রোহিঙ্গা ক্যাম্পে আগুনে নিহতের সংখ্যা বেড়ে ১১

0
234

খবর৭১ঃ কক্সবাজারের উখিয়ার বালুখালী রোহিঙ্গা ক্যাম্পে আগুনের ঘটনায় মৃতের সংখ্যা বেড়ে অন্তত ১১ জনে দাঁড়িয়েছে। গতকালের এই অগ্নিকাণ্ডে নয় হাজারের বেশি ঘর পুড়ে গেছে।

মঙ্গলবার বিকালে দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ সচিব মো. মোহসিন কক্সবাজারে সাংবাদিকদের ব্রিফিংকালে জানান, রোহিঙ্গা ক্যাম্পে আগুনের ঘটনায় ১১ জনের মৃত্যু হয়েছে। নিহতদের মধ্যে ক্যাম্প ৮-ই এর একজন, ৮-ডাব্লিউ এর পাঁচজন এবং ক্যাম্প-৯ এর পাঁচজন।

সচিব জানান, আগুনে নয় হাজার ৩০০টি ঘরবাড়ি, ১৩৬টি লার্নিং সেন্টার, দুটি বড় হাসপাতাল ও মূল্যবান জিনিসপত্র ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।

ব্রিফিংয়ে সচিব জানান, ক্ষতিগ্রস্ত রোহিঙ্গা ও স্থানীয়রা যাতে ক্ষুধায় কাতর না হয় সে অনুযায়ী বিশ্ব খাদ্য সংস্থা বাংলাদেশ সরকারের সহায়তায় খাদ্য নিশ্চিত করেছে। অগ্নিকাণ্ডের পরপরই জরুরি খাদ্য সহায়তার অংশ হিসেবে শুকনা খাবার দেয়া হয়েছে।

তিন হাজার ৮০০ রোহিঙ্গা পরিবার অন্যান্য ক্যাম্পে আশ্রয় নিয়েছে এবং অস্থায়ীভাবে ৮০০ তাঁবু স্থাপন করা হয়েছে বলে জানান তিনি। রোহিঙ্গাদের সার্বিক খোঁজখবর নিতে কক্সবাজার জেলা পুলিশ, আর্মড পুলিশ ব্যাটালিয়ন ও স্বেচ্ছাসেবকরা দিনরাত কাজ করছে বলে জানান তিনি।

স্থানীয়দের ক্ষতির ব্যাপারে জানতে চাইলে গণমাধ্যমকর্মীদের তিনি বলেন, যারা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে তাদের তালিকা হাতে পেলে সে অনুযায়ী টিন, নগদ অর্থ ও দুই-তিন মাসের খাদ্য দেয়া হবে। ক্ষতিগ্রস্তদের জন্য ১০ লাখ টাকা ও ৫০ মেট্রিক টন চাল বরাদ্দ দেয়া হয়েছে বলে জানান তিনি।

রোহিঙ্গা ত্রাণ ও শরণার্থী প্রত্যাবাসন কমিশনারের নেতৃত্বে গঠিত তদন্ত কমিটির মধ্যে দুর্যোগ মন্ত্রণালয়ের যুগ্ম সচিব, এডিসি, এএসপি, ফায়ার সার্ভিসের প্রতিনিধি, এপিবিএন প্রধান ও অতিরিক্ত ত্রাণ ও শরণার্থী প্রত্যাবাসন কমিশনার রয়েছেন।

সাংবাদিকদের সঙ্গে ব্রিফিংয়ের সময় কক্সবাজার জেলা প্রশাসক, পুলিশ সুপার, এপিবিএন, গোয়েন্দা সংস্থা, সাংবাদিকসহ বিভিন্ন দপ্তরের কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।

এর আগে মঙ্গলবার বেলা ১১টার দিকে কক্সবাজারের উখিয়া বালুখালীতে পুড়ে যাওয়া রোহিঙ্গা ক্যাম্প পরিদর্শন করেন চট্টগ্রাম রেঞ্জের ডিআইজি মো. আনোয়ার হোসেন।

এদিকে উখিয়া উপজেলার নির্বাহী কর্মকর্তা নিজাম উদ্দিন আহমেদ মঙ্গলবার বিবিসি বাংলাকে বলেন, ‘আমরা নিশ্চিত না হয়ে মৃতের সংখ্যা বলছি না। এখনো পর্যন্ত নিশ্চিত হওয়া গেছে ১১ জন। এর বাইরে অন্য কেউ যদি অন্য কিছু বলে থাকে সেটা আমরা এখনো ভেরিফাই করতে পারিনি।’

আগুনের ঘটনায় নিখোঁজ থাকা সম্পর্কে তিনি বলেন, এলাকাটি অনেক বড়। অনেক মানুষ স্বজনদের কাছ থেকে ছিটকে পড়েছেন। সেখানে নিখোঁজ অনেকে ছিল তাদের খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে।

উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা বলেন, ‘কেউ হয়তো তার ভাইকে পাচ্ছে না, সকাল বেলা পায় নাই, ১১টার দিকে হয়তো খুঁজে পেয়েছে। নিখোঁজদের বিষয়টা ওইভাবে বলা যাচ্ছে না।’

এদিকে জাতিসংঘের শরণার্থী বিষয়ক সংস্থা ইউএনএইচসিআরের পক্ষ থেকে জানানো হয়, আগুন লাগার পর এখনো চার শতাধিক মানুষ নিখোঁজ রয়েছে। এই সংখ্যা আরও বাড়তে পারে বলেও জানিয়েছে তারা।

বেসরকারি সংস্থাগুলোর সমন্বয়ক গ্রুপ ইন্টার সেক্টর কো-অর্ডিনেটর গ্রুপ-আইএসসিজি বলছে, আগুনে ১০ হাজারের মতো বাড়ি-ঘর পুড়ে গেছে। ঘরহারা হয়েছে ৪৫ হাজারের মতো মানুষ।

তবে এই সংখ্যা আগুন লাগার পর ক্ষয়ক্ষতির প্রথম ২৪ ঘণ্টার একটি চিত্র বলে জানায় গ্রুপটি।ক্ষয়ক্ষতির সুনির্দিষ্ট পরিমাণ জানতে এখনো কাজ চলছে বলে জানানো হয়। ভবিষ্যতে এই পরিমাণ বাড়তে পারে বলেও জানায় গ্রুপটি।

সোমবার বিকাল চারটার দিকে আগুনের সূত্রপাত হয় এবং এরপর কয়েক ঘণ্টা ধরে এ আগুনে পুড়ে যায় রোহিঙ্গাদের শত শত ঘর। শুরুতে স্থানীয়রা আগুন নেভানোর চেষ্টা করলেও তা না কমে বরং ছড়িয়ে পড়ে আশেপাশের এলাকায়। খবর পেয়ে দমকলসহ নানা সংস্থার লোকজন ছুটে গেলেও আগুন নিয়ন্ত্রণে আনতে মধ্যরাত হয়ে যায়।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here