বিল ও মেলিন্ডার আনুষ্ঠানিক বিচ্ছেদ

0
193

খবর৭১ঃ মাইক্রোসফটের সহপ্রতিষ্ঠাতা বিল গেটস ও মেলিন্ডা গেটসের বিবাহবিচ্ছেদ আনুষ্ঠানিকভাবে সম্পন্ন হলো। স্থানীয় সময় সোমবার এ বিচ্ছেদের আনুষ্ঠানিকতা সম্পন্ন হয়। এর মধ্য দিয়ে ২৭ বছরের সংসারের ইতি টানলেন এই সেলিব্রেটি দম্পতি। আদালতের নথি সূত্রে এ তথ্য জানা গেছে। খবর রয়টার্সের।

এর আগে গত ৩ মে বিল গেটস ও মেলিন্ডা বিচ্ছেদের জন্য আবেদন করেন আদালতে। মূলত ধনকুবের এই দম্পতির সম্পদ ভাগাভাগির বিষয়টি এতদিন আটকে ছিল। ওই সময়ই তারা বলেছিলেন, তাদের সম্পদ কীভাবে বণ্টন করা হবে, এ নিয়ে মতৈক্যে পৌঁছেছেন তারা। কিন্তু সোমবার আদালতের যে আদেশ এসেছে, তা থেকে এ–সংক্রান্ত কোনো তথ্য জানা যায়নি। এ ছাড়া তাদের মধ্যে কী ধরনের চুক্তি হয়েছে, তাও জানা যায়নি।

বিল ও মেলিন্ডার ক্ষেত্রে আদালতও সতর্ক অবস্থান নিয়েছেন। ফলে, এ বিচ্ছেদের মাধ্যমে কীভাবে সম্পদ বণ্টন করা হবে, আর্থিক হিসাবপাতি কীভাবে হবে এবং একে অপরের প্রতি কী ধরনের দায়িত্ব পালন করবেন, সে বিষয়েও আদালত কিছু বলেননি। তবে আদালত এটুকু বলেছেন, বিচ্ছেদের শর্ত অনুসারে তারা তাদের দায়িত্ব পালন করবেন। যদিও বিল ও মেলিন্ডা কী কী শর্তের ওপর ভিত্তি করে বিচ্ছিন্ন হচ্ছেন, এ বিষয়গুলো আদালতে উত্থাপন করা হয়নি।

বিল গেটস ও মেলিন্ডার সম্পর্কের শুরুটা ছিল পেশাভিত্তিক। মাইক্রোসফট করপোরেশনের যাত্রা শুরু হয়েছিল ১৯৭৫ সালে। এর এক যুগ পর ১৯৮৭ সালে প্রোডাক্ট ম্যানেজার হিসেবে মাইক্রোসফটে যোগ দিয়েছিলেন মেলিন্ডা। ওই বছরই প্রতিষ্ঠানের একটি আনুষ্ঠানিক নৈশভোজে যোগ দিয়েছিলেন তারা।

মূলত প্রেম করে বিয়ে করেছিলেন বিল ও মেলিন্ডা গেটস। কাজের সুবাদে পরিচয়। পরিচয় থেকে প্রেম। ৭ বছর প্রণয়ের পর দুজন ঠিক করেন এক ছাদের নিচে থাকবেন। এভাবে কেটে গেছে ২৭ টি বছর। এই সময়ে তাদের ঘর আলো করে এসেছেন তিন সন্তান। সেই সম্পর্ককে আর বয়ে নিয়ে যেতে পারলেন না ধনকুবের এই দম্পতি।

বিবিসির খবরে বলা হয়েছে, মেলিন্ডা মাইক্রোসফটে যোগ দিয়েছিলেন প্রোডাক্ট ম্যানেজার হিসেবে ১৯৮৭ সালে। ওই বছর তারা নিউইয়র্কে একটি বিজনেস ডিনারে মিলিত হয়েছিলেন।

নেটফ্লিক্স ডকুমেন্টারিতে বিল গেটস নিজেদের সম্পর্কের বিষয়ে বলেছেন, আমরা একে অন্যের যথেষ্ট যত্ন করেছি এবং সেখানে দুটি সম্ভাবনা ছিলো- হয় বিচ্ছেদ নয়তো বিয়ে। ১৯৯৪ সালে তারা বিয়ে বন্ধনে আবদ্ধ হন।

হার্ভার্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের চাকরি ছেড়ে দিয়ে ১৯৭৫ সালে মাইক্রসফট নিয়ে কাজ শুরু করেন বিল গেটস। ১৯৮৬ সালে তিনি প্রতিষ্ঠানটির ৪৯ ভাগ সম্পদের মালিক। অল্প সময়ের মধ্যেই তিনি বিশ্বের অন্যতম সেরা বিলিওনিয়ারে পরিণত হন।

