মুকুরুল ইসলাম মিন্টু চৌগাছা (যশোর): যশোরের চৌগাছার বিস্তৃর্ণ মাঠে চলতি মৌসুমে ইরি ধানের ব্যাপক চাষ হয়েছে। গত বছরের চেয়ে চলতি মৌসুমে প্রায় চার হাজার হেক্টর বেশি জমিতে ইরি ধানের চাষ করা হয়েছে। উপজেলার প্রতিটি গ্রামে মাঠে যেয়ে যে দিকে চোখ যায় সেদিকেই জমিতে দোলা খাচ্ছে সোনালী ধানের শীষ। বর্তমান সময়ে কৃষকের ইরি ধান যেন প্রকৃতিকে অন্যভাবে পরিচিত করে তুলেছে। কিন্তু হঠাৎ করে আবহাওয়া পরিবর্তন, বইছে ঝড়ো হাওয়া, ফোটা ফোটা বৃষ্টিও পড়ছে। এমন আবহাওয়ায় কৃষক মহা দুঃশ্চিতার মধ্যে দিন পার করছেন। আর মাত্র দুই থেকে তিন সপ্তাহের মধ্যে কৃষকের ধান ঘরে উঠবে এমন অবস্থায় আবহাওয়ায় পরিবর্তন ঘটেছে তাই কৃষকের চোখে যেন ঘুম নেই।
সূত্র জানায়, চলতি ইরি বোরো মৌসুমে উপজেলায় অতীতের সকল রেকর্ড ভঙ্গ করে কৃষক ইরি ধানের চাষ করেছেন। গত দুই বছরে ধানের বাজারদর তুলনা মুলক ভাল থাকায় ধান চাষ বৃদ্ধি পেয়েছে বলে জানা গেছে। এ ছাড়া চলতি মৌসুমে রবি শষ্য বৈরী আবহাওয়ার করনে জমিতেই নষ্ট হয়ে গেছে, পাশাপাশি মশুর ও গমের চাষ আশংকাজনক ভাবে কমে যাওয়াতে ইরি ধানের চাষের দিকে কৃষক ঝুকে পড়েছেন। আর মাত্র দুই থেকে তিন সপ্তাহ পর ধান পাকা শুরু হবে। প্রতিটি জমিতে ধানের শীষ বের হয়েছে, চৈত্রের হাওয়াতে ধানের শীষ একটি আর একটি উপর দোলা খাচ্ছে, এ যেন এক অপরুপ সৌন্দর্য বহন করে প্রকৃতিকে নতুন ভাবে রাঙিয়ে তুলেছে। আজ থেকে তিন দিন আগেও উপজেলা জুড়ে রৌদ্রজ্জল আবহাওয়া বিরাজমান ছিল। চৈত্রের কাঠ ফাটা রোদেও কৃষকের মুখে ছিল স্বস্তির হাসি। কিন্ত হঠাৎ করে আবহাওয়া পরিবর্তন, সারা আকাশ মেঘে ঢাকা, ফোটা ফোটা বৃষ্টিও পড়ছে এর সাথে বইছে ঝড়ো হাওয়া। বৈরী আবহাওয়া যেন কৃষকের মুখের হাসি কেড়ে নিয়েছে। উপজেলার শতশত কৃষক এখন নির্ঘূম রাত কাটাচ্ছে। তাদের পরিশ্রমের ফল ঘরে না আসা পর্যন্ত তাদের চোখে যেন ঘুম নেই এমনটিই জানা গেছে কৃষকের সাথে কথা বলে। উপজেলা কৃষি অফিস সূত্রে জানা গেছে, চলতি ইরি-বোরো মৌসুমে উপজেলায় মোট ১৮ হাজার ৫শ হেক্টর জমিতে ইরিধানের চাষ করা হয়েছে। যা গত বছরের তুলনায় প্রায় ৪ হাজার হেক্টর বেশি। গত বছর চাষ হয়েছিল ১৪ হাজার ৭শ হেক্টর জমিতে। মাটির গুনাগুন ও এলাকা বিশেষ বিভিন্ন জাতের ধানের চাষ করা হয়েছে। তবে ব্রি ২৮, ব্রি ৫০, ব্রি-৫৮, ব্রি ৬৩, কাজল লতা, সুভল লতা, মিনিকেট, বাসমতি, সিনজেনটা ১২০৩ ও তেজগোল্ড জাতের ধানের চাষ তুলনা মুলক বেশি হয়েছে। উপজেলার জগদীশপুর, ফুলসারা, পাশাপোল, স্বরুপদাহ, সুখপুকুরিয়া, ধুলিয়ানী ইউনিয়নে ইরি ধানের চাষ বরাবরই বেশি হলেও চলতি বছরে প্রতিটি ইউনিয়নেই চাষ হয়েছে ধানের। গতকাল উপজেলার আড়পাড়া, দক্ষিন সাগর, মাড়–য়া, সাদিপুর, পুড়াহুদা, ইছাপুর গ্রামের মাঠে গেলে দেখা যায় প্রায় ধান ক্ষেত সোনালী আকার ধারন করেছে। ধান ক্ষেত পরিচর্জার প্রায় শেষ সময়ে এসে কৃষকের কর্ম ব্যস্ততা অনেকটাই কমে গেছে। এ সময় কথা হয় কৃষক আশানুর রহমানের সাথে। তিনি বলেন, ১ বিঘা জমি কোন কৃষক যদি লিজ বা বর্গা নিয়ে চাষ করেন তাহলে ওই কৃষকের ১৫ থেকে ১৭ হাজার টাকা ব্যয় হয়। তবে খরচ যাই হোক সুন্দর ভাবে যদি ধান ঘরে তুলতে পারি তখনই আমাদের এই কষ্ট লাঘব হয়। আর যদি আবহাওয়া অনুকুলে না থাকে তখন কষ্টের কোন শেষ নেই। তিনি বলেন, অনেক চাষি আছে সুদে মহাজন, এনজিও কিংবা ধার দেনা হয়ে এক বিঘা ইরি ধান লাগিয়েছে। সেই ধান যদি ভালো ভাবে ঘরে তুলতে না পারে তখন ওই চাষির পরিনতি কি হবে একটু ভেবে দেখুন। গত ২/৩ দিন ধরে আবাহাওয়া পরিবর্তন হয়েছে। কখনও কখনও ঝড়ো হাওয়া বয়ে যাচ্ছে, সব শেষ কি হয় সেই চিন্তায় কৃষক ব্যাকুল। ইতোমধ্যে দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে শিলা বৃষ্টিতে চাষির সব শেষ হয়ে গেছে। তবে আবহাওয়া অনুকুলে থাকলে ও বাজারদর যদি ভাল হয় তাহলে কৃষকের মুখে তখন হাসি ফুটবে। উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা রইচউদ্দিন জানান, চলতি মৌসুমে উপজেলায় লক্ষমাত্রার চেয়ে অনেক বেশি জমিতে ইরি ধানের চাষ হয়েছে। আবহাওয়া ভাল থাকলে ইরি চাষে কৃষক লাভবান হবেন বলে তিনি মনে করেন।
খবর ৭১/ ই: