খবর৭১ঃবন্ধুকে সঙ্গে নিয়ে বাজার থেকে বাড়ি ফেরার পথে সোহেল নামে এক কিশোর খুন হয়েছেন। দুটি মোটরসাইকেল নিয়ে আগ থেকে ওত পেতে থাকা চারজন ফিল্মি স্টাইলে চাপাতি দিয়ে কুপিয়ে হত্যা করা হয়েছে ১৬ বছর বয়সী এক কিশোরকে।
জেলার পাকুন্দিয়া উপজেলার সুখিয়া ইউনিয়নের অমরপুর গ্রামে গত বুধবার রাত আনুমানিক পৌনে ৮টার দিকে এ হত্যাকাণ্ডের ঘটনা ঘটে।
এ সময় সোহেলের সঙ্গে থাকা একই গ্রামের দুবাইপ্রবাসী আব্দুর রশিদের ছেলে ঘনিষ্ঠ বন্ধু মানিকের জামা-কাপড়ে রক্তের দাগ লাগলেও তিনি নিরাপদে বাড়িতে পৌঁছে জামা-কাপড় ধুয়ে পরিষ্কার করে নেন।
অপরদিকে, লোকমুখে খবর পেয়ে পরিবারের ও আশপাশের লোকজন দৌড়ে ঘটনাস্থলে গিয়ে সোহেলেকে গলাকাটা অবস্থায় পড়ে থাকতে দেখে পুলিশে খবর দেয়। পুলিশ সোহেলের লাশ উদ্ধার করে ময়নাতদন্তের জন্য কিশোরগঞ্জ জেনারেল হাসপাতালে পাঠানো হয়।
পরিবারের অভিযোগ, সোহেলের কোনো শত্রু নেই কিংবা কারো সঙ্গে কোনো বিরোধ ছিল না। মাদকসেবন ও মাদক ব্যবসায় বাধা দেয়ার পাশাপাশি যে কোনো সময় এসব তথ্য ফাঁস করে দিতে পারে এমন ভাবনা থেকেই পূর্বপরিকল্পিতভাবে সোহেলকে নৃশংসভাবে হত্যা করা হয়েছে।
এ ঘটনায় একই দিন রাতে সোহেলের বাবা মো. মজনু মিয়া বাদী হয়ে পাকুন্দিয়া থানায় একটি হত্যা মামলা দায়ের করেন। মামলার পর পুলিশ ঘটনায় জড়িত সন্দেহে সোহেলের বন্ধু মানিককে আটক করে এবং ঘটনাস্থলের পাশে একটি পুকুর থেকে হত্যাকাণ্ডে ব্যবহৃত একটি নতুন চাইনিজ চাপাতি উদ্ধার করে।
পুলিশ মানিককে আটকের পর জিজ্ঞাসাবাদে কোনো তথ্য না পেয়ে তাকে শুক্রবার আদালতে সোপর্দ করে।
এদিকে শুক্রবার বিকালে অমরপুর গ্রামের সোহেলদের বাড়ি সরেজমিন গেলে দেখা যায় স্বজনদের আহাজারি।
এ সময় সোহেলের বোন সাবিনা ইয়াসমিন জানান, সন্ধ্যার আগে পাশের বাড়ির বন্ধু মানিক সোহেলকে মোবাইল ফোনে ডেকে পার্শ্ববর্তী জাঙ্গালিয়া ইউনিয়ন সদর বাজারে নিয়ে যায়। সেখানে একপর্যায়ে সোহেল, মানিক ও সোহেলের ভাতিজা সানি একসঙ্গে ঝালমুড়ি খায়।
এ সময় তড়িঘড়ি করে মানিক সোহেলকে বাড়ি ফিরতে বলে। সোহেল সময় নষ্ট না করে মানিককে নিয়ে বাড়ি ফেরার পথে কাজিহাটি গ্রামের সামনের ফাঁকা রাস্তার শিমুলতলা এলাকায় আসলে আগে থেকে দুটি মোটরসাইকেলযোগে এসে ওত পেতে থাকা চার যুবক সোহেলের ওপর হামলা চালায়।
এ সময় সজোরে বাম কাঁধে চাপাতির একটি কোপ লাগলে সোহেল রাস্তার পাশে লুটিয়ে পড়ে এবং সেখানেই তার মৃত্যু হয়। পরিবার ও এলাকাবাসী এ সময় ঘটনাস্থলে দুটি মোটরসাইকেল ও চার যুবকের উপস্থিতি টের পেলেও তারা দ্রুত চলে যাওয়ায় চিনতে পারেনি।
পরিবারের ধারণা, সোহেলের কাছের বন্ধু মানিককে দিয়ে সোহেলকে বাড়ি থেকে বের করে নিয়ে নিষ্ঠুরভাবে খুন করা হয়েছে।
এদিকে শুক্রবার বিকালে ঘটনাস্থল সরেজমিন পরিদর্শনকালে হত্যাকাণ্ডের স্থানসংলগ্ন একটি নতুন গামছা এবং ১০০ গজের মধ্যে একটি মোজা ও পুকুর পাড়ে এক জোড়া নতুন শো-জুতা পরে থাকতে দেখা গেছে।
এলাকাবাসীর ধারণা, এ গামছা এবং জুতা হত্যাকারীদের কারও। কিন্তু পুলিশকে গামছা ও জুতার কথা জানানো হলেও শুক্রবার সন্ধ্যা পর্যন্ত পুলিশ আলামত হিসেবে এসব সংগ্রহ করেনি। বরং এ প্রতিনিধির কাছ থেকে জেনে মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা এসআই মদন এলাকার এক ব্যক্তিকে এসব সংগ্রহ করে থানায় পাঠিয়ে দিতে বলেন।
উল্লেখ্য, বন্ধু মানিকের মোবাইলে ফোন পেয়ে বুধবার সন্ধ্যার আগে সোহেল জাঙ্গালিয়া বাজারে যায়। সেখানে সানি নামে এক যুবকও যোগ দেয়। কিন্তু বাজার থেকে সোহেল বন্ধু মানিককে সঙ্গে নিয়েই বাড়ি ফিরছিল। তারা কাজিহাটির গ্রামের সামনের ফাঁকা মাঠের শিমুলতলায় পৌঁছলে আগে থেকে দুটি মোটরসাইকেল নিয়ে ওত পেতে থাকা চার যুবক তাদের গতিরোধ করে সোহেলের বাম কাঁধে চাপাতি দিয়ে সজোরে কোপ দিলে ঘটনাস্থলেই তার মৃত্যু হয়। ডাকচিৎকার শুনে আশপাশের লোকজন ও এলাকাবাসী এগিয়ে আসার আগেই অজ্ঞাতপরিচয়ের দুর্বৃত্তরা পালিয়ে যায়।
খবর পেয়ে পুলিশ এসে সোহেলের লাশ উদ্ধার করে নিয়ে যায় এবং একই দিন রাতে সোহেলের বন্ধু মানিককে বাড়ি থেকে আটক করে এবং ঘটনাস্থলের কাছের একটি পুকুর থেকে হত্যাকাণ্ডে ব্যবহৃত চাপাতি উদ্ধার করে।
পরিবারের লোকজনের অভিযোগ, পুলিশ এ হত্যাকাণ্ডের রহস্য উদঘাটনে যথাযথ দায়িত্ব পালন করছে না।
ঘটনার দু’দিন পরও হত্যাকারীদের ফেলে যাওয়া নতুন গামছা ও জুতা সংগ্রহে অনীহাই এর প্রকৃষ্ট উদাহরণ। তারা পুলিশের পরিবর্তে সিআইডি কিংবা পিবিআইকে দিয়ে তদন্ত করানোর জন্য ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের হস্তক্ষেপ কামনা করছেন।
এ ব্যাপারে পাকুন্দিয়া থানার পরিদর্শক (তদন্ত) মোহাম্মদ মালেক খসরু খাঁন দাবি করেন, ওই এলাকার অনেক মানুষ বিদেশে থাকে। প্রায় সবাই ধনী। সুতরাং এ স্পর্শকাতর হত্যাকাণ্ডটির তদন্ত কাজ নিয়ে তারা সাবধানে এগোতে চান।
এ সময় তিনি হত্যাকাণ্ডের দুটি মোটরসাইকেল ও চার ঘাতকের উপস্থিতির বিষয়টিও কৌশলে এড়িয়ে গিয়ে বলেন, নিহত সোহেলের বন্ধু মানিককে হত্যাকাণ্ডে জড়িত সন্দেহে আটক করে শুক্রবার কোর্টে সোপর্দ করা হয়েছে। জিজ্ঞাসাবাদের জন্য রোববার তাকে পাঁচ দিনের রিমান্ড চাওয়া হবে। রিমান্ডে এনে জিজ্ঞাসাবাদে তার কাছ থেকে প্রাপ্ত তথ্যানুযায়ী পরবর্তী আইনানুগ কার্যক্রম শুরু করা হবে।
খবর৭১/এসঃ