সৈয়দপুরে নোংরা ও অস্বাস্থ্যকর পরিবেশে তৈরি লাচ্ছা সেমাই: বিএসটিআইয়ের তৎপরতা নেই

0
490

মিজানুররহমান মিলন সৈয়দপুর (নীলফামারী):
আসন্ন ঈদ-উল-ফিতকে সামনে রেখে নীলফামারীর সৈয়দপুরে লাচ্ছা সেমাই তৈরির ধুম পড়েছে। শহর ও গ্রামের পাড়া মহল্লায় গড়ে উঠেছে লাচ্ছা সেমাই তৈরির শতাধিক কারখানা। আর এ সব কারখানায় একেবারে নোংরা ও অস্বাস্থ্যকর পরিবেশে নিম্নমানের উপকরণ দিয়ে দেদারছে তৈরি হচ্ছে এসব সেমাই। অধিক মুনাফার লোভে সেমাই তৈরিতে ব্যবহৃত হচ্ছে মানবদেহের জন্য মারাত্মক সব ক্ষতিকর উপকরণ। অথচ এসব দেখার দায়িত্বে নিয়োজিত বাংলাদেশ স্ট্যান্ডার্ড অ্যান্ড ট্রেস্টিং ইনস্টিটিউশন (বিএসটিআই) একেবারে নির্বিকার। যদিও এরই মধ্যে উপজেলা প্রশাসন ও রংপুর বিভাগীয় জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তর থেকে ভেজাল বিরোধী অভিযান পরিচালনা করে বেশকিছু লাচ্ছা কারখানার মালিককে জরিমানা করা হয়েছে। তারপর থেমে নেই অনুমোদনবিহীন অবৈধভাবে লাচ্ছা সেমাই তৈরি ও বাজারজাতকরণের কাজ।
উত্তরাঞ্চল জুড়ে সৈয়দপুর শহরের তৈরি লাচ্ছা সেমাইয়ের জনপ্রিয়তা ও খ্যাতি রয়েছে। তাই রমজান মাস এলেই এখানে লাচ্ছা সেমাই তৈরি ধুম পড়ে। এর কারিগররা দিন রাত সমানতালে সেমাই কারখানাগুলোয় কাজ করে চলেছে। আগে কনফেকশনারি ও হোটেল- রেস্তোরাঁর মালিকরাই লাচ্ছা সেমাই তৈরি ও বিক্রি করতো।কিন্তু গত ৫/৬ বছর ধরে শহরের কনফেকশনারি ও হোটেল- রেস্তোরাঁর মালিকরা ছাড়াও অনেকেই রমজান মাসে এ লাভজনক ব্যবসায় নেমে পড়েন। তারা মূলতঃ মৌসুমী ব্যবসায়ী। আর এ সব মৌসুমী ব্যবসায়ীদের লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য হচ্ছে অধিক মুনাফা। তারা মানুষের স্বাস্থ্যের দিকটি বিবেচনায় না এনে মুনাফার বিষয়টি মাথায় রেখে অতি নিম্নমানের উপকরণ ব্যবহার করছে লাচ্ছা সেমাই তৈরিতে।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, সৈয়দপুর শহরসহ গ্রামাঞ্চলে প্রায় অর্ধ শতাধিক লাচ্ছা সেমাই তৈরি কারখানা গড়ে উঠেছে। অথচ সৈয়দপুরে মাত্র ১৩টি লাচ্ছা সেমাই কারখানার বিএসটিআইয়ের অনুমোদন রয়েছে। মৌসুমী ব্যবসায়ীরা তাদের তৈরি লাচ্ছা সেমাই সস্তায় বিক্রি করায় বৈধ ব্যবসায়ীদের বাজার মন্দা যাচ্ছে। শহরের কাজীহাট, পুরাতন বাবুপাড়া, বাঁশবাড়ি, হাতিখানা, নিয়ামতপুর, মুন্সিপাড়া, গোলাহাটসহ শহর ও গ্রামের আনাচে কানাচে মৌসুমী লাচ্ছা সেমাইয়ের কারখানা চালু করা হয়েছে। এ সব কারখানা থেকে প্রতিদিন বিভিন্ন নামে খোলা ও প্যাকেটজাতের মাধ্যমে বিপুল পরিমান লাচ্ছা বাজারজাত করা হচ্ছে। এ সব লাচ্ছা প্রতিদিন পিকআপ, রিক্সাভ্যান ও ব্যাটারিচালিত অটোরিক্সায় সৈয়দপুর ছাড়াও আশপাশের জেলা উপজেলার হাট বাজারে সরবরাহ করা হচ্ছে। অথচ এসবের বিএসটিআইয়ের কোন অনুমোদন নেই। অধিকাংশ কারখানার পরিবেশ নোংরা, কারিগররাও অপরিচ্ছন্ন। লাচ্ছা সেমাই তৈরিতে দেদার ব্যবহার করা হচ্ছে ক্ষতিকর নিম্নমানের তেল,ডালডাসহ অন্যান্য সব উপকরণ । অবৈধভাবে গজানো এসব কারখানার কারণে সমস্যায় পড়েছে স্বাস্থ্যসম্মত ভাবে সেমাই ও লাচ্ছা তৈরীর কারখানাগুলো। অভিযোগ রয়েছে এসব অনুমোদনহীন লাচ্ছা সেমাই তৈরী করা মালিকদের বিরুদ্ধে বিএসটিআই কর্তৃপক্ষ বরাবরই থাকেন নীরব। রমজান মাস এলে ওই প্রতিষ্ঠানের ফিল্ড অফিসারসহ অন্যান্য কর্মকর্তারা সৈয়দপুরে এসে ব্যবসায়ীদের সাথে বৈঠক করেই চলে যায়। ফলে অবৈধভাবে গড়ে ওঠা লাচ্ছা তৈরীর মালিকরা ঈদ পর্যন্ত তাদের ব্যবসা কোন ঝামেলা ছাড়াই চালিয়ে যায়। বিএসটিআইসহ অন্যান্য প্রতিষ্ঠান থেকে অনুমোদন নিয়ে দীর্ঘদিন ধরে লাচ্ছা সেমাই প্রস্তুতকারক প্রতিষ্ঠান মশাল লাচ্ছা সেমাইয়ের মালিক মো. শফি রেজা ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, এসব অসাধু ব্যবসায়ীদের কারনে তাদের ব্যবসা মন্দা যাচ্ছে।
এ ব্যাপারে বাংলাদেশ ব্রেড, বিস্কুট ও কনফেকশনারী প্রস্তুতকারক সমিতি নীলফামারী জেলা শাখার সভাপতি মো. আখতার সিদ্দিকী পাপ্পু বলেন, বেকারি আামদের আদি ব্যবসা। বংশপরস্পরায় আমরা এ ব্যবসায় জড়িত আছি। তাই আমরা বিএসটিআই ও পবিরেশ অধিদপ্তর থেকে অনুমোদন নিয়ে সরকারকে সব রকম ভ্যাট, ট্যাক্স দিয়ে ব্যবসা করছি। ফলে আামদের পণ্যের উৎপাদন খরচ বেশি পড়ে। আর তাই আমাদের উৎপাদিত সেমাই বেশি দামে বিক্রি করতে হচ্ছে। কিন্তু মৌসুমী ব্যবসায়ীদের নেই কোন অনুমোদন। দিতে হচ্ছে না সরকারি ভ্যাট, ট্যাক্সও। তারা সেমাই তৈরিতে ব্যবহার করছে নিম্নমানের উপকরণ। ফলে তারা যে মূল্যেই তাদের সেমাই বেচাবিক্রি করুক না কেন তাদের লাভ বেশি থাকছে। কিন্তু আমাদের সারা বছরই ব্যবসা করতে হয়। আমাদের একটি স্থায়ী ঠিকানা রয়েছে। সেখানে বসে আমার সারা বছরই সেমাই ও বেকারি পণ্য বিক্রি করি। আমাদের পণ্যের মান খারাপ হলে ক্রেতারা সরাসরি প্রতিষ্ঠানে এসে আমাদের অভিযোগ করতে পারেন। কিন্তু বাজারে যে সব খোলা লাচ্ছা সেমাই বিক্রি হচ্ছে তাদের ধরার কোন জায়গা নেই। তাই তারা নিম্নমানের উপাদান দিয়ে তৈরি লাচ্ছা সেমাই কম দামে বিক্রি করেও অধিক মুনাফা লুটছে।
সৈয়দপুর উপজেলা স্যানিটারি ইন্সপেক্টর ও নিরাপদ খাদ্য পরিদর্শক মো. অহিদুল হক বলেন, শুধু রজমান মাস নয়, আমরা সারা বছরই হোটেল রেঁস্তোরা ও বেকারিসহ বাজার তদারকি করে থাকি। আর রমজানের শুরু থেকে আমরা লাচ্ছা ও ইফতারি তৈরি ও বাজারজাতের প্রতি অধিক নজরদারি অব্যাহত রেখেছি। ইতোমধ্যে উপজেলা প্রশাসন ও ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের নেতৃত্বে নোংরা, অপরিচ্ছন্ন ও নিম্নমানের উপকরণ ব্যবহার ও অনুমোদন না থাকায় বেশ কয়েকটি সেমাই কারখানার মালিকের জরিমানা আদায় করা হয়েছে।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here