মানসিক প্রফুল্লতা বাড়ায় কড়া সুগন্ধি

0
223

খবর৭১ঃ প্রাত্যহিক জীবনে চলার পথে আপনি নিজের ভারসাম্য হারিয়ে ফেললে বা কোনো কারণে দুশ্চিন্তাগ্রস্ত হয়ে মর্মবেদনায় ভুগতে থাকলে পছন্দের সুগন্ধির সুবাস নিন। গবেষণা বলছে, কড়া সুগন্ধি মেজাজ উন্নত করতে সাহায্য করে, যা মানসিক চাপ এবং অন্যান্য উদ্বেগ থেকে মনকে শান্ত রাখে। ব্যক্তিত্বের সঙ্গে মানানসই সুগন্ধির ব্যবহার দেহ-মনের প্রফুল্লতা আনে।

করোনাকালের এই বৈশ্বিক মহামারি আমাদেরকে বুঝিয়ে দিয়েছে দৈহিক সুস্থতা ও মানসিক প্রফুল্লতা সবচেয়ে জরুরি। কবে পূর্বের স্বাভাবিক অবস্থার এক ঝলক দেখতে পারব সেই ভাবনায় অবসন্ন মনে অনিশ্চিত জীবনের দিনগুলো আমরা উদ্দেশ্যহীন ভাবে কাটাচ্ছি। যা আমাদের মানসিক স্বাস্থ্যের ওপর চরম প্রভাব ফেলছে। এ অবস্থা থেকে আমাদের মুক্তি দিতে পারে সুগন্ধি।

‘স্মেল অব সেন্স’ আমাদের প্রফুল্লতার সঙ্গে সম্পর্কিত

ঘ্রাণেন্দ্রিয় সংক্রান্ত করটেক্স আমাদের লিম্বিক সিস্টেমের অংশ, যার অবস্থান মূলত মধ্যমস্তিষ্কে বা মধ্য টেম্পোরাল লোবের ঠিক নিচে। এক্ষেত্রে আমাদের আবেগ, আচরণ, অনুপ্রেরণা, দীর্ঘ-মেয়াদী স্মৃতি, ও ঘ্রাণসহ বিভিন্ন কার্যক্রম প্রক্রিয়ায় লিম্বিক তন্ত্রের ভূমিকা রয়েছে। মানুষের আবেগতাড়িত ভূমিকা কেমন হবে তার বড় অংশ নির্ধারিত হয় এখানে।

গবেষকরা বলছেন, নির্দিষ্ট ফ্র্যাগরেন্স বা সুগন্ধি কাউকে শৈল্পিক ও স্মৃতিকাতর করে তুলে এবং হারানো সমৃতি ও আবেগ ফিরিয়ে আনতে কোমল অনুভূতির পরশ বুলিয়ে দেয়।

ভারতের সুগন্ধি প্রস্তুতকারী প্রতিষ্ঠান উইজডম ফ্র্যাগরেন্স এর স্বত্তাধিকারী শীতাল দেসাই ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেসকে বলেন, সুগন্ধি দৈহিক এবং মনস্তাত্ত্বিক সাড়াদানে প্রণোদনা দেয়। অ্যারোমাকোলোজি হলো মানুষের মানসিক আচরণের ওপর গন্ধের প্রভাব এবং অনুভূতি ও আবেগের মধ্যকার সম্পর্ক পর্যবেক্ষণ করে। এক্ষেত্রে বিভিন্ন ধরনের সুগন্ধির প্রতি মানুষের সাড়াদানের উপর বিশেষ গুরুত্ব দিয়ে থাকে।

আমাদের মনের স্বাস্থ্যের সঙ্গে যুক্ত হওয়ায় অ্যারোমাথেরাপি সামগ্রিক নিরাময়ের সঙ্গে সম্পর্কিত চিকিৎসা। পারফিউম এর রয়েছে এক ধরনের রিলাক্সিং এবং সুগন্ধি থেরাপিউটিক সুবিধা। সাইট্রাস ফল, ফুল এবং শীতল মসলা জাতীয় সুগন্ধির রয়েছে মনকে শান্ত এবং শরীরকে শীতল করার এক ধরনের বিশেষ ক্ষমতা। নানা ক্ষেত্রে সুগন্ধি তেল প্রয়োগ করা যায়। সুগন্ধি তেল নাকের মাধ্যমে সরাসরি মস্তিষ্কের আবেগ পরিচালন কেন্দ্রের উপর প্রভাব ফেলে। বিশেষ করে ডিমেনশিয়া বা স্মৃতিভ্রংশের রোগীদের পরিচর্যার ক্ষেত্রে এই পদ্ধতি কাজে লাগে। হাতেকলমে রোগীর পরিচর্যার চেয়ে সুগন্ধের সাহায্যে বেশি সুফল পাওয়া যায়।

পরিচিত সুগন্ধ পেলে স্মৃতিভ্রংশের রোগীরা ভালোভাবে সাড়া দেন। তখন তাঁদের গন্ধ সংক্রান্ত অভিজ্ঞতার স্মৃতি জেগে উঠলে আরাম পায় এবং নিরাপদ বোধ করেন। কেননা এটা তাদের প্রথম অভিজ্ঞতার চেনা অনুভূতি দেয়।

দেসাই বলেন, একটা নির্দিষ্ট সুগন্ধি কোনো উপলক্ষ বা কোনো মানুষ সম্পর্কে স্মৃতি মনে করিয়ে দেয়। শিশুদের গায়ের গন্ধ পৃথিবীতে সবচেয়ে সুখী ও কোমল গন্ধ। পিতার শরীরে গন্ধ সন্তানের মনে নিরাপত্তার অনুভূতি দেয়। সদ্য শেঁকা কুকিজের গন্ধ ব্যক্তির শোক বা হতাশা প্রশমিত করে থাকে। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় অসংখ্য সৈনিক তাদের প্রিয় সুগন্ধিযুক্ত রুমাল সঙ্গে রাখতেন, সেটার ঘ্রাণ নিয়ে নিজেদের উজ্জীবিত রাখতেন।

তিনি আরও বলেন, ভালো সুগন্ধি সামগ্রিক সাড়াদানে কাজ করে। এটি মনস্তাত্ত্বিক বিষয়ের সঙ্গে সম্পর্কিত। মানসিক প্রফুল্লতা উন্নতকরণ বা সাধারণ রোগ নিরাময়ের পাশাপাশি ফ্যাশনের ক্ষেত্রেও সুগন্ধি পুরো পৃথিবীর মানুষের কাছে গ্রহণযোগ্যতা পেয়েছে। সাইট্রাস ভিত্তিক সুগন্ধি মনের সতেজতা আনতে এবং পরিচ্ছন্নতার বৈশিষ্ট্যের জন্য পরিবারগুলোতে ব্যবহৃত হয়।

ভ্যানিলা বা সদ্য শেঁকা কেক বা কফির গন্ধের মতো খাবারের সঙ্গে সম্পর্কিত সুগন্ধগুলো প্রায়শই একজনকে স্বাচ্ছন্দ্য বোধ করতে উজ্জীবিত করে তুলে। খাবারের সঙ্গে অভিজ্ঞতা সবসময় স্বস্তি বয়ে আনে। ফলে সুরভিত স্মৃতিও স্বাচ্ছন্দ্যের বোধ জাগাতে ভূমিকা পালন করে।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here