উজ্জ্বল রায়, নড়াইল জেলা প্রতিনিধি: মামলার বিবরণে জানা যায়, নড়াইলে ৮ হাজার গ্রাহকের টাকা নিয়ে চম্পট চলন্তিকা যুব সোসাইটি নামে খুলনা ভিত্তিক একটি এনজিও ২০০৪ সালে কালিয়া উপজেলায় কার্যক্রম শুরু করে। ছয় বছরে দ্বিগুণ ও দশ বছরে তিন গুণ মুনাফা দেয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়ে বিভিন্ন মেয়াদি আমানত সংগ্রহ করেছে তারা। ২০০৯ সাল থেকে এ আমানত গ্রহণ ও ঋণদান কর্মসূচি শুরু করে চলন্তিকা। মানুষও অধিক মুনাফার লোভে মেয়াদি আমানতের স্কিমগুলো লুফে নেয়। কালিয়ার আট হাজার গ্রাহকের অন্তত ৪০ কোটি টাকা হাতিয়ে নিয়ে ৩ এপ্রিল প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তারা উধাও হয়ে যান। এছাড়া বিভিন্ন এলাকায় আরো ২৫-৩০টি শাখা খুলে বিপুল অংকের টাকা হাতিয়ে নেয়ার অভিযোগও রয়েছে তাদের বিরুদ্ধে। নড়াইলের কালিয়ায় একটি অবৈধ প্রতিষ্ঠান বেশি সুদে আমানত গ্রহণ ও সহজ শর্তে ঋণদানের টোপ দিয়ে আট হাজার গ্রাহকের প্রায় ৪০ কোটি টাকা আত্মসাৎ করেছে। গত সোমবার এক গ্রাহক বাদী হয়ে প্রতিষ্ঠানটির চেয়ারম্যানসহ ৩৩ জনের বিরুদ্ধে মামলা করেছেন। প্রতিষ্ঠানের কালিয়া কার্যালয় সিলগালা করে দিয়েছেন উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও)।
মামলার আসামিদের মধ্যে রয়েছেন— চলন্তিকা যুব সোসাইটির চেয়ারম্যান খুলনার সোনাডাঙ্গার বাসিন্দা খবিরুজ্জামান, নির্বাহী পরিচালক খুলনার শিপইয়ার্ড এলাকার বাসিন্দা মো. সরোয়ার হোসাইন, কালিয়া শাখার জিএম উপজেলার জোকারচর গ্রামের মিলন দাশ, বাগেরহাট জেলার সিঅ্যান্ডবি বাজার শাখার সহকারী ম্যানেজার বাগেরহাটের সুগন্ধি গ্রামের শেখ গোলাম কিবরিয়া, কাইখালী শাখার ডিজিএম বাগেরহাটের জাড়িয়া মাইট কুমড়া গ্রামের আসাদুল ইসলাম, খুলনার ডুমুরিয়া শাখার জিএম রূপসা উপজেলার পাথরঘাটা গ্রামের আব্দুল জলিল শেখ, প্রধান কার্যালয় খুলনার ডিজিএম নড়াইলের কালিয়ার কালুখালী গ্রামের মিলন বিশ্বাস, বাগেরহাটের ফকিরহাট উপজেলার বেতাগা শাখার জিএম বেতাগা গ্রামের সুবির দাশ। মামলায় নাম উল্লেখসহ আসামি ২৫-৩০ জন।
