খবর৭১ঃউজ্জ্বল রায়, নড়াইল জেলা প্রতিনিধি■: আজ শনিবার (৮,ডিসেম্বর)-২৭৪
আমার কর্মেই ফুটে উঠবেআমি কতটা ভালো মানুষ: নড়াইল-২ আসন
থেকে মাশরাফি মাশরাফি বিন মর্তুজা ২০০১, ক্রিকেটের আঙিনায় পথচলা
শুরু। আজ ২০১৮ এই প্রায় দেড় যুগ ক্রিকেট যা খেলেছি, জীবন দিয়ে
খেলেছি। কখনও আপোস করিনি। আগামী বিশ্বকাপ পর্যন্ত আপোস করতেও
চাই না। বাকিটা মহান আল্লাহর ইচ্ছা। বিস্তারিত আমাদের নড়াইল জেলা
প্রতিনিধি উজ্জ্বল রায়ের রিপোর্টে, রাজনীতির তাড়না আমার ভেতরে ছিলই।
কারণ, সব সময় বিশ্বাস করেছি, রাজনীতি ছাড়া দেশের উন্নয়ন
জোরালোভাবে সম্ভব নয়। ক্রিকেট খেলেছি, আপনাদের ভালোবাসা পেয়েছি।
নাহলে হয়তোবা ২০১১ সালেই হারিয়ে যেতাম। এই মাশরাফিই হয়তো
এতদিনে থাকতো না। ২০১১ সালে আপনাদের কাছ থেকে যে ভালোবাসা
পেয়েছি, তা আমাকে এই সাত বছর চলতে সহায়তা করেছে। এবার আমার
সামনে সুযোগ এসেছে আমার দেশের মানুষের জন্য কিছু করার।
বিশ্বকাপের পরের সাড়ে চার বছর আমার জন্য কী অপেক্ষায় আছে, সেটাও
জানি না। তাই আমি সময়কে মূল্যায়ন করেছি। সময়ের ডাক শুনেছি। কারণ
আমি বিশ্বাস করি, সময়ের কাজ সময়েই করা উচিত। বঙ্গবন্ধুকে দেখার
সৌভাগ্য হয়নি, কিন্তু তার কথা জেনে, উপলব্ধি করেই বেড়ে উঠেছি।
পড়াশোনা করে, অনেকের কাছে শুনে যতটুকু জেনেছি, সেসব থেকেই
উনাকে হৃদয়ে ধারণ করেছি। আর মুক্তিযুদ্ধের চেতনা পারিবারিকভাবেই আমার
অস্থি-মজ্জায়, মননে-মগজে। এখন বঙ্গবন্ধু-কন্যা জননেত্রী শেখ হাসিনা যে
উন্নয়ন কাজ করছেন, তার সারথি হয়ে আমার এলাকার জন্য কিছু করতে
চাই। এটা যদি করতে না পারি, তাহলে আমার কাছে মনে হবে আমার এলাকার
প্রতি আমি মোটেও সুবিচার করছি না। বঞ্চিত করছি। ক্রিকেট খেলতে
খেলতে সামাজিক দায়বদ্ধতার জায়গা থেকে যতটুকু সামাজিক কাজ
করেছি; আমার মনে হয়েছে সেটুকুই যথেষ্ট নয়। আরও বড় পরিসরে করার
সুযোগ খুঁজেছি সবসময় এবং রাজনীতি আমাকে সেই সুযোগটা
করে দিচ্ছে। কোনো ব্যক্তি বা কোনো দলকে আঘাত করার জন্য আমি
রাজনীতিতে আসছি না। যে যার আদর্শ নিয়ে সুন্দর জীবন-যাপন করবে,
পারস্পরিক ভ্রাতৃত্ববোধে সহনশীল ও সহযোগিতাপূর্ণ রাজনৈতিক
সংস্কৃতি বিরাজ করবে, সেটিই আমার চাওয়া। অনেকেই প্রশ্ন তুলছেন,
আমাদের মতো মানুষ কেন রাজনীতিতে আসবে! সত্যি বলতে, আমি জানি
না, আমি কেমন মানুষ। ভালো মানুষ হিসেবে আমার যে পরিচিতি
