আমিনুল ইসলাম পাইকগাছা (খুলনা):
ঘটনাটি মাস ছ’য়েক আগের। খুলনার পাইকগাছা উপজেলার কাশিমনগর গ্রামের ইউসুফ আলী মোড়লের বড় ছেলে দু’সন্তানের জনক আব্দুল্লাহ মোড়ল (৩৫)। প্রতিবেশী হাবিবুর রহমান হবি মোড়লের মেয়ে অটোপ্রমোশনে ৭ম শ্রেণিতে পড়ুয়া জনৈকা স্কুল ছাত্রীকে প্রলুব্ধ করে ধর্ষণ করে। বিষয়টি প্রথমত চাপা থাকলেও ঘটনার শিকার কিশোরীর শারিরীক পরিবর্তনে বিষয়টি ধরা পড়ে। এরপর জানাজানি হলে স্থানীয়ভাবে মিমাংশায় শুরু হয় দফায় দফায় বসাবসি। দারিদ্রতা ও সামাজিক ভীতির কারণে কিশোরীর পরিবার আইনী পথে এগুতে না চাওয়ায় আব্দুল্লার পরিবার বিষয়টিকে স্বাভাবিকভাবে নিয়ে ঝামেলা এড়াতে কিশোরীকে তার দ্বিতীয় স্ত্রী হিসেবে গ্রহন করতে রাজী হয়। আব্দুল্লার এক মামা সাবেক ইউপি সদস্য বাদল মোড়লের মধ্যস্থতায় শালিসীতে বিয়ের সিদ্ধান্তে ঐক্যমতে পৌছায় উভয় পরিবার।
আব্দুল্লাহর পরিবারের পক্ষে কিশোরীকে মেনেও নেয়া হয়েছে। তবে তাদের বিয়ে রেজিস্ট্রি হয়েছে কিনা তা নিশ্চিত করেনি উভয় পরিবারের কেউ। আইনত রেজিস্ট্রিবিহীন বিয়ে দন্ডনীয়। তবে, মেয়ের বয়স মাত্র ১২ বছর তাই বিয়ে রেজিস্ট্রি হওয়াও দন্ডনীয় অপরাধ। এদিকে বিয়ের পর থেকে ঐ কিশোরী কখনো পিত্রালয় আবার কখনো স্বামীর বাড়ীতে অবস্থান করছে। পিত্রালয় থেকে মাত্র কয়েক গজ দূরে স্বামীর বাড়ী। যে বয়সে তার বই-খাতা নিয়ে স্কুলে যাওয়ার কথা। অবসরে সহপাঠীদের সাথে খেলা-গুজব করে বেড়ানোর কথা। ঠিক সেই বয়সে নিজের অজান্তেই মা হওয়ার প্রহর গুনছে। নিজের শারিরীক পরিবর্তনে সহপাঠীসহ লোক-লজ্জায় দু’বাড়ির বাইরে বেরুতে পারেনা সে।
সূত্র জানায়, আব্দুল্লাহ প্রভাবশালী পরিবারের ছেলে। তার নিকটাত্নীয়রা স্থানীয় ধনাঢ্য। অন্যদিকে মেয়ে পক্ষ দরিদ্র ও সামাজিকভাবে হেয় প্রতিপন্ন হওয়ার ভয়ে বিষয়টি নিয়ে থানা কিংবা আদালতের আশ্রয় না নিয়ে তাদের বিয়ের সিদ্ধান্তে ঐক্যমতে পৌছেছে।
এদিকে পারিবারিকভাবে তাদের বিয়ে দিলেও মাত্র ১২ বছরের শিশুর সাথে মধ্য বয়সীর বিয়ে রেজিস্ট্রি বা নিবন্ধন যোগ্য নয়। তাছাড়া রেজিস্ট্রিবিহীন বিয়ে অবৈধ হলেও কিভাবে তারা তাদের বিয়ে দিয়েছে এনিয়েও রীতিমত নানা প্রশ্ন এলাকাবাসীর মাঝে বার বার ঘুর-পাক খাচ্ছে।
এব্যাপারে আব্দুল্লাহ মোড়ল মুঠোফোনে এপ্রতিনিধিকে জানায়, বিয়ের মাধ্যমে বিষয়টি মিমাংশা হয়ে গেছে। সরকারি-বেসরকারি পর্যায়ে বাল্য বিবাহ রোধে ব্যাপক তৎপরতা পরিলক্ষিত হলেও বিষয়টি নিয়ে যেন মাথা ব্যথা নেই কারোরই।
সর্বশেষ ঘটনায় বিয়ের মাধ্যমে সব সমস্যার সমাধান হওয়ায় বাল্যবিবাহ আইন ও শিশু ধর্ষণের মত জঘন্য অপরাধ করেও বিয়ের মাধ্যমে সমাধান হওয়ায় আইনকে চ্যালেঞ্জ হিসেবেও দেখছেন স্থানীয়রা।