পাইলট মেহেদীর লাইসেন্স জাল

0
233

খবর৭১ঃ বাংলাদেশ বিমানে নিয়োগপ্রাপ্ত ১৪ পাইলটের মধ্যে ক্যাপ্টেন মেহেদী আল ইসলামের এটিপিএল (এয়ারলাইন ট্রান্সপোর্ট পাইলট লাইসেন্স) সনদ জাল। তিনি বেসামরিক বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষের (বেবিচক) সংশ্লিষ্ট শাখার কর্মকর্তাদের স্বাক্ষর জাল করে সনদটি তৈরি করেছেন। এটি জমা দিয়ে মেহেদী বিমানে যোগদান করেছেন বলে প্রমাণ পেয়েছে সিভিল এভিয়েশন কর্তৃপক্ষ। বেবিচকের অনুসন্ধানে এই চাঞ্চল্যকর তথ্য বেরিয়ে এসেছে। এ ঘটনায় মেহেদীর বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নিতে বিমানের ব্যবস্থাপনা পরিচালককে চিঠি দিয়েছে বেবিচক।

জানা যায়, নিয়োগপ্রাপ্ত অন্যদের অবস্থাও খুব ভালো নয়। অধিকাংশেরই বিমান চালানোর ভালো অভিজ্ঞতা, দক্ষতা ও যোগ্যতা নেই। ৮ জন পাইলটের মধ্যে ২ জনের বয়স ৬০ বছরের বেশি। ১৪ জনেরই বিরুদ্ধে বিভিন্ন এয়ারলাইন্সের ট্রেনিংয়ে ফেল, দুর্ঘটনা ঘটানো এবং চাকরিচ্যুত হওয়ার অভিজ্ঞতা আছে। নিয়োগকৃত এক পাইলট (ফার্স্ট অফিসার) জাতির পিতা বঙ্গবন্ধুর আত্মস্বীকৃত খুনি পরিবারের সদস্য। এসব ঘটনায় বিমানের কাছে ব্যাখ্যা চেয়েছে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়। বেসামরিক বিমান পরিবহণ ও পর্যটন মন্ত্রণালয় থেকেও বিমানের কাছে ব্যাখ্যা তলব করা হয়েছে। গঠন করা হয়েছে একটি উচ্চপর্যায়ের তদন্ত কমিটি।

বিমানের ব্যবস্থাপনা পরিচালক আবু সালেহ মোস্তফা কামাল যুগান্তরকে বলেন, দুটি বিষয়ই তিনি শুনেছেন। কিন্তু এখন পর্যন্ত সিভিল এভিয়েশনের লিখিত কোনো চিঠি পাননি। বেবিচকের চিঠি পাওয়ার পরই আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে সিভিল এভিয়েশনের ফ্লাইট সেফটি বিভাগের এক কনসালটেন্স যুগান্তরকে বলেন, বিমানের চিঠির পরিপ্রেক্ষিতে তারা দীর্ঘ তদন্ত করে ক্যাপ্টেন মেহেদী আল ইসলামের এটিপিএল সনদ আছে এমন কোনো প্রমাণ পাননি। তিনি বলেন, এটিপিএল সনদ সিভিল এভিয়েশনের ফ্লাইট সেফটি বিভাগ দিয়ে থাকে। মেহেদী যে লাইসেন্স জমা দিয়েছেন, সেটি তাদের দেওয়া সনদ নয়। লাইসেন্সে যে স্বাক্ষর আছে, সেটিও জাল-জালিয়াতির মাধ্যমে করা হয়েছে। ওই কর্মকর্তা আরও বলেন, এক সপ্তাহ আগে বিমানের এমডির কাছে তারা চিঠি পাঠিয়েছেন। অপরদিকে ক্যাপ্টেন রুবাব ও মাসফিকের বিরুদ্ধে সতর্কতামূলক ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য চিঠি দিলেও বিমান সেটি কার্যকর করেনি বলে তিনি জানান। বর্তমানে দুই পাইলট বিমানের ড্যাস-৮ কিউ মডেলের উড়োজাহাজ চালাচ্ছেন।

বেবিচকের অপর এক তদন্তে দেখা যায়, তাদের অনুমতি ছাড়া দুই ক্যাডেট পাইলটকে রুট ট্রেনিং করিয়েছে বিমান। দুই পাইলটরে নাম রুবাব হোসেন ও মাসফিক নিয়াজ। সাধারণত যাত্রী নিয়ে আকাশে উড়া কমার্শিয়াল ফ্লাইটে এই ট্রেনিং করানো হয়। বিশেষজ্ঞরা বলেছেন, বিমান এক্ষেত্রে বড় ধরনের ঝুঁকিপূর্ণ কাজ করেছে। অভিযোগ-বিমানের চিফ অব ট্রেনিং ক্যাপ্টেন সাজিদ আহমেদ দুটি ঘটনার জন্য দায়ী। এজন্য বেবিচক সংশ্লিষ্ট পাইলট ও চিফ অব ট্রেনিংয়ের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে বলেছে। কিন্তু বিমান কর্তৃপক্ষ এখন পর্যন্ত এসব ঘটনার কোনো তদন্ত পর্যন্ত করেনি।

জানা যায়, নিয়মনীতির তোয়াক্কা না করে ১৪ পাইলট নিয়োগ দিয়েছে বিমান। নিজদের খরচে সেই পাইলটদের থাইল্যান্ড থেকে ট্রেনিংও করিয়ে এনেছে। যদিও বিমানের ইতিহাসে চুক্তিভিত্তিক নিয়োগ করা পাইলটের ট্রেনিং নিজদের খরচে করার রেকর্ড নেই। এখানেও অভিযোগের আঙুল উঠেছে চিফ অব ট্রেনিং ক্যাপ্টেন সাজিদের বিরুদ্ধে। তিনি নিজের স্ত্রীকে বিমানের খরচে ট্রেনিং করানোর জন্য এই কাজটি করেছেন। ফাইলের যে অংশে নিজদের খরচে ট্রেনিংয়ের কথা বলা আছে, ক্যাপ্টেন সাজিদ ম্যানেজমেন্টের কাছ থেকে অনুমোদন নেওয়ার আগে সেটি ফেলে দিয়েছিলেন। বিমান ম্যানেজমেন্টের বেশির ভাগ পরিচালক নতুন হওয়ায় তারা বিষয়টি না জেনে ফাইল অনুমোদন করে দিয়েছেন। এই ক্ষেত্রে বিমানকে ৫ কোটি টাকার বেশি অর্থ গচ্চা দিতে হয়েছে। সাজিদের বিরুদ্ধে অভিযোগ তার স্ত্রীর (ক্যাপ্টেন সাদিয়া আহমেদ নাতাশা) সিমুলেটর ট্রেনিং চলাকালে তিনি ৩ দিনের অফিসিয়াল ছুটি নিয়ে ব্যাংকক গেছেন। সেখানে ৩ দিনের পরিবর্তে তিনি ৭ দিন অবস্থান করেন। অভিযোগ আছে, ব্যাংকক অবস্থানকালে তিনি নিজের স্ত্রীর সিমুলেটর ট্রেনিংয়ে সহযোগিতা করেছেন।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here