চার কারণে ভয়াবহ রূপে বন্যা

0
226

খবর৭১ঃ
দেশের উত্তর-পূর্বাঞ্চলে চলমান বন্যা ভয়াবহ রূপ লাভ করেছে চার কারণে। ২০০ বছরের মধ্যে রেকর্ডভাঙা বৃষ্টি হয়েছে এবারে আপার মেঘনা ও বরাক অববাহিকায়। ওই পানি ধারণের মতো অবস্থা নেই হাওড়ে। ৩২ বছরে এ অঞ্চলের সাত জেলার হাওড়ে জলাভূমি কমেছে শতকরা ৮০ ভাগের বেশি। এছাড়া হাওড়ে বেড়েছে ঘরবাড়িসহ বিভিন্ন ধরনের স্থাপনা। এতে নির্মিত রাস্তাঘাট, স্লুইসগেট এবং বাঁধও বাধা দিচ্ছে বানের পানি প্রবাহে। কমে গেছে এ অঞ্চলের নদীর নাব্যতা। এ কারণে স্মরণকালের মহাদুর্ভোগে পরিণত হয়েছে মৌসুমি বন্যা।

ইনস্টিটিউট ফর প্ল্যানিং অ্যান্ড ডেভেলপমেন্টের (আইপিডি) গবেষণা ও বিশেষজ্ঞদের সঙ্গে আলাপে এ তথ্য জানা গেছে। এদিকে দেশের উত্তর-পূর্বাঞ্চল এবং উত্তরাঞ্চলে চলমান এই বন্যা ৫ দিনের মধ্যে পুরোপুরি কেটে যেতে পারে। মূলত দেশের সিলেট অঞ্চল এবং ভারতের মেঘালয় ও আসামে আগামী ৭ দিন ভারি বৃষ্টির আশঙ্কা নেই। এর ফলে উজান বা অভ্যন্তরীণ উৎস থেকে বড় পরিমাণে নতুন পানি যুক্ত হওয়ার আশঙ্কা কম।

এ মুহূর্তে সিলেট-সুনামগঞ্জ-নেত্রকোনায় যে ৫টি নদীর পানি বিপৎসীমার ওপরে আছে সেগুলোর মধ্যে কুশিয়ারা অমলশীদ পয়েন্টে সবচেয়ে উচ্চতায় ৬৭ সেন্টিমিটার ওপরে প্রবাহিত হচ্ছে। ওই পয়েন্টে ২৪ ঘণ্টায় ১৫ সেমি. পানি কমেছে। এই হারে পানি নেমে গেলে ৫ দিনে বন্যামুক্ত হবে ওই এলাকা। এর ফলে ওই এলাকার মানুষ ঈদের আগে বন্যামুক্ত হতে পারেন। বন্যা পূর্বাভাস ও সতর্কীকরণ কেন্দ্রের (এফএফডব্লিউসি) দুই সপ্তাহের এক দীর্ঘমেয়াদি পূর্বাভাসেও এ তথ্য পাওয়া গেছে।

বুয়েটের পানি ও বন্যা ব্যবস্থাপনা ইনস্টিটিউটের অধ্যাপক ড. একেএম সাইফুল ইসলাম যুগান্তরকে বলেন, ৭ দিনে তেমন বৃষ্টির আশঙ্কা নেই সিলেট, মেঘালয়সহ বরাক অববাহিকায়। ৭ দিন যে ২০০ মিলিমিটারের মতো বৃষ্টির পূর্বাভাস দেখা যাচ্ছে, তাতে এক সপ্তাহে পানি নেমে যাওয়ার পর এ পরিমাণ বৃষ্টি নতুন করে বন্যা সৃষ্টি করবে বলে মনে হচ্ছে না। তবে বানের পানি যেভাবে ধীরগতিতে নামছে, সেটি একটি দুশ্চিন্তার প্রধান কারণ। তবু আগামী দুই সপ্তাহ সিলেট নতুন কোনো বন্যায় ভুগবে বলে মনে হচ্ছে না।

এবারের এ বন্যার প্রথম কারণ দেশের ভেতরে আর ভারতের পূর্বাঞ্চলীয় বিভিন্ন রাজ্যে অতিভারি বৃষ্টি। এবার মেঘালয়-আসামসহ বরাক অববাহিকায় ২০০ বছরের রেকর্ডভাঙা বৃষ্টি হয়। মেঘালয়ের চেরাপুঞ্জিকে পৃথিবীর শীতলতম স্থান বলা হলেও ১৭ জুন ওই রাজ্যেরই মাওসিনরামে ২৪ ঘণ্টায় ১০০৩ মিলিমিটার বৃষ্টি হয়। একই দিন চেরাপুঞ্জিতে বৃষ্টি হয়েছে ৯৭২ মিলিমিটার। অন্যদিকে এফএফডব্লিউসির ১৭ জুনের এক হিসাবে দেখা যায়, সিলেটে জুনের স্বাভাবিক বৃষ্টির পরিমাণ ৮৪২ মিলিমিটার। কিন্তু ১৭ দিনেই ১০২২ মিলিমিটার হয়ে গেছে। আবার সুনামগঞ্জে জুনে গড় বৃষ্টি ১০৪৫ মিলিমিটার হলেও ১৭ জুনের মধ্যে ১৬০৩ মিলিমিটার বৃষ্টি হয়েছে। এই বৃষ্টি পরে গত মাসের শেষ সপ্তাহ পর্যন্ত কমবেশি অব্যাহত ছিল।

আইপিডির গবেষণা বলছে, ১৯৮৮ সালে হাওড়ে যে পরিমাণ জলাভূমি ছিল, ২০২০ সালে সেখান থেকে প্রায় ৭৭ শতাংশ কমে গেছে। এর মধ্যে ২০০৬ সালের মধ্যে কমে যায় ৪০ ভাগ, আর ২০২০ সালের মধ্যে আরও ৩৭ ভাগ।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here