সরকারের পতন হবে, বিএনপিও ক্ষমতায় আসবে

0
211

খবর৭১ঃ গণতান্ত্রিক আন্দোলনের মধ্য দিয়ে সরকার পতনের হুঁশিয়ারি দিয়ে সাম্প্রতিক কালের সবচেয়ে বড় জনসমাবেশ শান্তিপূর্ণভাবে সম্পন্ন করেছে বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল বিএনপি। দলটির নেতাকর্মীদের দাবি- ২০১৪ সালের পর এটিই বিএনপির সবচেয়ে বড় জনসভা। আর এই জনসভা বর্তমান স্বৈরাচারি সরকারের বিরুদ্ধে অশনিসংকেত বলেও মনে করছেন বিএনপিপন্থি রাজনীতিকরা। দেশের চলমান রাজনৈতিক অস্থিতিশীলতা থেকে দেশকে গণতান্ত্রিক ধারায় ফিরিয়ে আনতে দলের চেয়ারপারসন বেগম খাদেলা জিয়ার মুক্তির বিকল্প নেই দাবি করে জনসভায় বক্তরা জানান, তারা নির্দলীয় নিরপেক্ষ সরকারের অধিনেই আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনে অংশ নিতে চান।

কোনও দলীয় সরকারের অধিনে অবাধ, সুষ্ঠু ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচন অনুষ্ঠানে সম্ভব নয় বলেও মনে করেন দলটির নেতারা। একইসঙ্গে নির্বাচন কমিশনকে সরকারের তাবেদার আখ্যা দিয়ে ক্ষমতাসীনদের স্বার্থে ইলেকট্রনি ভোটিং মেশিন (ইভিএম) নিয়ে যে খেলা নীলনকশা শুরু হয়েছে তারও তীব্র প্রতিবাদ জানান তারা। পাশাপাশি ইভিএম বাতিল করে এবং খালেদা জিয়াসহ দলের অসংখ্য নেতাকর্মীদের নিঃশর্ত মুক্তি দিতেও সরকারের প্রতি আহ্বান জানান বিএনপি নেতৃবৃন্দ। একইসঙ্গে বিএনপি নেতাদের বিশ্বাস- গণআন্দোলনের মধ্য দিয়েই বর্তমান অবৈধ সরকারের পতন হবে এবং বিএনপি আবারও খালেদা জিয়ার নেতৃত্বে ক্ষমতায় আসবে।

গতকাল শনিবার (০১ সেপ্টেম্বর) বিএনপির ৪০তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষে রাজধানীর নয়াপল্টনে জনসমাবেশে দেয়া দলটির শীর্ষ নেতাদের বক্তব্য এই প্রতিবেদনে তুলে ধরা হলো:

মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর: আন্দোলনে ঝাঁপিয়ে পড়তে দলের নেতাকর্মীদের আহ্বান জানিয়ে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন, ‘আপনাদের কাছে ফরিয়াদ করতে চাই। আমাদের মাতা, গণতন্ত্রের মাতাকে আর কারাগারে দেখতে চাই না। তাকে কারাগারে চিকিৎসা দেয়া হচ্ছে না। দেশনেত্রীকে মুক্ত করতে আন্দোলনে ঝাপিয়ে পড়ুন। বুকে হাত দিয়ে বলুন, বাংলাদেশকে মুক্ত করবোই, গণতন্ত্রকে মুক্ত করবোই। দেশকে স্বাধীন করবোই।’

মির্জা ফখরুল বলেন, ‘আগামী দিনে সুষ্ঠু নির্বাচন করতে হলে খালেদা জিয়ার সমস্ত মামলা প্রত্যাহার করতে হবে, খালেদা জিয়াকে মুক্তি দিতে হবে, সকল রাজবন্দীকে মুক্তি দিতে হবে, সরকারকে পদত্যাগ করতে হবে, নির্বাচন কমিশন পুনর্গঠন করতে হবে, নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে নির্বাচন দিতে হবে, ইভিএম বাতিল করতে হবে এবং সেনাবাহিনী মোতায়েন করতে হবে। সরকারের কোনও নেতাই এখন রাতে ঘুমোতে পারেন না। এই বুঝি খালেদা আসলো, তারেক রহমান আসলো- এই ভয়ে। ২৪টা ঘণ্টা স্বৈরাচারি সরকার বিএনপি ভীতির মধ্য দিয়ে যাচ্ছে।’

খন্দকার মোশাররফ হোসেন: বিএনপির এই স্থায়ী কমিটির সদস্য তার বক্তব্যে বলেন, ‘ইভিএম বলুন আর যতই ষড়যন্ত্র করুন ৫ জানুয়ারির মতো আর কোনো নির্বাচন বাংলাদেশে আর হতে দেবে না বিএনপি। জনগনকে সঙ্গে নিয়ে রুখে দিবে। এরশাদের সময় হুঁদা-মতিন যড়যন্ত্র করেছে, এখন এই সরকার করছে। সরকার যতোই ষড়যন্ত্র করুক বিএনপির অগ্রযাত্রা ব্যাহত করতে পারবে না। এই সরকার খালেদা জিয়াকে ভয়। যার কারণে মিথ্যা মামলায় কারাবন্দি করেছে। কারণ তারা খালেদা জিয়াবিহীন নির্বাচন করতে চায়। কিন্তু এবার আর হবে না। নির্বাচনের আগে লেভেল প্লেং ফিল্ড তৈরি করতে হবে, সরকারকে পদত্যাগ করতে হবে এবং বেগম জিয়াকে মুক্তি দিতে হবে।’

মওদুদ আহমদ: দলটির এই স্থায়ী কমিটির সদস্য ও সাবেক আইনমন্ত্রী ব্যারিস্টার মওদুদ আহমদ বলেছেন, ‘আমরা আইনজীবীরা আইনি প্রক্রিয়ায় বেগম খালেদা জিয়ার মুক্তি নিশ্চিত করার জন্য অপ্রাণ চেষ্টা করেছি। যতবার সফলতার দোরগোড়ায় গেছি তখনই সরকারের কলাকৌশল আর ষড়যন্ত্রের কারণে জামিন বিলম্বিত হয়েছে। আইনি প্রক্রিয়ায় বেগম খালেদা জিয়ার মুক্তি নিশ্চিত করা সম্ভবপর নয়। একমাত্র পথ হলো, রাজপথ। এই রাজপথে যাওয়ার জন্য এখন আপনাদের প্রস্তুতি নিতে হবে। আমাদেরকে এখন নেত্রীকে মুক্ত করে নির্বাচনের দিকে এগুতে হবে। একদিকে নির্বাচন, একদিকে আন্দোলন। আন্দোলন হবে নেত্রীর মুক্তির জন্য, একটি নিরপেক্ষ সরকারের জন্য।’

তিনি বলেন, ‘পার্লামেন্ট কেন ভেঙে দিতে হবে এটা অনেকে বোঝে না। একটি সংসদ রেখে আর একটি সংসদ নির্বাচন পৃথিবীতে নজিরবিহীন। আমি যদি সংসদ সদস্য থাকি এবং নমিনেশন পাই তাহলে দেশের প্রশাসন এবং পুলিশ প্রত্যেকে আমার পক্ষে থাকবে। তখন আমার প্রতিপক্ষ কোনোদিন জয়লাভ করতে পারবে না। তাই আমরা ৯০ দিনের মধ্যে পার্লামেন্ট ভেঙে দেয়ার দাবি জানিয়েছি।’

জাতীয় ঐক্যের বিষয়ে তিনি বলেন, ‘জাতীয় ঐক্যের ওপর জোর দেয়া হয়েছে, আমরা সাধুবাদ জানাই। জাতীয় ঐক্যের মাধ্যমে আমাদের আন্দোলনের যা কিছু করা যায় করবো এবং বাংলাদেশে অবাধ ও নিরপেক্ষ নির্বাচনের ব্যবস্থা করবো।’

রুহুল কবীর রিজভী: বিএনপির এই সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব বলেছেন, ‘জনগণ জেগে উঠেছে। সরকারের খুঁটি নড়বড়ে হয়ে গেছে। কিন্তু এই সরকারের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তা টের পাচ্ছেন না। আকাশে-বাতাসে, বৃক্ষে, বৃক্ষে, পাতায়, পাতায় পতনের আওয়াজ ধ্বনিত হচ্ছে।’

প্রধানমন্ত্রীর সমালোচনা করে তিনি বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রী বলেছেন জনকল্যাণে কাজ করেছেন, এখানে একটু সংশোধন আছে। তিনি জনগণের কল্যাণে নয়, আওয়ামী লীগের কল্যাণে কাজ করেন। তাঁর জনগণকে প্রয়োজন নেই, তাঁর প্রয়োজন ক্ষমতা। কারণ ক্ষমতায় থাকলে ব্যাংক লুট করা যায়, রিজার্ভ লুট করা যায়, সোনা লুট করা যায়, কয়লা, পাথর লুট করা যায়।’

শামসুজ্জামান দুদু: সরকার ও নির্বাচন কমিশনের ইভিএম পদ্ধতির সমালোচনা করে বিএনপির এই ভাইস-চেয়ারম্যান ও কৃষক দলের সাধারণ সম্পাদক বলেছেন, ‘নির্বাচন কমিশনারকে বলতে চাই, আপনাদের কিসের ইভিএম-টিভিএম? বেশি বাড়াবাড়ি করলে ঠ্যাং ভেঙে দেবো। আজকের এই সমাবেশকে কেন্দ্র করে সারারাত হাসিনা সরকার তার পুলিশ বাহিনীকে লেলিয়ে দিয়েছিল আমাদের নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে। আজকের এই প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীর দিনে হাসিনা সরকারের উদ্দেশ্যে বলে যেতে চাই, ডিসেম্বর-জানুয়ারির মধ্যে দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়া এই দেশের প্রধানমন্ত্রীর দায়িত্ব নেবেন।’

