খুশকির সমস্যায় ঘরোয়া সমাধান

0
550

খবর৭১ঃ
খুশকি চুলের স্বাস্থ্যের জন্য একটা বড় সমস্যা! এর দিকে সঠিক গুরুত্ব না দিলে, এটি আরও বাড়তে পারে। খুশকি সাধারণত বর্ষাকালে এবং শীতকালে বেশি দেখা যায়।

আজকাল আবহাওয়ার পরিবর্তন, দূষণ, অস্বাস্থ্যকর জীবনযাত্রার কারণে, প্রায় সারা বছরই খুশকির সমস্যা লক্ষ্য করা যায়।

মাত্রাতিরিক্ত দূষণের ফলে এখন অনেকেই মোটামুটি সারা বছর খুশকির সমস্যায় ভোগেন।

খুশকির জন্য আরও নানা সমস্যা দেখা দিতে পারে। অতিরিক্ত চুল ঝরে যাওয়া, চুল রুক্ষ হয়ে যাওয়া, মাথার ত্বকে (স্ক্যাল্প) নানা রকমের সংক্রমণে জন্যেও বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই দায়ী এই খুশকি।

অনেক কারণেই খুশকি হতে পারে। খুশকির সবচেয়ে সাধারণ কারণ বলা যেতে পারে সেবোরেইক ডারমাটাইটিস বা ত্বকের তৈলাক্ত ও চুলকানিপ্রবণ অবস্থাকে।

এক ধরনের ছত্রাক আছে যার নাম মেলাসেজিয়া। সব প্রাপ্তবয়স্ক মানুষের মাথার খুলিতেই এই মেলাসেজিয়া ছত্রাক থাকে। মেলাসেজিয়া নতুন ত্বক কোষ জন্মাতে সহায়তা করে। কিন্তু ত্বকে ময়লা জমে তেল চিটচিটে অবস্থার মধ্যে এই ছত্রাক বিপদে ফেলতে পারে। এ অবস্থায় জন্মানো অতিরিক্ত ত্বক কোষগুলো মরে যায় এবং ঝরে পড়ে। মাথা থেকে ঝরে পড়া সাদা-হলদে খুশকি আসলে আমাদের ত্বকের মৃত কোষ। তবে মাথা ছাড়াও বাহুমূল, ঊরুসন্ধিসহ শরীরের অন্যত্রও খুশকি হতে পারে। মহিলাদের চেয়ে পুরুষদের মধ্যে আক্রান্তর হার বেশি। পৃথিবীর প্রায় সব জায়গার লোকই খুশকিতে আক্রান্ত হয়।

খুশকির ফলে স্ক্যাল্পে চুলকানি, চুল পড়া দেখা দেয়।

তাই খুশকির সমস্যা থেকে মুক্তি পেতে শুরু থেকেই পদক্ষেপ নেওয়া প্রয়োজন। তবে তার আগে জেনে নিন খুশকি ঠিক কী কী কারণে হতে পারে।

বিশেষজ্ঞদের মতে, খুশকি হওয়ার মূল কারণ হল ফাঙ্গাল ইনফেকশন এবং চিরুনি শেয়ার করার মাধ্যমে এটি ছড়াতে পারে। এছাড়াও, চুল না ধোওয়া হলে এবং মাথার ত্বকে ঘাম জমে থাকলে, ফাংগাল ইনফেকশন হওয়ার সম্ভাবনা আরও বেড়ে যায়। ঘাম জমে এবং ধুলো-ময়লা জমে খুশকি হয়।

চুলে যদি ময়লা জমে এবং তা ঠিক করে পরিষ্কার না করা হয়, তাহলে খুশকি হওয়ার সম্ভাবনাও অনেকটাই বেড়ে যায়।

যারা গরম পানি দিয়ে গোসল করেন, তাদের ক্ষেত্রে খুশকির সমস্যা বেশি লক্ষ্য করা যায়। চুল ধোওয়ার জন্য সবসময়, সাধারণ তাপমাত্রায় পানি ব্যবহার করুন। গরম পানি মাথায় দিলে পরিস্থিতির আরও খারাপ হয়ে উঠতে পারে।

মাথার ত্বক অতিরিক্ত তৈলাক্ত অথবা শুষ্ক হলে খুশকির সমস্যা দেখা দিতে পারে। তৈলাক্ত ত্বকে ধুলোবালি বেশি জমে। ত্বকের মৃত কোষগুলোর অত্যধিক বৃদ্ধি হলে খুশকি হয়। যারা দৈনন্দিন সঠিকভাবে চুল আঁচড়ায় না, চুলে ঠিকমতো শ্যাম্পু করেন না তাদের ক্ষেত্রে এই সমস্যাটা বেশি দেখা যায়।

আমাদের খাদ্যাভ্যাসও ত্বক ও চুলের ওপর গভীর প্রভাব ফেলে। তাই অপুষ্টিকর খাদ্য গ্রহণ এবং পানি কম পান করলে, খুশকির সমস্যা দেখা দিতে পারে।

শ্যাম্পু করার পর চুল ভাল করে না ধুলে বা মাথার তালুতে কন্ডিশনার লাগিয়ে ফেললে এবং ঠিকভাবে না পরিষ্কার করলে, খুশকির সমস্যা দেখা দিতে পারে।

অত্যাধিক চিন্তার ফলে তা মাথার ত্বকের ওপর প্রভাব ফেলে, যার ফলে খুশকির সমস্যা দেখা যায়। তাই খুশকি হওয়ার অন্যতম কারণও মানসিক দুশ্চিন্তা হতে পারে।

পরিবার বা বন্ধুদের কারুর মাথায় যদি খুশকি থাকে এবং তার ব্যবহৃত তোয়ালে বা চিরুনি অন্য কেউ ব্যবহার করে, তবে সেই ব্যক্তিরও খুশকি হতে পারে।

এবার জেনে নেওয়া যাক এমন বেশ কিছু কার্যকরী প্রাকৃতিক ঘরোয়া উপায় যেগুলো খুশকির সমস্যা সহজেই দূর করতে সক্ষম। সামান্য খরচে পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া ছাড়াই খুশকির সমস্যার সমাধান করুন। জেনে নিন তার উপায়গুলো:

খুশকির সমস্যা থেকে বাচঁতে টকদই অত্যন্ত কার্যকরী একটি উপাদান। খুশকি দূর করতে মাথার ত্বকে টকদই দিয়ে ভালভাবে মালিশ করুন। এর পর মিনিট দশেক রেখে ভাল করে ধুয়ে ফেলুন। খুশকির সমস্যা পুরোপুরি দূর না হওয়া পর্যন্ত সপ্তাহে অন্তত দু’বার এই ভাবে চুলে টকদই ব্যবহার করে দেখুন। উপকার পাবেন।

খুশকির সমস্যা দূর করতে অ্যাপল সাইডার ভিনিগার ব্যবহার করতে পারেন। সমপরিমাণ ভিনিগার ও পানি একসঙ্গে মিশিয়ে মাথার ত্বকে মালিশ করুন। ১৫ মিনিট অপেক্ষা করে তা ধুয়ে ফেলুন। সপ্তাহে দুবারের বেশি এটা ব্যবহার করা যাবে না।

দুই টেবিল-চামচ লেবুর রস নিয়ে পুরো মাথায় চুলের গোড়ায় ঘষে ঘষে মাখুন। পানি দিয়ে ধুয়ে ফেলুন। এবার এক টেবিল-চামচ লেবুর রস নিয়ে এক কাপ পানিতে মেশান। লেবুর রস মেশানো পানি দিয়ে মাথা ধুয়ে ফেলুন। খুশকি না কমা পর্যন্ত প্রতিদিন এভাবে লেবু চিকিৎসা চালিয়ে দেখতে পারেন।

নারিকেল তেল ও লেবু খুশকি দূর করতে খুব ভালো কাজ করে। দুই টেবিল-চামচ নারিকেল তেল ও সমপরিমাণ লেবুর রস একসঙ্গে মিশিয়ে মাথার ত্বকে মালিশ করুন। এর পর শ্যাম্পু দিয়ে চুল পরিষ্কার করে নিন।

সাধারণ নারকেল তেলের সঙ্গে মেথি মিশিয়ে কয়েকদিন বোতলে রেখে দিন। নিয়মিত এই মেথি মেশানো তেল মাখুন মাথায়। রাতে মেখে সকালে ধুয়ে ফেলুন। এভাবে নিয়মিত ব্যবহারে মাথার চুল ও ত্বক দুইই ভালো থাকবে। খুশকি থেকেও রেহাই পাবেন।

গ্রিন টি ব্যাক্টেরিয়া-রোধী উপাদান সমৃদ্ধ এবং এটা মাথার ত্বকের স্বাস্থ্য ভালো রাখতে সহায়তা করে। তাই খুশকি কমাতে গ্রিন টি ব্যবহার করতে পারেন। এক কাপ গরম পানিতে দুটা টি ব্যাগ ২০ মিনিট ধরে ডুবিয়ে রাখুন। ঠাণ্ডা হয়ে আসলে তা মাথার ত্বকে ব্যবহার করে ৩০ মিনিট অপেক্ষা করুন। এর পর ঠাণ্ডা পানি দিয়ে তা চুল ধুয়ে নিন।

হালকা পানিতে মাথা ভিজিয়ে নিয়ে খানিকটা বেকিং সোডা পুরো মাথায় মেখে নিন। ভালো করে ঘষে ঘষে শ্যাম্পু না করে পানি দিয়ে ধুয়ে ফেলুন। এটা মাথার খুলিতে থাকা ছত্রাক দমন করে প্রথমদিকে ত্বককে অতিরিক্ত শুষ্ক করে ফেলতে পারে। কিন্তু অল্পদিনেই ত্বকে স্বাভাবিক তৈলাক্ত অবস্থা ফিরে আসবে। কিন্তু এ সময়ে আপনি খুশকি থেকে মুক্তি পাবেন।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here