ছড়িয়েছে, সেটাও আমার ভেতর বারবার প্রশ্ন জাগিয়েছে, কেন আমি
ভালো মানুষ? দুটি বল করে, আপনাদের কয়েকটি আনন্দের মূহুর্ত উপহার
দিয়ে, দু’জনকে জড়িয়ে ধরেই যদি ভালো মানুষ হওয়া যায়, তাহলে স্রেফ
এরকম ভালো মানুষ হওয়ার ইচ্ছা আমার কখনোই ছিল না। সত্যিকার অর্থেই
আমি কেমন মানুষ, আমার বিশ্বাস, সেটি বিচার করার সময় সামনে। যদি
আমি নির্বাচনে জয়লাভ করতে পারি এবং আমার দল সরকার গঠন করে, তারপর
আমার কর্মেই ফুটে উঠবে আমি কতটা ভালো মানুষ। জানি, বলা যত সহজ,
কাজ করে দেখানো তার চেয়ে অনেক বড় চ্যালেঞ্জ। কিন্তু চ্যালেঞ্জটা নিতে
আমি পিছপা হইনি। চাইলেই আমি নিজের সহজাত পরিবেশের ভেতর থাকতে
পারতাম। কিন্তু আমি স্বপ্ন দেখি, আমার এলাকার মানুষ সমৃদ্ধির পথে
আরেক ধাপ এগিয়ে যাক। আলো ছড়িয়ে পড়ুক নড়াইলবাসীর উপর। আমি
চাই সমৃদ্ধ নড়াইল। সেই পথে আমার যত কষ্টই হোক, আমি থাকবো আমার
প্রিয় নড়াইলবাসীর পাশে। মনোনয়নপত্র কেনার সপ্তাহখানেক আগে আমার
মেয়েকে আমি ব্যাংককের সবচেয়ে বড় হাসপাতালে নিয়ে গিয়েছিলাম।
সেই সামর্থ্য আল্লাহ আমাকে দিয়েছেন। কিন্তু আমি ভেবেছি, ওই
মানুষটির কথা, যে আরও অনেক জটিল রোগে আক্রান্ত হয়েও প্রাপ্য
চিকিৎসা পাচ্ছে না। আমি ভেবেছি সেই ছেলে-মেয়েদের কথা, যারা
প্রতিভাবান হয়েও মফস্বল থেকে উচ্চশিক্ষার দুয়ার পর্যন্ত যেতে পারছে না।
ভেবেছি খেটে খাওয়া সেই মানুষদের কথা, যারা দিন-রাত পরিশ্রম করেও
প্রাপ্যটুকু অনেক সময় পাচ্ছে না। আমি বিশ্বাস করি, বাংলাদেশের সব
সচেতন, যোগ্য ও ভালো মানুষের রাজনীতিতে আসা উচিত। অনেকেই
হয়তো সাহস করে উঠতে পারেন না নানা কারণে, মানসিক সীমাবদ্ধতায়।
আমার মনে হয়েছে, মানসিক বাধার সেই দেয়াল ভাঙা জরুরি। তাই ভেতরের
তাগিদ পূরণের উদ্যোগটা আমিই নিলাম। ক্রিকেটের মাঠে দেড় যুগ ধরে
তিল তিল করে গড়ে ওঠা মাশরাফির অবস্থান হয়তো আজ অনেকের কাছে
প্রশ্নবিদ্ধ হয়েছে রাজনীতির মাঠে নামার কারণে। কিন্তু আমি নিজে
সত্যিকার অর্থেই রোমাঞ্চিত নতুন কিছুর সম্ভাবনায়। আমি আশা করি
এমন কিছু করতে পারব, যা দেখে ভবিষ্যতে হাজারও মাশরাফি এগিয়ে আসবে
ইনশাল্লাহ। আমি আবারও বলছি, কোনো ব্যক্তি বা দলকে আঘাত করার ইচ্ছে
আমার নেই। কেবল সময়ের দাবি মেটানোর চেষ্টা করছি মাত্র। আশা করি,
আপনাদের ভালোবাসা আমাকে এই ইনিংসেও সামনে এগিয়ে নিয়ে যাবে।
আপনাদের সমর্থন ও দোয়ায় সিক্ত হতে চাই।# ছবি সংযুক্ত
খবর৭১/জিঃ