চৌগাছার হোটেল রেস্তোরা গুলো ভেজাল ও পচাবাশি খাবারে সয়লাব

0
400

চৌগাছা (যশোর)ঃ খাদ্য দেশের প্রতিটি নাগরিকের মৌলিক অধিকার। নিরাপদ খাদ্য অধিকার নিশ্চিত করতে না পারলে জনগনের খাদ্য অধিকার লংঘিত হয়। এটি জানা সত্ত্বেও যশোরের চৌগাছার প্রতিটি হোটেল রেস্তোরায় ভেজাল খাদ্যে সয়লাব হয়ে গেছে। শুধু ভেজাল খাদ্য না অসাধু ব্যবসায়ীরা পচা বাশি খাবার হরহমেশে মানুষের মাঝে পরিবেশন করছে। এ সব খাবার খেয়ে অনেকে হয়ে পড়ছেন অসুস্থ্য। সরকারী ভাবে মাসের পর মাস কোন তদারকি না থাকায় যে যেমন ইচ্ছা সেই ভাবেই ব্যবসা চালিয়ে যাচ্ছেন। দ্রুত ভ্রাম্যমান আদালত পরিচালায় সংশ্লিষ্ঠদের হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন উপজেলার সচেতন মহল।
সূত্র জানায়, যশোরের চৌগাছা উপজেলা সময়ের ব্যবধানে ব্যাপক বিস্তার লাভ করেছে। ব্যবসা বানিজ্যসহ সব কিছুতে অভাবনীয় সাফল্য অর্জন করায় প্রতি দিনই এখানে জনসাধারনের চাপ বেড়েই চলেছে। এমন এক সময় ছিল উপজেলা সদরে হোটেল রেস্তোরা খুজে পাওয়া দুরুহ ব্যাপার ছিল। কিন্তু বর্তমান সময়ে মানুষের চাপ বেড়ে যাওয়ায় ব্যাঙের ছাতার মত যত্রতত্র গড়ে উঠেছে হোটেল রেস্তোরা। শুধু উপজেলা সদরেই এর সংখ্যা অর্ধশতের মত। এরমধ্যে বেকারী-কনফেকসনারী আছে ১৭টি আর মিষ্টি ও খাবারের হোটেল আছে ৩২ টি। এ ছাড়া ভ্রাম্যমান ফাষ্টফুড আছে প্রায় ১০ টির মত। এ সব ব্যবসায়ীরা প্রতিটি হোটেল রেস্তোরার সামনে বিশাল আকৃতির বাহারী সব নামের সাইনবোর্ড ঝুলিয়ে তাদের পরিচিতি জানান দিচ্ছেন। সম্মুখ ভাগে তাদের চাকচিক্কা ভাব দেখা গেলেও ভিন্ন ভিতরের অংশে। যেখানে খাবার প্রস্তুত করছেন সেখানকার পরিবেশ এতটাই নষ্ট যে কোন সচেতন মানুষ একবার দেখলে ওই হোটেল বা রেস্তোরাতে আর কখনও খাবার খেতে যাবেনা। শুধু তাই না যে সব হোটেল রেস্তোরা তাদের বয়দের দিয়ে খাবার বিতারণ করেন তারাও সারাক্ষন থাকেন অপরিস্কার। শরীর থেকে ঘাম ঝরছে সেই অবস্থায় বানানো হচ্ছে খাবার, ধুমাপন অবস্থায় তৈরী করা হচ্ছে খাবার এ ধরনের অংসখ্য অনিয়ম প্রতিনিয়ত লক্ষ্য করা যাচ্ছে। অনেক হোটেল আছে, যারা পচা বাশি খাবার সাধারণ মানুষের মাঝে বিতারণ করে যেন তৃপ্তি পান। যে সব ব্যক্তি এই খাবার খাচ্ছেন তারা হয়ে পড়ছেন অসুস্থ্য। মিষ্টির হোটেলে প্রতিটি