নারীর সঙ্গে এ কেমন বর্বরতা

0
353

খবর ৭১:ময়মনসিংহের গৌরীপুরে স্বামীর সঙ্গে পরকীয়া সন্দেহে এক নারীর শরীরের বিভিন্ন অংশ কেটে মরিচের গুড়া লাগানো হয়েছে। পরে মুখে চুনকালি মেখে এবং গলায় জুতা বেঁধে প্রকাশ্যে নির্যাতনের করার অভিযোগ উঠেছে।

শনিবার নির্যাতনের শিকার ওই গৃহবধূকে ময়মনসিংহ মেডিকেল হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। অভিযুক্ত নির্যাতনকারী নারী নাছিমা আক্তার ও তার মা হাবিলা খাতুনকে রোববার গ্রেফতার করেছে পুলিশ। এছাড়া এ ঘটনায় জড়িত থাকার অভিযোগে তিনজনকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়েছে।

এদিকে ফেসবুকে নির্যাতনের ও ভিডিওচিত্র প্রকাশের পর এলাকাবাসী ও বিভিন্ন মহলে নিন্দার ঝড় বইছে। জড়িতদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবিতে এলাকাবাসী বিক্ষোভ মিছিল করেছে।

নারী উন্নয়ন ফোরামের সভাপতি ও উপজেলা পরিষদের মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান রাবেয়া ইসলাম ডলি ঘটনাস্থল পরিদর্শন শেষে সাংবাদিকদের জানান, এ ঘটনা মধ্যযুগীয় বর্বতাকেও হার মানিয়েছে।

এলাকাবাসী জানায়, পৌর শহরের ইসলামাবাদের সোলায়মান মিয়ার স্ত্রী সেলিনা বেগম গৃহপরিচালিকার কাজ করেন।

একই এলাকার শহীদ মিয়ার স্ত্রী নাছিমা আক্তার ওরফে টুক্কুনির অভিযোগ, তার স্বামীর সঙ্গে সেলিনার পরকীয়ার সম্পর্ক রয়েছে। এ অভিযোগ এনে শুক্রবার সেলিনার বাড়িতে গিয়ে নাছিমা আক্তার হুমকিসহ অকথ্য ভাষায় গালিগালাজ করেন।

এ ঘটনার প্রেক্ষিতে বিচার চেয়ে শহীদকে ঘটনাটি জানান সেলিনা। এতে নাছিমা আরো ক্ষিপ্ত হয়ে শনিবার এক বাসা থেকে ধরে এনে নির্যাতন চালায়। নাছিমার সঙ্গে তাল মিলিয়ে নির্যাতন অংশ নেয় নাছিমার মা হাবিলা খাতুন ও বোন স্মৃতি আক্তার।

নির্যাতিতার পরিবার জানায় , বেলা ১১টায় সেলিনাকে ধরে নিয়ে বিবস্ত্র করে ফেলে। সেলিনাকে রক্ষা করতে অনেকে এগিয়ে গেলেও তারা ব্যর্থ হয়েছেন। বিকাল ৪টা পর্যন্ত ঘরে আটকে রেখে লাঠি পেটা, শরীরের বিভিন্ন অংশে কামড়, ও ব্লেড দিয়ে ক্ষতবিক্ষত করা হয়। এর পর ক্ষতস্থানে মরিচ গুড়ো ও লবণ মিশিয়ে লাগানো হয়। পরে সেলিনার মাথার চুল কেটে দেয়া হয়। তারপর মুখে চুনকালি মেখে ও জুতার মালা পড়িয়ে লাঠিপেটা করতে করতে রাস্তায় বের করে আনা হয়। এর পর ইসলামাবাদ সড়কে তাকে লাঠিপেটা করতে করতে ঘুরানো হয়। ওই সময় নির্যাতন থেকে রক্ষা পেতে অনেকের পা ধরেন সেলিনা। কিন্তু নাছিমার রোষানল থেকে কেউ রক্ষা করতে পারেনি নির্যাতিত এ নারীকে।

বিকাল ৫টার দিকে সেলিনাকে বাড়িতে দিয়ে যায় নাছিমা ও তার লোকজন। এরপর সেলিনাকে গৌরীপুর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নেয়া হয়। অবস্থা গুরুতর হওয়ায় তাকে ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি পাঠানো হয়।

এদিকে নির্যাতনের ঘটনা সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে ছড়িয়ে পড়ায় রোববার সকাল ১১টার দিকে পুলিশ ঘটনাস্থলে অভিযান চালায়। পুলিশ ঘটনাস্থল থেকে নির্যাতনের মূল হোতা নাছিমা আক্তার, মা হাবিলা খাতুন ও নাছিমার মেয়ে স্বর্ণাকে আটক করে থানায় নিয়ে যায়।

পরে ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেন উপজেলা পরিষদের ভাইস চেয়ারম্যান রাবেয়া ইসলাম ডলি ও গৌরীপুর সার্কেলের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার সাখের হোসেন সিদ্দিকী।

এদিকে নির্যাতনকারীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবিতে এলাকাবাসী বিক্ষোভ মিছিল করে উপজেলা নির্বাহী অফিসারের কার্যালয় ঘেরাও করেন। ইউএনও অফিসে না থাকায় ভাইস চেয়ারম্যান রাবেয়া ইসলাম ডলি তাদেরকে আইনি সহযোগিতা ও দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির আশ্বাস দেন।

গৌরীপুর থানার ওসি দেলোয়ার আহম্মদ জানান, এ ঘটনায় নির্যাতিত নারীর স্বামী সোলায়মান মিয়া বাদী হয়ে মামলা দায়ের করেছেন। নাছিমা আক্তার ও তার মা হাবিলা খাতুনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। নাছিমার মেয়ে স্বর্ণা ছোট থাকায় ও মামলার এজাহারভুক্ত না থাকায় থাকে ছেড়ে দেয়া হয়েছে।
খবর ৭১/ এস:

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here