নুসরাত হত্যা মামলায় ১৬ জনের বিরুদ্ধে অভিযোগ গ্রহণ

0
436
সাক্ষ্যগ্রহণ চলছে নুসরাত হত্যা মামলার

খবর৭১ঃ ফেনীর সোনাগাজীর মাদ্রাসাছাত্রী নুসরাত জাহান রাফিকে নিপীড়নের পর পুড়িয়ে হত্যার ঘটনায় ১৬ আসামির বিরুদ্ধে দায়ের হওয়া চার্জশিট আমলে নিয়েছেন আদালত। একইসঙ্গে আদালত আসামিদের জামিন নামঞ্জুর করে জেলহাজতে পাঠানোর নির্দেশ দিয়েছেন। মামলার পরবর্তী শুনানির জন্য আগামী ২০ জুন দিন ধার্য করা হয়েছে।

ফেনীর নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনালের বিচারক মামুন-উর রশিদের আদালত সোমবার চার্জশিট গ্রহণ ও আদেশ দেন। এদিন আদালতে আসামিদের হাজির করা হয়। আদালত নুসরাত হত্যায় গ্রেফতার২১ জনের মধ্যে পাঁচজনকে অব্যাহতি দিয়েছেন।

যাদের বিরুদ্ধে অভিযোগ গ্রহণ করা হয়েছে, তারা হলেন- সোনাগাজী সিনিয়র মাদ্রাসার বহিষ্কৃত অধ্যক্ষ সিরাজউদ্দৌলা, সোনাগাজী উপজেলা আওয়ামী লীগ সভাপতি রুহুল আমিন (৫৫), সোনাগাজী পৌরসভার কাউন্সিলর ও স্থানীয় আওয়ামী লীগ নেতা মাকসুদ আলম (৫০), নুর উদ্দিন (২০), শাহাদাত হোসেন শামীম (২০), সাইফুর রহমান মোহাম্মদ জোবায়ের (২১), জাবেদ হোসেন (১৯), হাফেজ আবদুল কাদের (২৫), আফছার উদ্দিন (৩৩), কামরুন নাহার মণি (১৯), উম্মে সুলতানা পপি (১৯), আবদুর রহিম শরীফ (২০), ইফতেখার উদ্দিন রানা (২২), ইমরান হোসেন মামুন (২২), মোহাম্মদ শমীম (২০) ও মহিউদ্দিন শাকিল (২০)।

জেলা জজ আদালতের সরকারি কৌঁসুলি (পিপি) প্রিয়রঞ্জণ দত্ত জানান, কড়া নিরাপত্তার মধ্যদিয়ে নুসরাত হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে জড়িত সন্দেহে গ্রেফতার ২১ আসামিকে সোমবার বেলা সাড়ে ১১টার দিকেআদালতে তোলা হয়। এ সময় আদালত পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশনের (পিবিআই) ১৬ আসামির সর্বোচ্চ শাস্তি দাবি করে দেয়া চার্জশিট আমলে নেন। আগামী ২০ জুন চার্জ গঠনের দিন ধার্য করা হয়েছে।

তিনি আরও জানান, নুসরাত হত্যা মামলার চার্জশিটভুক্ত আসামি আওয়ামী লীগ নেতা রুহুল আমিন, কাউন্সিলর মাকসুদ আলম, প্রভাষক আবসার উদ্দিন, মো. শামিম, ইফতেখার উদ্দিন, নুর উদ্দিন জামিন চাইলে আদালত তাদের জামিন আবেদন নামঞ্জুর করে জেলহাজতে পাঠানোর নির্দেশ দেন।

একইভাবে এ হত্যাকাণ্ডে জড়িত সন্দেহে গ্রেফতার নুসরাতের সহপাঠী আরিফুল ইসলাম, নূর হোসেন, কেফায়াত উল্লাহ জনি, মোহাম্মদ আলা উদ্দিন ও শাহিদুল ইসলামের নাম চার্জশিটে না থাকায় মামলা থেকে খালাস দিয়েছেন আদালত।

আদালত সূত্র জানায়, মামলার অভিযোগপত্র ও ৭২২ পৃষ্ঠার নথিটি গত ২৮ মে ফেনীর জ্যেষ্ঠ বিচার বিভাগীয় হাকিম জাকির হোসাইনের আদালতে দাখিল করেন পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশনের (পিবিআই) কর্মকর্তারা। বিচারক অভিযোগপত্রটি পর্যবেক্ষণ করে ফেনীর নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনালের বিচারক মামুন-উর রশিদের আদালতে পাঠিয়ে দেন। এর পর গত ৩০ মে নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আদালতে আসামিদের হাজির করা হলেও বিচারক সেদিন অভিযোগপত্র গ্রহণের ওপর শুনানি না করে ১০ জুন শুনানির তারিখ ধার্য করেন।

মামলার বাদীপক্ষে রয়েছেন অ্যাডভোকেট শাহজাহান সাজু এবং আসামিপক্ষে রয়েছেন অ্যাডভোকেট গিয়াস উদ্দিন নান্নু, তাজুল ইসলামসহ কয়েকজন আইনজীবী।

অভিযোগপত্রে ১৬ জনের সর্বোচ্চ শাস্তি প্রাণদণ্ডের সুপারিশ করে মামলার তদন্ত সংস্থা পিবিআই। মামলার তদন্তকারী কর্তাকর্তা শাহ আলম ২৮মে এই চার্জশিট জমা দেন।

২৬ মার্চ অধ্যক্ষ সিরাজউদ্দৌলা তার অফিসকক্ষে ডেকে নিয়ে মাদ্রাসার আলিম পরীক্ষার্থী নুসরাত জাহান রাফিকে যৌন হয়রানি করেন।

রাফি এর প্রতিবাদ করেন এবং এ বিষয়ে রাফির মা শিরীন আক্তার মামলা করলে পুলিশ অধ্যক্ষ সিরাজউদ্দৌলাকে গ্রেফতার করে কারাগারে পাঠান।

ওই মামলা প্রত্যাহার করার জন্য চাপ দেয়া হচ্ছিল নুসরাত ও তার পরিবারকে। কিন্তু মামলা তুলে না নেয়ায় ৬ এপ্রিল মাদ্রাসার একটি ভবনের ছাদে ডেকে নিয়ে রাফির গায়ে আগুন দেয় বোরকা পরা কয়েকজন। আগুনে শরীরের ৮৫ শতাংশ পুড়ে যাওয়া রাফি ১০ এপ্রিল রাতে হাসপাতালে মারা যান। তিনি বলেন, রাফির গায়ে আগুন দেয়ার পর ৮ এপ্রিল তার ভাই মাহমুদুল হাসান নোমান অধ্যক্ষ সিরাজকে প্রধান আসামি করে ৮ জনের নাম উল্লেখসহ অজ্ঞাত পরিচয়ের আরও ৪-৫ জনকে আসামি করে একটি মামলা করেন।

রাফির মৃত্যুর পর তা হত্যা মামলায় রূপান্তরিত হয়।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here