বাসা ভাড়ায় বৈষম্য হলে যাওয়া যাবে আদালতে, সংসদে বিল

0
350

খবর৭১ঃ

মানুষের সমান অধিকার ও মর্যাদা প্রতিষ্ঠায় বৈষম্য নিরোধে নতুন একটি আইন করার প্রস্তাব উঠেছে সংসদে। সংবিধানের ২৭, ২৮ ও ২৯ অনুচ্ছেদ অনুযায়ী, সব ধরনের বৈষম্য নিরোধে এই খসড়া আইন করা হয়েছে।

মঙ্গলবার আইনমন্ত্রী আনিসুল হক ‘বৈষম্য বিরোধী বিল-২০২২’ সংসদে উত্থাপন করেন। পরে সেটি ৩০ দিনের মধ্যে পরীক্ষা করে সংসদে প্রতিবেদন দেওয়ার জন্য আইন, বিচার ও সংসদ বিষয়ক মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটিতে পাঠানো হয়।

আইনমন্ত্রী বিলটি উত্থাপনের অনুমতি চাইলে বিএনপির সংসদ সদস্য হারুনুর রশীদ এতে আপত্তি দেন। তবে তার আপত্তি কণ্ঠভোটে নাকচ হয়ে যায়।

বিলে বলা হয়েছে, কোনো ব্যক্তি ধর্ম, বর্ণ, গোত্র জাতি, ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠী, ভাষা, বয়স, লিঙ্গ, শারীরিক, মানসিক বা তৃতীয় লিঙ্গ, জন্মস্থান, জন্ম, পেশা এবং অস্পৃশ্যতার অজুহাতে প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে নিচের কাজগুলো করলে তা বৈষম্যমূলক কাজ বলে গণ্য হবে:

১. সরকারি আধা-সরকারি, স্বায়ত্বশাসিত বা বেসরকারি অফিসের সেবা থেকে বঞ্চিত করা।

২. কোনো ব্যক্তি বা গোষ্ঠীর সর্বসাধারণের স্থলে প্রবেশ বা উপস্থিতিতে বাধা প্রদান, নিয়ন্ত্রণ অথবা সীমাবদ্ধতা আরোপ করা।

৩. কোনো পণ্য বা সেবা আইনানুগভাবে উৎপাদন, বিক্রি অথবা বিপণন করতে বাধা দেওয়া বা আইনে নির্ধারিত কোনো সুবিধা বা পণ্য বা সেবা গ্রহণে নিয়ন্ত্রণ ও সীমাবদ্ধতা আরোপ করা।

৪. প্রতিবন্ধী বা তৃতীয় লিঙ্গের হওয়ার কারণে কোনো শিশুকে পরিবারে প্রতিপালন না করে বিশেষ কোনো ব্যক্তি, গোষ্ঠী বা প্রতিষ্ঠানের কাছে হস্তান্তর করা বা প্রতিবন্ধিতার অজুহাতে পরিবারে বসবাসে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করা।

৫. উপযুক্ত কারণ ছাড়া বাবা-মায়ের পরিচয় দিতে অসমর্থতার কারণে কোনো শিশুকে ‍শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে ভর্তি করতে অস্বীকৃতি বা অমত বা প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি বা বাধা দেওয়া বা সমান সুযোগ-সুবিধা বা অবস্থানের ক্ষেত্রে পার্থক্য, বঞ্চনা, বিধি-নিষেধ আরোপ, সীমাবদ্ধকরণ, শারীরিক ও মানসিকভাবে নির্যাতন অথবা শিক্ষা প্রতিষ্ঠান থেকে বহিষ্কার বা অন্য যে কোনো ধরনের বৈমষ্য করা।

৬. সরকারি, আধা-সরকারি, স্বায়ত্বশাসিত বা বেসরকারি চাকরিতে নিয়োগ, ছুটি, পদোন্নতি, বদলি, বেতন-ভাত-মজুরি বা সুযোগ-সুবিধাদি প্রাপ্তিতে পার্থক্য, বঞ্চনা, বিধি-নিষেধ আরোপ, সীমাবদ্ধকরণ বা পদত্যাগ করতে বাধ্য করা বা চাকরিচ্যুত করা।