মাইক্রোসফট প্রতিষ্ঠার এক যুগ পর মেলিন্ডার সঙ্গে আনুষ্ঠানিক সাক্ষাৎ হয়েছিল বিলের। জানা যায়, ১৯৮৭ সালে চার চোখ প্রথম এক হয়েছিল। এরপর তারা সাত বছর প্রেম করেছিলেন। অতঃপর বিয়ে।

বিবিসির প্রতিবেদন বলছে, বিল গেটস ও মেলিন্ডার সম্পর্কের শুরুটা ছিল পেশাভিত্তিক। ১৯৮৭ সালে প্রোডাক্ট ম্যানেজার হিসেবে মাইক্রোসফটে যোগ দিয়েছিলেন মেলিন্ডা। এরপর দুজনের মধ্যে জানাশোনা শুরু হয়।

এরপরের গল্প দুজনের সামনে এগিয়ে যাওয়া। শুরু হয় দুজনের চুটিয়ে প্রেম। নেটফ্লিক্সে প্রচারিত এক তথ্যচিত্রে বিল গেটস বলেছেন, ‘আমরা একে অপরের খুব খেয়াল রাখতাম। এখানে দুটি সম্ভাবনা ছিল। হয় আমাদের প্রেমে বিচ্ছেদ হবে, নয়তো আমাদের বিয়ে করতে হবে।’

মেলিন্ডা বলেন, তিনি বিল গেটসকে একজন সুশৃঙ্খল মানুষ হিসেবে আবিষ্কার করেছিলেন। এমনকি তাকে বিয়ে করার পক্ষে-বিপক্ষে যুক্তিও দিয়েছিলেন বিল—এমনটাই জানিয়েছিলেন মেলিন্ডা।

এরপর প্রেম আরও গভীর হয়েছে। প্রেম শুরুর সাত বছর পর ১৯৯৪ সালে তারা এক ছাদের নিচে থাকার সিদ্ধান্ত নেন।

হাওয়াই দ্বীপের লানাইয়ে হয়েছিল সেই আয়োজন। এরপর মাইক্রোসফট বড় হয়েছে। কিন্তু গত বছর তারা এ প্রতিষ্ঠান থেকে অবসরে যান, ব্যস্ত হয়ে পড়েন দাতব্যকাজে।

এজন্য ২০০০ সালে দুজনে মিলে গড়ে তোলেন বিল অ্যান্ড মেলিন্ডা গেটস ফাউন্ডেশন। এটি বর্তমানে বিশ্বের সবচেয়ে বড় দাতব্য সংস্থা। এ ফাউন্ডেশন বিশ্বের বিভিন্ন স্থানে কাজ করছে। বিশ্বজুড়ে সংক্রামক রোগব্যাধির বিরুদ্ধে লড়াই ও শিশুদের টিকাদানে উৎসাহিত করতে কোটি কোটি ডলার ব্যয় করছে এ ফাউন্ডেশন।

কিন্তু যে পথ বেঁধে দিয়েছিল বন্ধন, তার বিচ্ছেদের ঘোষণা এল ৪ মে। দুজনার দুটি পথ দুটি দিকে গেল বেঁকে। দীর্ঘ ২৭ বছরের দাম্পত্য জীবনের ইতি টানার ঘোষণা দেন বিল ও মেলিন্ডা। টুইটার বার্তায় তারা এ ঘোষণা দেন।

টুইটারে পোস্ট করা যৌথ বার্তায় গেটস দম্পতি তখন বলেন, ‘ব্যাপক চিন্তাভাবনা করে আমরা বিয়ের সম্পর্কের সমাপ্তি ঘোষণার সিদ্ধান্ত নিয়েছি।’

এ ছাড়া টুইটবার্তায় বিল গেটস ও মেলিন্ডা বলেন, ‘গত ২৭ বছরে আমরা অসাধারণ তিনটি সন্তান পেয়েছি। এমন একটা ফাউন্ডেশন গড়ে তুলেছি, যে ফাউন্ডেশন বিশ্বজুড়ে মানুষের স্বাস্থ্য ও সক্ষমতা নিয়ে কাজ করছে। আমরা যে বিশ্বাস থেকে ফাউন্ডেশনটি চালু করেছি, সেটা থাকবে। এই ফাউন্ডেশনের কাজ একসঙ্গে চালিয়ে যাব। কিন্তু আমরা এটা আর বিশ্বাস করতে পারছি না যে, আমাদের জীবনের পরের ধাপে দম্পতি হিসেবে আমরা একসঙ্গে থাকতে পারব।’
গেটস দম্পতির তিন সন্তান- জেনিফার (২৫), রোরি (২১) ও ফোয়েব (১৮)।

ইনস্টাগ্রামে জেনিফার গেটস লিখেছেন, ‘আমাদের পুরো পরিবারের জন্য একটা দুঃসময় ছিল।’ জীবনের পরবর্তী ধাপে ব্যক্তিগত গোপনীয়তার বিষয়টি বোঝার জন্য সবাইকে অগ্রিম ধন্যবাদ দেন গেটস দম্পতির বড় মেয়ে জেনিফার।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here