তুরস্কস্থ পারমাণবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্র বাংলাদেশ থেকে ১৫২২ জন দক্ষ কর্মী নিচ্ছে

0
87
পারমানবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্র পরিদর্শনকালে তুরস্কে নিযুক্ত বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত মোঃ আমানুল হক(বাম থেকে দ্বিতীয়)

খবর ৭১ ডেস্ক: তুরস্কে নিযুক্ত বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত মোঃ আমানুল হক গত ২৭শে ডিসেম্বর তুরস্কের নির্মানাধীন আকুইউ পারমানবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্র পরিদর্শন করেন। এটা নির্মান করছে রাশিয়ার অন্যতম স্বনামধন্য হোল্ডিং কোম্পানী টিটান-২ এর সিস্টার কোম্পানী টিএসএম।

টিএসএম এনার্জি তুরস্কের একটি স্বনামধন্য নির্মান কোম্পানি যাদের নির্মানে প্রতিষ্ঠিত হবে তুরস্কের দশ ভাগ বিদ্যুতের চাহিদা পূরণকারী পারমাণবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্র। বর্তমানে এই কোম্পানিটি আদানা এলাকার মার্সিন শহরের নিকটে ভূমধ্যসাগর তীরবর্তী আকুইউ নামক স্থানে পারমাণবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্রসহ, মিশর, হাংগেরি ও রাশিয়ায় নির্মাণ কাজে নিয়োজিত আছে। টিএসএম এই পারমাণবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্রের নির্মাণ কর্মী হিসেবে বিভিন্ন পেশায় বাংলাদেশ থেকে ১৫২২ জন দক্ষ জনশক্তি বাছাই, আমদানি ও নিয়োগকৃত কর্মীদের ব্যবস্থাপনা, শৃংখলা ও কল্যান নিশ্চিতের জন্য টিএসএম এনার্জি এবং দুবাইয়ের নির্মাণ কোম্পানি ‘নুর-আত্ব-তিন বিল্ডিং কনস্ট্রাক্টিং এলএলসি’
এর মাঝে গত ২৫ অক্টোবর দীর্ঘ মেয়াদী এক চুক্তি সম্পাদিত হয় এবং ১৫২২ জন বিভিন্ন ক্যটাগরীতে দক্ষ কর্মী যোগান কার্যাদেশ নূর আত্ব-তীনকে দেয়া হয়।

টিএসএম-এর প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা জেনারেল ডিরেক্টর জনাব ইয়েভগনী ইয়াতচেংকো পরিদর্শনকালে মাননীয় রাষ্ট্রদূতকে অভ্যর্থনা জানান এবং পারমানবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্র সম্পর্কে রাষ্ট্রদূতকে বিস্তারিতভাবে অবহিত করেন। প্রধান নির্বাহী বলেন যে বাংলাদেশে রূপপুর পারমানবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্র সম্পর্কে তিনি সম্পূর্নভাবে অবহিত আছেন, কারন টিএসএম রোসাটমের সাথে ওতপ্রোতভাবে কাজ করে এবং আকুইউ পারমানবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্রও রোসাটমের একটি প্রকল্প। তিনি এটাও জানেন যে বাংলাদেশে প্রচুর দক্ষ জনশক্তি আছে এবং রূপপুরে তারা তাদের দক্ষতা অত্যন্ত সাফল্যের সাথে প্রমান করেছেন। প্রধান নির্বাহী নুর আত্ব তীনের কর্মী যোগান ও ব্যবস্থাপনার ভূয়সী প্রশংসা করেন এবং তারই ধারাবাহিকতা হিসেবে তুরস্কের ১৫২২ দক্ষ কর্মীর পর টিটান-২ রাশিয়ার লেনিনগ্রাদের সসনভি বোর ও নভোসিবিরস্ক এলাকায়ও নির্মানাধীন পারমানবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্রের নির্মান কাজের জন্য ১১৬০ জন দক্ষ জনশক্তি বাংলাদেশ হতে রাশিয়ায় রপ্তানীর জন্য মাননীয় রাষ্ট্রদূতের উপস্থিতিতে রাশিয়ার টিটান-২ এবং নুর-আত্ব-তিন বিল্ডিং কন্সট্রাক্টিং এলএলসির মধ্যে আরও একটি চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়। এই চুক্তির ফলে রাশিয়াতে বাংলাদেশী দক্ষ কর্মী রপ্তানির ক্ষেত্রে এক নব দিগন্ত সূচিত হবে।

