খবর৭১ঃ বাংলাদেশ ও শ্রীলঙ্কার মধ্যে ব্যবসা-বাণিজ্যের নতুন ক্ষেত্র উন্মোচন করতে একমত হয়েছেন দুই দেশের সরকারপ্রধান। শনিবার ঢাকায় বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এবং শ্রীলঙ্কার প্রধানমন্ত্রী মাহিন্দা রাজাপক্ষে বৈঠক করেন। পরে দুই নেতার উপস্থিতিতে যুব উন্নয়ন, কৃষি, কারিগরি শিক্ষাসহ বিভিন্ন ক্ষেত্রে সহযোগিতা বাড়াতে ছয়টি সমঝোতা স্মারক স্বাক্ষরিত হয়।
প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে অনুষ্ঠিত বৈঠক শেষে এ ব্যাপারে সাংবাদিকদের ব্রিফ করেন প্রধানমন্ত্রীর প্রেস সচিব ইহসানুল করিম।
প্রধানমন্ত্রীর প্রেস সচিব বলেন, ‘প্রায় এক ঘণ্টার দ্বিপক্ষীয় বৈঠকে আঞ্চলিক এবং আন্তর্জাতিক বিভিন্ন ইস্যুতে আলোচনা হয়েছে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, বাংলাদেশ ও শ্রীলঙ্কার মধ্যে দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্যের পরিমাণ সম্ভাবনার চেয়ে অনেক কম। সেজন্য মুক্ত বাণিজ্য চুক্তি করার বিষয়ে জোর দিয়ে তিনি বলেন, এ বিষয়ে যৌথ ফিজিবিলিটি স্টাডি ইতিমধ্যে সম্পন্ন হয়েছে। আমাদের এখন দ্রুত মুক্ত বাণিজ্য চুক্তিতে (এফটিএ) যাওয়া উচিত।’
এহসানুল করিম জানান, বৈঠকে বাংলাদেশে বিনিয়োগে শ্রীলঙ্কান উদ্যোক্তাদের প্রতি আহ্বান জানিয়ে শেখ হাসিনা বলেন, শ্রীলঙ্কা বাংলাদেশের পাওয়ার সেক্টরে বিনিয়োগ করেছে। আমরা শ্রীলঙ্কান বিনিয়োগকারীদের বাংলাদেশের বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চল, ইন্ডাস্ট্রিয়াল পার্ক এবং হাইটেক পার্কগুলোতে আরও বেশি বিনিয়োগ করার আহ্বান জানাই। ধান চাষ, স্বচ্ছ পানি মাছ চাষসহ কৃষি ক্ষেত্রে অভিজ্ঞতা বিনিময়ের ওপর গুরুত্বারোপ করেন প্রধানমন্ত্রী।
বাংলাদেশের ওষুধ শিল্পের কথা উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, বাংলাদেশ থেকে বিশ্বমানের ওষুধ আমদানি করে শ্রীলঙ্কা লাভবান হতে পারে। জরুরি রেসপন্স, দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা, জলবায়ু অভিযোজন এবং প্রশমন বিষয়ে বাংলাদেশের অভিজ্ঞতা শ্রীলঙ্কার সঙ্গে বিনিময় করার আগ্রহ প্রকাশ করেন শেখ হাসিনা।
দুই দেশের দ্বিপাক্ষিক সম্পর্কের বিষয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, বাংলাদেশ শ্রীলঙ্কার সঙ্গে দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ককে গুরুত্ব সহকারে দেখে। আগামী বছর শ্রীলঙ্কার সঙ্গে বাংলাদেশের দ্বিপাক্ষিক সম্পর্কের ৫০ বছর পূর্তির কথা উল্লেখ করেন শেখ হাসিনা। বৈঠকে শ্রীলঙ্কার প্রধানমন্ত্রী মাহিন্দা রাজাপাকসে দুদেশের বিদ্যমান সম্পর্কে সন্তোষ প্রকাশ করে বলেন, আগামী বছর দুদেশের কূটনৈতিক সম্পর্কের সুবর্ণজয়ন্তী উদযাপন উপলক্ষে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে শ্রীলঙ্কা সফরের আমন্ত্রণ জানান মাহিন্দা রাজাপাকসে। বাংলাদেশের ডিজিটাল দেশে রূপান্তরের প্রশংসা করেন শ্রীলঙ্কার প্রধানমন্ত্রী।
প্রসঙ্গত, বাংলাদেশ ও শ্রীলঙ্কার বাণিজ্যের পরিমাণ বছরে ১৬ কোটি ডলারের মতো। এর মধ্যে ১২ কোটি ডলারের পণ্য রপ্তানি করে শ্রীলঙ্কা। আর বাংলাদেশ রপ্তানি করে চার কোটি ডলারের মতো।
দ্বিপাক্ষিক বৈঠকে বাংলাদেশ প্রতিনিধি দলে ছিলেন, পররাষ্ট্রমন্ত্রী একে আবদুল মোমেন, বাণিজ্যমন্ত্রী টিপু মুনশি, অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল, পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী শাহরিয়ার আলম, নৌ-পরিবহন প্রতিমন্ত্রী খালিদ মাহমুদ চৌধুরী, প্রধানমন্ত্রীর মুখ্য সচিব আহমদ কায়কাউস, পররাষ্ট্র সচিব মাসুদ বিন মোমেন।
শ্রীলঙ্কান প্রতিনিধি দলে ছিলেন দেশটির শিক্ষামন্ত্রী জিএল পিরিস, রুরাল হাউজিং অ্যান্ড কনস্ট্রাকশন অ্যান্ড বিল্ডিং ম্যাটেরিয়াল ইন্ডাস্ট্রিজ বিষয়ক প্রতিমন্ত্রী ইন্দিকা আনুরুদ্ধ, আঞ্চলিক সহযোগিতা বিষয়ক প্রতিমন্ত্রী তারক বালাসুরিয়া প্রমুখ।