক্ত হলে ব্যবহার করুন স্টিক, মুজ় বা কেক ফাউন্ডেশন। এধরনের ফাউন্ডেশন পাউডার ফিনিশ দেয়। ফলে ত্বক তেলতেলে দেখাবে না। তবে কভারেজের কথা ভাবলে কিন্তু লিক্যুইড এবং ক্রিম ফাউন্ডেশনই উপযুক্ত। ফাউন্ডেশন কেনার ক্ষেত্রে কিন্তু সঠিক শেড বাছা খুবই দরকার। শেড বাছার জন্য কখনোই হাতে ফাউন্ডেশন লাগাবেন না। বরং চোয়ালের কাছে লাগান। আপনার স্কিন টোনের সবথেকে কাছাকাছি কিংবা সামান্য উজ্জ্বল শেড বেছে নিন। যদি দুটো শেডের মধ্যে বাছতে অসুবিধা হয়, সেক্ষেত্রে যেটি হাল্কা রঙের সেটি বাছুন। মানানসই শেড না পেলে দু’রঙের ফাউন্ডেশন মিশিয়েও নিজের শেড পেতে পারেন। যাঁরা নিয়মিত মেক-আপ করতে অভ্যস্ত, তাঁরা সবসময় ফাউন্ডেশন ব্যবহার না করে বি বি ক্রিম বা সি সি ক্রিমও ব্যবহার করতে পারেন। এগুলো আর কিছুই না, এক ধরনের ময়েশ্চারাইজ়ার যা ফাউন্ডেশনের মতো কিছুটা কভারেজও দিয়ে থাকে। এই ক্রিমগুলোও আজকাল বিভিন্ন শেডে পাওয়া যায় এবং প্রতিদিন ব্যবহারের জন্য বেশ ভাল।

কনসিলার: একেবারে নিঁখুত মুখ কি কারোর হয়! বোধ হয় না। কিন্তু, মেক-আপ দিয়ে তা ঢাকা তো যায়! আর এখানেই ব্যবহার হয় কনসিলার। স্টিক, ক্রিম এবং লিক্যুইডতিন ধরনেরই কনসিলার হয়। ত্বকের ধরন বুঝে বেছে নিন। এক্ষেত্রেও কিন্তু শেড একটা বড় ফ্যাক্টর। ফাউন্ডেশনের শেডের সঙ্গে মানানসই অথবা এক টোন হাল্কা কনসিলার বেছে নিন। যাঁদের গুরুতর অ্যাকনে, ডার্ক সার্কল, পাফি আইজ় বা আই ব্যাগের সমস্যা আছে তাঁদের ক্ষেত্রে শুধু কনসিলারে কাজ নাও হতে পারে। এক্ষেত্রে ব্যবহার করুন কারেক্টর। বিভিন্ন রঙের কারেক্টর পাওয়া যায় আজকাল। অ্যাকনের লালচে ভাব ঢাকতে সবুজ কারেক্টর ব্যবহার করুন। মুখের পাশে যদি কালো ছোপ থাকে সেক্ষেত্রে ব্যবহার করুন লাইল্যাক কারেক্টর এবং ডার্ক সার্কেলের জন্য পিচ বা অরেঞ্জ কারেক্টর।

কমপ্যাক্ট: কমপ্যাক্ট, প্রেসড পাউডার বা লুজ় পাউডার যে কোনও একটা ব্যবহার করতে পারেন। এরও সঠিক শেড বাছা দরকার। খুব হাল্কা রঙের পাউডার ব্যবহার করলে দেখতে মোটেও ভাল লাগবে না।

মেক-আপ ব্রাশ এবং স্পঞ্জ: সবকিছু তো ঠিকঠাক কেনা হল। কিন্তু লাগাবেন কীভাবে? হাত দিয়ে লাগানো গেলেও তা অনেক ক্ষেত্রেই ত্বকের সঙ্গে ভালভাবে মেশে না। বেস মেক-আপের জন্য বিভিন্ন ধরনের ব্রাশ এবং স্পঞ্জ পাওয়া যায়। ফাউন্ডেশনের জন্য ফ্ল্যাট ব্রাশ, স্টিপলিং ব্রাশ কিংবা বাফিং ব্রাশ আদর্শ। কনসিলারের জন্যও আলাদা সরু ব্রাশ পাওয়া যায়। তবে ফাউন্ডেশন ব্রাশও ব্যবহার করা যায়। পাউডারের জন্য ব্যবহার করুন রাউন্ড, ওভাল বা কাবুকি ব্রাশ। ব্রাশের বদলে চাইলে স্পঞ্জও ব্যবহার করতে পারেন। টিয়ার ড্রপ শেপের স্পঞ্জ ব্যবহারেও সুবিধা এবং অনেকভাবে ব্যবহার করা যায়। স্পঞ্জ ব্যবহারের ক্ষেত্রে তা জলে ভালভাবে ভিজিয়ে অতিরিক্ত জল নিংড়ে ব্যবহার করুন।