পার্থক্য, বঞ্চনা, বিধি-নিষেধ আরোপ, সীমাবদ্ধকরণ বা পদত্যাগ করতে বাধ্য করা বা চাকরিচ্যুত করা।

৭. কোনো ব্যক্তি বা গোষ্ঠীকে কোনো উৎসব বা অনুষ্ঠানের আয়োজন, তাতে প্রবেশ ও অংশ নেওয়ার বা নিজস্ব ধর্মীয় উপাসনালয়ে প্রবেশ ও অংশগ্রহণ বা নিজ ধর্ম অনুযায়ী দাফন বা শেষকৃত্য বা অন্ত্যেষ্টিক্রিয়া বা সৎকার সম্পাদন ও যোগদানে বাধা দেওয়া।

৮. কোনো ব্যক্তি বা গোষ্ঠীকে কোনো বৈধ পেশা বা চাকরি গ্রহণ বা বৈধ ব্যবসা পরিচালনা থেকে নিষিদ্ধ করা।

৯. কোনো ব্যক্তি বা গোষ্ঠীকে বাড়ি ভাড়া না দেওয়া বা বসবাসের স্থান দিতে অস্বীকৃতি জানানো বা অমত করা বা আবেদন অনুমোদন না করা বা কঠিন শর্ত আরোপ করা।

১০. কোনো ব্যক্তি বা গোষ্ঠীকে তার বা তাদের বাসস্থানের অভ্যন্তরে প্রবেশে বাধা দেওয়া, বাসস্থান বা এলাকা থেকে উচ্ছেদ বা এলাকা বা বাসস্থান ত্যাগে বাধ্য করা।

১১. গ্রাম্য সালিশ বা সামাজিকভাবে বা ধর্মীয়ভাবে কোনো ব্যক্তি বা গোষ্ঠীকে একঘরে করা, সামাজিকভাবে বয়কট করা বা হয়রানি করা।

১২. তালাকপ্রাপ্ত, বিধবা বা স্বামী পরিত্যক্তা অথবা বৈবাহিক সম্পর্কের কারণে বৈষম্যমূলক আচরণ করা।

১৩. কোনো ব্যক্তি বা গোষ্ঠীকে কোনো ধর্মীয় আচার-অনুষ্ঠান বা রীতি-নীতি পালন করা থেকে বিরত রাখা বা তাদের অন্য কোনো ধর্মগ্রহণ ও পালন বা ত্যাগ করতে বাধ্য করা।

১৪. স্থানীয় ও জাতীয় পর্যায়ে সামাজিক, রাজনৈতিক, ও সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ডে অংশগ্রহণে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করা।

১৫. কোনো ব্যক্তি বা গোষ্ঠীকে আইনানুগভাবে সম্পত্তি অর্জনে ও হস্তান্তরে বাধা দেওয়া এবং সম্পত্তিতে অধিকার বা উত্তরাধিকার লাভে বঞ্চিত করা।

প্রস্তাবিত আইনে বলা হয়েছে, বৈষম্য নিরোধে একটি মনিটরিং কমিটি থাকবে, যার সভাপতি হবেন আইনমন্ত্রী। এছাড়া সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন মন্ত্রণালয়ের সচিব বা তার মনোনীত অন্যূন যুগ্ম-সচিব পদমর্যাদার কর্মকর্তারা এর সদস্য হবেন।

বাংলাদেশ এমপ্লয়ার্স ফেডারেশেনের সভাপতি, মানবাধিকার ও সমাজসেবায় জড়িত এমন সংগঠনের তিনজন, দুই জন শ্রমিক প্রতিনিধি- যার মধ্যে এক জন চা শ্রমিক হবেন, বিভিন্ন ধর্মীয় সংগঠনের চারজন প্রতিনিধি, ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠীর একজন প্রতিনিধি, দলিত সম্প্রদায়ের একজন প্রতিনিধি এর সদস্য হবেন।

লেজিসলেটিভ ও সংসদ বিষয়ক বিভাগের একজন যুগ্মসচিব হবেন সদস্য সচিব। প্রতি তিন মাসে এই কমিটিকে কমপক্ষে একটি বৈঠক করতে হবে।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here