সৈয়দপুরে হঠাৎ চিনির মূল্য বৃদ্ধি : সপ্তাহের ব্যবধানে কেজিতে বেড়েছে ১০ টাকা

0
124

মিজানুর রহমান মিলন, সৈয়দপুর :
সৈয়দপুরসহ আশেপাশের বাজারগুলোতে হঠাৎ চিনির দাম বেড়েছে। ঈদের আগে দাম মোটামুটি নিয়ন্ত্রনে থাকলেও ঈদের পর আস্তে আস্তে দাম বাড়তে থাকে ওই পণ্যটির। তবে গত বৃহস্পতিবার থেকে একলাফে পাইকারি হিসেবে কেজি প্রতি চিনির দাম বেড়েছে ১০ থেকে ১৪ টাকা। মূল্য বৃদ্ধির এ প্রভাব পড়েছে খুচরা বাজারে। এখানে প্রতি কেজিতে বেড়েছে ১২ থেকে ১৫ টাকা। ফলে মূল্যবৃদ্ধির কারণে চিনি সংশ্লিষ্ট খাদ্যপণ্য ও হোটেল রেঁস্তোরায় চায়ের দাম বেড়েছে। এ অবস্থায় ভোক্তাদের কাছে চিনির স্বাদ তেঁতো হয়ে উঠেছে।
সুত্র জানায়, ঈদের আগে ১১৮/১২০ টাকার খোলা চিনি গতকাল খুচরা বাজারে ১৩০ থেকে ১৩২ টাকায় বিক্রি হতে দেখা গেছে। পাড়া মহল্লার দোকানগুলোতে বিক্রি হচ্ছে ১৪০ থেকে ১৪৫ টাকা কেজিতে।

পাইকারি ব্যবসায়ীরা জানান, একদিকে যেমন আমদানি বন্ধ রয়েছে তেমনি মিল থেকে চাহিদামত চিনি না মেলায় এবং পরিবহন খরচ বেড়ে যাওয়ায বাজারে চিনির দাম হু-হু করে বাড়ছে। ফলে খুচরা বাজারেও সেই প্রভাব পড়েছে দ্রুত। মিল থেকে চিনির সরবরাহ স্বাভাবিক না হলে চিনির দাম আরও বাড়বে বলে আশঙ্কা করছেন ব্যবসায়ীরা। ভোক্তা সাধারন মনে করেন সরকার চিনির দাম নিয়ন্ত্রণে এখনই যদি উদ্যোগ না নেন তাহলে চিনির বাজার ভয়াবহ হয়ে উঠতে পারে। শহরের হাসিম স্টোরের মালিক মুন্না বলেন, হু হু করে চিনির দাম বাড়তে থাকায় ক্রেতাদের সাথে প্রায়ই তাদের বাক বিতন্ডা হচ্ছে। ফলে তারা পড়ছেন চরম বিব্রতকর অবস্থায়। তিনি বলেন পাইকারি বাজারে দাম কমলে খুচরা বাজারেও দাম কমবে চিনির। সুত্র জানায়, সৈয়দপুরের বাজারে ৮/১০ জন চিনির পাইকারি ব্যবসায়ী রয়েছেন। ওইসব ব্যবসায়ীর কাছ থেকে সৈয়দপুর ছাড়াও আশেপাশের বিভিন্ন জেলা উপজেলার ব্যবসায়ীরা তাদের চাহিদামত চিনি নিয়ে থাকেন। রবিবার সকালে সৈয়দপুরের পাইকারি বাজার ও খুচরা বাজার ঘুরে দেখা গেছে, শহীদ ডা. জিকরুল হক সড়ক ও শহীদ জহুরুল হক সড়কের পাইকারি দোকানে প্রতিবস্তা (৫০ কেজি) চিনি বিক্রি হচ্ছে ছয় হাজার ৪০০ থেকে ছয় হাজার ৫০০ টাকায়, প্রতিকেজি ১২৮ থেকে ১৩০ টাকায়। অথচ ঈদের আগেও ছিল পাঁচ হাজার ৯০০ টাকা বস্তা। প্রতিকেজি ১১৮ টাকা। সে হিসেবে মাত্র ১০ দিনের ব্যবধানে চিনির দাম বস্তায় বেড়েছে ৫০০ থেকে ৬০০ টাকা এবং কেজিতে বেড়েছে ৮ থেকে ১০ টাকা। আর খুচরা পর্যায়ে প্রতি কেজি চিনি বিক্রি হচ্ছে ১৩২ থেকে ১৩৫ টাকায়। যা গত দশ দিন আগে ছিল ১২০/১২২ টাকা। তবে পাড়া মহল্লার দোকানগুলোতে সেই চিনি বিক্রি হচ্ছে ১৪০/১৪৫ টাকা কেজি দরে। এ বিষয়ে সৈয়দপুরে চিনির পাইকারি ব্যবসা প্রতিষ্ঠান মেসার্স নুর ট্রেডার্স এর মালিক মো. নুর ইসলাম বলেন, আমরা মিল থেকে চাহিদা মত চিনি না মেলায় এবং পরিবহন খরচ বেশী হওয়ায় বাড়তি দামে চিনি বিক্রি করতে হচ্ছে। সরবরাহ স্বাভাবিক হলে কমতে পারে এর দাম। তিনি বলেন, বাজার স্বাভাবিক রাখতে চিনির ওপর ভ্যাট ও শুল্ক কমিয়ে পর্যাপ্ত আমদানির ওপর গুরুত্ব দিতে হবে সরকারকে।

শহীদ ডা. জিকরুল হক সড়কের খুচরা চিনি ব্যবসায়ী মো. আয়ান বলেন, আজকে ছয় হাজার ৫০০ টাকায় ৫০ কেজির এক বস্তা চিনি এনেছি। এতে কেনা দাম পড়েছে কেজিপ্রতি ১৩০ টাকা। এর সঙ্গে পরিবহন খরচ, লেবার খরচ, দোকান ভাড়া, ইলেকট্রিক বিল মিলিয়ে ১৩৫/১৩৬ টাকায় বিক্রি না করলে কোনো লাভ হবে না ।
এদিকে চিনির মূল্য বৃদ্ধির কারণে চিনি সংশ্লিষ্ট খাদ্য পণ্য ও হোটেল রেঁস্তোরায় চায়ের মূল্য বাড়িয়েছে প্রতিষ্ঠান মালিকরা।
হোটেলগুলোতে প্রকার ভেদে কেজি প্রতি বিভিন্ন মিস্টান্নের দাম বেড়েছে ২০ থেকে ৫০ টাকা। সহসা যদি চিনির মূল্য কমে না আসে তাহলে বেকারি শিল্পের উৎপাদিত খাদ্যেরও দাম বাড়ানো ছাড়া কোন উপায় থাকবে না।

এমন তথ্য জানিয়েছেন শহরের গাউসিয়া কনফেকশনারীর মালিক হাজী আওরঙ্গজেব। জানতে চাইলে শহরের জিআরপি ক্যান্টিনের মালিক আকতার হোসেন বলেন, এমনিতে চা পাতার মূল্য বৃদ্ধির কারণে হোটেলে চা বিক্রিতে ক্ষতি হচ্ছে। তার ওপর চিনির মূল্য বৃদ্ধি পাওয়ায় তারা পড়েছেন চরম সমস্যায়। ফলে বাধ্য হয়ে চায়ের দাম বাড়ানো হয়েছে।
মূল্য বৃদ্ধির এমন অবস্থা দেখা গেছে শহর ও গ্রামের বিভিন্ন হাট বাজারের হোটেল ও রেঁস্তোরাতেও।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here