খাবারে মিশানো হচ্ছে ভেজাল। রঙ দিয়ে তৈরী করা হচ্ছে বিভিন্ন ধরনের মুখোরোচক খাবার যা মানব দেহের জন্য অত্যান্ত ক্ষতিকার। অনুরুপ ভাবে বাজারের প্রতিটি খাবারের হোটেল গুলো জনসাধারনকে কি খাওয়াচ্ছেন তা জানলে সকলের শরীর শিহরে উঠবে। তাদের পরিবেশিত মাছ, মাংশ থেকে শুরু করে সব কিছুই স্বাস্থ্যের জন্য চরম ঝুকিপূর্ণ। সুচতুর এ সব ব্যবসায়ীরা খাদ্যে ভেজাল মেশানো কার্যক্রম অত্যান্ত গোপনীয়তার সাথে সমাপ্ত করছেন। ভোক্তা সাধারনের চোখ ফাঁকি দিয়ে কী ভাবে ভেজাল মেশানো যায় সে দিকে বেশী নজর রাখছেন তারা। সরকারের সংশ্লিষ্ঠ কর্মকর্তাদের চোখ ফাঁকি দিয়ে চলছে এ সব কাজ। মাঝে মধ্যে স্থানীয় ও জাতীয় দৈনিকে এ সংক্রান্ত সংবাদ প্রকাশে জনসেচতনা কিছুটা বাড়লেও রাষ্টীয় প্রতিষ্ঠান গুলোর টনক নড়ছে না বলে অভিযোগ সচতেন মহলের। এক সময় মাঝে মধ্যে ভেজাল বিরোধী অভিযান নাগরিকদের মনকে হাল্কা স্বস্তি দিলেও সেই কার্যকারিতা দীর্ঘ দিন রয়েছে বন্ধ। ভেজাল খাদ্য গ্রহনের ফলে নানাবিধ দুরারোগ্য ব্যাধী ও জীবনহানির ঘটনা ঘটে। বিশ্ব খাদ্য ও কৃষি সংস্থার তথ্য মতে, বাংলাদেশে প্রতি বছর ৪৫ লক্ষ লোক খাদ্যে বিষক্রিয়ায় আক্রান্ত হয়ে বিভিন্ন জটিল রোগে আক্রান্ত হচ্ছেন। তারপর অধিক মুনাফার আশায় অসাধু ব্যবসায়ীরা নিয়মিত খাদ্যে ভেজাল পচা বাশি খাবার মানুষের মাঝে বিতারণ করছেন। এক তথ্য অনুসন্ধানে জানা গেছে, বিশুদ্ধ খাদ্য অধ্যাদেশ, ১৯৫৯ (সংশোধিত ২০০৫) এ সর্বোচ্চ ১ বছর সশ্রম কারাদন্ড বা ৫০ হাজার টাকা জরিমানা বা উভয় দন্ডের বিধান রয়েছে। অপারদিকে ভোক্তা অধিকার সংরক্ষন আইন, ২০০৯ এ সর্বোচ্চ ৩ বছরের কারাদন্ড বা অনাধিক ২ লক্ষ টাকা জরিমানা বা উভয় দন্ডের বিধান রয়েছে। নতুন প্রনীত নিরাপদ খাদ্য আইন, ২০১৩ তে কারাদন্ড অনুর্ধ্ব ৫ বছর বা অনাধিক ১০ লক্ষ টাকা জরিমানার বিধান করা হয়েছে। একের পর এক আইন হচ্ছে কিন্তু তার যথেষ্ট প্রয়োগের অভাবে খাদ্যে ভেজাল বা পচা বাশি খাবার বিতারণকারীর সংখ্যা দিন দিন বেড়েই চলেছে। হোটেল রেস্তোরা গুলোতে নিরাপদ খাদ্য নিশ্চিতের লক্ষে অচিরেই ভ্রাম্যমান আদালত পরিচালনায় সংশ্লিষ্ঠদের হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন সচেতন মহল।
খবর৭১/ইঃ

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here