মুকুরুল ইসলাম মিন্টু চৌগাছা (যশোর) ॥ যশোরের চৌগাছায় ট্রাক হেলপার জিয়ারুল ইসলামের জীবনের সব স্বপ্ন মুহুর্তের মধ্যে কেড়ে নিয়েছে এক মর্মান্তিক সড়ক দূর্ঘটনায়। সে বর্তমানে পঙ্গুত্ববরণ করে বলাচলে পরিবার পরিজনের কাছে বোঝা হয়ে উঠেছে। অসহায় পিতা মাতা ছেলেকে সুস্থ্য করে তোলার জন্য প্রায় সাড়ে ৮ লাখ টাকা ব্যয় করেছেন কিন্তু এখনও সে সুস্থ্য হয়ে ওঠেনি। শরীর থেকে এক পা বিচ্ছিন্ন করতে হয়েছে তার। আর একটি অপারেশন করতে হবে দরকার প্রায় ৪ লাখ টাকার। সন্তানকে সুস্থ্য করে তোলার জন্য অসহায় পিতামাতা সমাজের বৃত্তবানদের কাছে সাহায্যের হাত বাড়িয়েছেন।
সূত্র জানায়, উপজেলার সিংহঝুলী ইউনিয়নের মাজালি গ্রামের হত দরিদ্র পিতা খন্দকার নজরুল ইসলাম ও মা মনোয়ারা বেগমের ছেলে জিয়ারুল ইসলাম (২২)। পিতার অভাবের সংসারে কিছুটা স্বচ্ছলতা ফিরিয়ে আনতে ছোট বেলা থেকেই বই খাতা ছেড়ে সে কাজ নেই ট্রাক চালকের হেলপার হিসাবে। হাড়ভাঙ্গা পরিশ্রম করে যা রোজগার হয় তাই তুলে দিত পিতা নজরুল ইসলামের হাতে। পিতা পুত্রের রোজগারে বেশ ভালই চলতে থাকে তাদের সংসার। জায়গা জমি বলতে তাদের কিছুই নেই, পরের এক টুকরা জমিতে শিল্পপতি রায়হান সাহেব মাথা গোজার ঠাই করে দিয়েছেন। ২০১৭ সালের ৫ এপ্রিল এক ভয়াবহ সড়ক দূর্ঘটনা জীবনের সব স্বপ্নকে তছনছ করে দেয় জিয়ারুল ইসলামের। কান্না জড়িত কন্ঠে সে এ প্রতিবেদককে বলেন, দূর্ঘটনার দেড় মাস আগে বিয়ে বন্ধনে আবদ্ধ হই। ঘটনার দিন ঘরে নববধু সেলিনা খাতুনকে রেখে ট্রাকে চেপে বসি। ঝিনাইদাহ জেলার গাড়াগঞ্জ নামক স্থানে পৌছালে চালক সড়কে জমা থাকা অপর একটি ট্রাকের পিছনে মেরে দেয়। তখন ভোর ৫ টা, চালক কিছুটা আঘাত প্রাপ্ত হলেও তা খুব গুরুতর ছিলনা। তবে ট্রাকের বাম পাশে আমি বসে থাকায় চরম আঘাত প্রাপ্ত হই। স্থানীয়রা আমাকে উদ্ধার করে প্রথমে নিয়ে যায় ঝিনাইদাহ সদর হাসপাতালে। সেখানে আমার স্বাস্থ্যের কোন উন্নতি না হওয়ায় ওই দিনেই নেয়া হয় ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে। এরপর ভর্তি করা হয় রাজধানী ঢাকার এলিট হাসপাতালে। দীর্ঘদিন চিকিৎসা শেষে চিকিৎসকার বলেন, ডান পা কেটে ফেলতে হবে। তা না হলে বড় ধরনের ক্ষতি হয়ে যাবে। একপর্যায় ডান পা কেটে ফেলে হয়। দীর্ঘ সময় চিকিৎসা শেষে ফিরে আসি বাড়িতে। এরমধ্যে আমার চিকিৎসা বাবদ ৮ লাখ ৪০ হাজার টাকা ব্যয় হয়ে যায়। আমার বৃদ্ধ পিতা মাতা বলাচলে ভিক্ষা করে আমাকে চিকিৎসা করে কিছুটা সুস্থ্য করে তোলেন। বর্তমানে আমার পায়ের নালায় সৃষ্টি হয়েছে জটিলতা। আবারও একটি বড় অপারেশনের মুখোমুখি হতে হবে। চিকিৎসকরা জানিয়েছেন, এই অপারেশনে প্রায় ৪ লাখ টাকা খরচ হবে। কিন্তু আমি বা আমার পরিবারের পক্ষে আর কোন টাকা জোগাড় করা সম্ভব হচ্ছেনা। সুন্দর এই পৃথিবীতে আর দশজন সুস্থ্য সবল মানুষের মত হয়ত বেঁচে থাকতে পারবো না, কারণ আমি যে চিরতরে পঙ্গু হয়ে গেছি। তারপরও পঙ্গুত্ববরণ করেই আমি বাঁচতে চাই,সমাজে কি কোন দয়াবান মানুষ আছেন, আমাকে সুচিকিৎসা দিয়ে বাঁচিয়ে তুলবেন, এ ধরনের আকুতি করে ছোট শিশুদের মত ডুকরে ডুকরে কাঁদতে থাকেন পা হারানো জিয়ারুল ইসলাম। জিয়ারুলের স্ত্রী সেলিনা খাতুন বলেন, আমার বিয়ের মাত্র দেড় মাস পর স্বামী সড়ক দূর্ঘটনায় পঙ্গুত্ববরণ করেছে। আমি সর্বদা ওর সেবা করে যাচ্ছি। সে জীবনে আর কোন দিন স্বাভাবিক হতে পারবে না জানি, তবে আমার মাঝে সে বেঁচে থাকুক যুগযুগ ধরে বিধাতার কাছে সর্বদা এই প্রর্থনা করছি। মা মনোয়ারা বেগম বলেন, একটি দূর্ঘটনা আমার পরিবারের সব কিছু তছনছ করে দিয়েছে। আমি মানুষের দরজায় দরজায় যেয়ে হাত পেতে যা পেয়েছি তাই দিয়ে কলিজার টুকরা ছেলেকে সুস্থ্য করে তোলার চেষ্টা করেছি। কিন্তু এখন আর পেরে দিচ্ছিনা। তিনি সমাজের বৃত্তবানদের কাছে সাহায্যের জন্য প্রার্থনা করেছেন। যোগাযোগ মোবাইল-০১৯৯২-৫০৭৫৩৭।
খবর ৭১/ইঃ