পরিদর্শনকালে বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত মহোদয় পারমাণবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্রে বাংলাদেশ থেকে তুরস্কে দক্ষ জনশক্তি রপ্তানি বিষয়টির ভূয়সী প্রশংসা করেন। তিনি বলেন যে, বাংলাদেশের জনশক্তি কর্মঠ, নিয়মানুবর্তী এবং কাজের প্রতি অত্যন্ত যত্নশীল।


টিএসএমএর নিজস্ব প্রশিক্ষক এবং নির্বাচক বাংলাদেশে অবস্থান করে, তাদের নিজস্ব কারিকুলাম অনুযায়ী ব্যবাহারিক ও মৌখিক পরীক্ষার মাধ্যমে ইতোমধ্যে সহস্রাধিক কর্মী নির্বাচন করেছেন। রাষ্ট্রদূত কর্মীদের বাসস্থান, খাবার ও বিনোদনের ব্যবস্থাগুলো পর্যবেক্ষণ করেন,আগত কর্মীদের জন্য প্রতিটি শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত কক্ষে চারজনের আবাসনের ব্যবস্থা, প্রশস্থ মসজিদ, পরিস্কার সুবিশাল ক্যাফেটেরিয়া, সুপার শপ, ফ্রি লন্ড্রীসহ কর্মীদের কল্যানের জন্য বিভিন্ন সুবিধাসহ সুবিশাল পরিপাটি আয়োজন দেখে মান্যবর রাষ্ট্রদূত গভীর সন্তোষ প্রকাশ করেন।

রাষ্ট্রদূত মহোদয় যোগদান পরবর্তী তুরস্কের সাথে দ্বিপাক্ষিক ব্যবসায়িক সম্পর্ক উন্নয়নের ব্যাপারে সচেষ্ট থেকে কাজ করে যাচ্ছেন। দেশের বর্তমান পরিস্থিতিতে ব্যবসা-বানিজ্যের প্রসারতার ক্ষেত্রে তুরস্কে জনশক্তি রপ্তানির বিষয়কে তিনি খুবই ইতিবাচক ও গুরুত্বপূর্ণ বলে বিবেচনা করেন। তুরস্কে জনশক্তি রপ্তানির বিষয়ে দুবাইয়ের স্বনামধন্য নির্মাণ কোম্পানি ‘নূর-আত্ব-তিন বিল্ডিং কনস্ট্রাক্টিং এলএলসি’ গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করায় তাদেরকে ধন্যবাদ জানান। নুর-আত্ব-তিন ইতোমধ্যে তাদের উদ্ভাবিত ‘মাইগ্রেশন গভার্নেন্স ইকো সিস্টেম (এম জি ই এস)’ নামক সফটওয়্যার ও প্রযুক্তিগত সহায়তাসহ বাংলাদেশের বিভিন্ন রিক্রুটিং এজেন্সির মাধ্যমে দক্ষ জনশক্তি নির্বাচন ও রপ্তানির প্রক্রিয়া বেগবান করার মাধ্যমে সফলতার পরিচয় দিয়েছে বলে উল্লেখ করেন টিএসএম এনার্জি’র প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা।

দিনশেষে মাননীয় রাষ্ট্রদূত মোঃ আমানুল হকের সম্মানে টিএসএম-এর প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা জনাব ইয়েভগনী ইয়াতচেংকো এক নৈশভোজের আয়োজন করেন। সেখানে মাননীয় রাষ্ট্রদূত আবারো তাকে বাংলাদেশ থেকে দক্ষ কর্মী আমদানী করার জন্য ধন্যবাদ জানান এবং বলেন যে, তিনি তুরস্কের অন্যান্য স্থানে এই সন্ধিক্ষণকে অনুকরনীয় দৃষ্টান্ত হিসেবে উপস্থাপন করবেন। নুর-আত্ব-তিন’এর এই মহৎ উদ্যোগ ও প্রচেষ্টার ফলে তুরস্কে বাংলাদেশের দক্ষ জনশক্তি রপ্তানির ক্ষেত্রে এক নতুন দিগন্ত উন্মোচন করবে বলে রাষ্ট্রদূত মোঃ আমানুল হক আশাবাদ ব্যক্ত করেন।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here