দুদু আরও বলেন, ‘শেখ হাসিনাকে অনেকবার বলেছি, বলতে বলতে মুখে ফেনা উঠে গেছে, বেগম জিয়ার চিকিৎসার ব্যবস্থা করেন। তাঁর রুমটা একটু ভালো করেন। কিন্তু আপনি তা শোনেন নাই। বেগম জিয়া প্রধানমন্ত্রী হওয়ার পর সেদিন কি আপনি এই দেশ থেকে পালিয়ে যেতে পারবেন? কথা খুব পরিষ্কার, ব্যাংক থেকে নিয়েছেন ৪ হাজার কোটি টাকা। সেই টাকা আপনাকে দিতে হবে। এটা বাংলাদেশের টাকা।’

তিনি বলেন, ‘দেশের স্বাধীনতা ঘোষণা করেছেন জিয়াউর রহমান, রণাঙ্গনে যুদ্ধ করেছে জিয়া ও তাঁর বাহিনী। আপনার বাপের দেশ যা খুশি তাই করবেন? বেগম জিয়াকে ছাড়া বিএনপি নির্বাচনে যাবে না। আমরা বেগম জিয়াকে নিয়েই নির্বাচনে যাবো। তারেক রহমান কি অন্যায় করেছে? জিয়াউর রহমান আপনাকে দেশে আসার সুযোগ দিয়েছিলেন আর আপনি তাঁর ছেলেকে দেশে আসতে দিচ্ছে না। কথা একটাই বাংলাদেশ জিয়ার দেশ, বাংলাদেশ খালেদা জিয়ার দেশ, বাংলাদেশ হচ্ছে তারেক রহমানের দেশ। এই দেশে থাকতে হলে আইনের আওতায় থাকতে হবে। মুক্তিযুদ্ধে জিয়াউর রহমানের কথামতো থাকতে হবে।’

আমির খসরু মাহমুদ চৌধুরী: বিএনপির এই স্থায়ী কমিটির সদস্য, ‘সামনের দিনে সরকার পতন আন্দোলনের একটি সুনামি আসবে। সেই সুনামিতে ইভিএমসহ সরকার ভেসে যাবে। এই আওয়ামী লীগ যে রাষ্ট্রীয় বাহিনীর মাধ্যমে ক্ষমতায় এসেছে তাদেরও এখন বিশ্বাস করতে পারছে না। তাই ষড়যন্ত্রে ব্যর্থ হয়ে ইভিএমের মাধ্যমে ক্ষমতায় আসতে চাইছে। কিন্তু সামনের দিনে আন্দোলনের যে সুনামি আসবে তাতে ইভিএমসহ আওয়ামী লীগ সরকার ভেসে যাবে। দেশের মানুষ আজ ঐক্যবদ্ধ হয়েছে সরকারের পতন ঘটানোর জন্য। তাই ষড়যন্ত্র বন্ধ করে বাংলাদেশের মালিকানা দেশের মালিক জনগণের কাছে ফিরিয়ে দিন।’

হাবিবুন নবী খান সোহেল: ঢাকা মহানগর দক্ষিণ বিএনপির এই সভাপতি বলেন, ‘বিএনপির চেয়ারপারসন, অসুস্থ নেত্রী বেগম খালেদা জিয়ার প্রতিটি দীর্ঘশ্বাসের পাওনা হিসাব নেয়ার সময় এসেছে। অবশ্যই হিসাব নেয়া হবে। আমরা ৪০তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী পালন করছি। অথচ আমাদের চেয়ারপারসন আমাদের মাঝে উপস্থিত নেই, উনি জেলখানায় আছেন। বিষয়টি আমাদের জন্য যন্ত্রণার, দুঃখ ও লজ্জাজনক।’

প্রধানমন্ত্রীর উদ্দেশ্যে তিনি বলেন, ‘আমাদের নেত্রীকে জেলে রেখে অবৈধ প্রধানমন্ত্রী আপনি সেজেগুজে পারফিউম মেখে দেশে-বিদেশে ঘুরে বেড়াবেন? এইভাবে কি দেশ চলবে? এভাবে দেশ চলতে পারে না। আওয়াজ কি শুনতে পাচ্ছেন? শেখ হাসিনা- আপনার পতনের আওয়াজ কি শুনতে পাচ্ছেন? আওয়ামী লীগ স্লোগান দিয়েছিলো আগে উন্নয়ন, পরে গণতন্ত্র। বাস্তবে কি উন্নয়ন দেখা যায়? উন্নয়নের চিহ্ন নাই, গণতন্ত্র তো মরেই গেছে।’
খবর৭১/এসঃ

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here