বেস মেক-আপের পদ্ধতি

প্রথমেই মুখ ভালভাবে ফেস ওয়াশ দিয়ে ধুয়ে নিন। কোনওরকম তেল বা ঘাম থাকলে কিন্তু মেক-আপ ভাল হবে না। এরপর মুখ শুকনো করে কোনও ময়েশ্চারাইজ়ার নিয়ে মুখে লাগিয়ে নিন। যদি সকালের মেক-আপ হয় তাহলে সানস্ক্রিন মাস্ট। ভালভাবে মুখে ম্যাসাজ করে নিন পছন্দের সানস্ক্রিন। এরপর লাগান প্রাইমার। পুরো মুখে বিশেষত যে জায়গাগুলো তাড়াতাড়ি তৈলাক্ত হয়ে যায়, সেখানে ভালভাবে প্রাইমার লাগান। যদি মুখে কোনও অ্যাকনে বা দাগ-ছোপ থাকে, তবে প্রাইমার লাগানোর পর ১-২ মিনিট অপেক্ষা করে সঠিক শেডের কারেক্টর লাগান। পুরো মুখে লাগাবেন না, যেখানে প্রয়োজন শুধু সেখানেই চেপে চেপে লাগাবেন। এর ওপর ফাউন্ডেশন লাগান। যদি লিক্যুইড ফাউন্ডেশন হয়, সেক্ষেত্রে সরাসরি মুখে না লাগিয়ে, হাতের পিছনে নিন। এরপর ব্রাশ বা ভিজে স্পঞ্জের সাহায্যে মুখে চেপে চেপে লাগান। খুব ভালভাবে ব্লেন্ড করবেন যাতে একদম ত্বকের সঙ্গে মিশে যায়। এরপর কনসিলার নিন। কোনও দাগ বা অ্যাকনে থাকলে শুধু সেখানেই লাগান। কনসিলার ঘষবেন না, চেপে চেপে স্কিনের সঙ্গে মিশিয়ে দিন। চোখের তলায় কনসিলার লাগাতে হলে উল্টানো ত্রিভুজের শেপে লাগান এবং খুব হাল্কাহাতে লম্বালম্বিভাবে ব্লেন্ড করে নিন। এবার লুজ় পাউডার বা কমপ্যাক্ট লাগিয়ে নিন। রেডি আপনার বেস। এখানে একটু ভারী মেক-আপের কথাই বলা হল। প্রতিদিনের মেক-আপের জন্য ময়েশ্চারাইজ়ার লাগিয়ে তার ওপর বি বি বা সি সি ক্রিম লাগিয়ে পাউডার লাগিয়ে নিন। যদি প্রয়োজন হয় তাহলে কনসিলার লাগাতে পারেন।

টিপস ও ট্রিকস

১। কনসিলার যে শুধুমাত্র খুঁত ঢাকতেই ব্যবহৃত হয় না নয়। কোনও কারণে মেক-আপ বা লাইনার যদি বেঁকে যায়, তাহলে কনসিলার দিয়ে সহজেই সেটা ঠিক করা সম্ভব।

২। আমাদের অনেকেরই ঠোঁট পিগমেন্টেড হয় বা কালো ছোপ থাকে। সেক্ষেত্রে সামান্য কনসিলার ঠোঁটে লাগিয়ে পাউডার দিয়ে সেট করে নিন। এরপর পছন্দমতো লিপস্টিক লাগিয়ে নিন। এতে লিপস্টিকের সঠিক রঙটা ফুটে ওঠে।

৩। কনসিলার দিয়ে হাইলাইটও করতে পারেন। আপনার ত্বকের থেকে এক-দু’ শেড হাল্কা কনসিলার নাকের ওপর, থুতনিতে এবং কপালের মাঝখানে লাগিয়ে ব্লেন্ড করে নিন।

৪। চোখের মেক-আপ ফুটিয়ে তুলতেও আই লিডে ভালভাবে কনসিলার ব্লেন্ড করে নিন। কখনোই ভ্রুতে ফাউন্ডেশন লাগাবেন না।

৫। পাউডার থেকে বেশি কভারেজ পেতে ব্রাশে সামান্য জল স্প্রে করে তারপর পাউডারে বুলিয়ে মুখে লাগান।

৬। ফাউন্ডেশন লাগানোর সময় অবশ্যই গলায়, কানেও লাগাবেন। মুখ এবং গলায় শেডের পার্থক্য হলে দেখতে মোটেও ভাল লাগবে না।

৭। প্রতিবার ব্রাশ এবং স্পঞ্জ ব্যবহার করার পর ভালভাবে পরিষ্কার করবেন। নাহলে ত্বকে বিভিন্ন সমস্যা দেখা দিতে পারে।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here