স্থানীয়রা জানান, চলন্তিকার লোকজন পালিয়ে যাওয়ার খবর চাউর হয় ৩ এপ্রিল। প্রতারকদের গ্রেফতারের দাবিতে সহস্রাধিক মানুষ কালিয়া সদরে কয়েক দফা বিক্ষোভ মিছিল ও সমাবেশ করে। কর্মকর্তাদের বাড়ি ঘেরাও শুরু হলে কালিয়ার ইউএনও মো. নাজমুল হুদা আলোচনায় বসার আহ্বান জানান। গত রোববার রাতে চলন্তিকার কালিয়া শাখার জিএম মিলন দাশ, সহকারী ম্যানেজার শেখ গোলাম কিবরিয়া, ডিজিএম আসাদুল ইসলাম, জিএম মো.আব্দুল জলিল শেখ, ডিজিএম মিলন বিশ্বাস ও জিএম সুবির দাশ ইউএনওর কার্যালয়ে হাজির হন। তাদের উপস্থিতির কথা জানাজানি হলে গ্রাহকরা ইউএনওর কার্যালয়ের সামনে জড়ো হতে থাকে। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যাওয়ায় তখনই ওই ছয় কর্মকর্তাকে নড়াইলের কালিয়া থানায় সোপর্দ করে পরের দিন মামলায় গ্রেফতার দেখানো হয়।
গ্রাহকদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, মেয়াদ পূর্ণ হওয়া আমানতের টাকা তুলতে গেলে কর্মকর্তারা নানা অজুহাতে কালক্ষেপণ করতে থাকেন। আর তখনই সন্দেহ হয়। ২৮ মার্চ এনজিওর ব্যবস্থাপক টাকা আত্মসাৎ করে পালিয়ে গেছেন— এমন খবর ছড়িয়ে পড়লে শতাধিক গ্রাহক এনজিও কার্যালয় ঘেরাও করে। প্রধান হিসাবরক্ষক ভজন কুমার দাশসহ কয়েকজন কর্মচারী আটকা পড়েন। খবর পেয়ে কালিয়া থানা পুলিশ এসে তাদের উদ্ধার করে। পরে কালিয়া ইউএনও অফিসটি সিলগালা করে দেন।
জানতে চাইলে প্রতিষ্ঠানের নড়াইলের কালিয়া কার্যালয়ের ব্যবস্থাপক মিলন কুমার দাশ নড়াইল জেলা অনলাইন মিডিয়া ক্লাবের সভাপতি উজ্জ্বল রায়কে জানান, জানুয়ারি থেকে এমডি মো. সরোয়ার হোসাইন এবং চেয়ারম্যান মো. খবিরুজ্জামান আমানতের ৩০ কোটি টাকা আটকে দেন। এ কারণে তারা গ্রাহকদের টাকা ফেরত দিতে পারেননি।
এদিকে গ্রাহকদের অভিযোগ, গত ২৮ মার্চ প্রতিষ্ঠানের কার্যালয় অবরোধের সময় কালিয়া থানা পুলিশ বিক্ষুব্ধ গ্রাহকদের হটিয়ে দিয়ে এনজিও কর্মকর্তা-কর্মচারীদের পালিয়ে যেতে সাহায্য করেছে।
তবে নড়াইলের কালিয়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) শেখ শমশের আলী এ অভিযোগ অস্বীকার করে, নড়াইল জেলা অনলাইন মিডিয়া ক্লাবের সভাপতি উজ্জ্বল রায়কে জানান, মিলন দাশের ফোনকল পেয়ে তারা সেখানে যান এবং তাদের নিরাপত্তা দেন। তিনি আরো বলেন, বিষয়টি নিয়ে মামলা হয়েছে। ছয় আসামিকে গ্রেফতার করা হয়েছে। বাকিদের গ্রেফতারের চেষ্টা চলছে।
এ ব্যাপারে নড়াইলের কালিয়ার ইউএনও মো. নাজমুল হুদা নড়াইল জেলা অনলাইন মিডিয়া ক্লাবের সভাপতি উজ্জ্বল রায়কে জানান, গ্রাহকদের ক্ষতিপূরণের বিষয়ে কর্মকর্তারা সন্তোষজনক জবাব দিতে না পারায় এবং জনরোষ থেকে রক্ষার জন্য ছয়জনকে পুলিশে সোপর্দ করা হয়েছে।
ঘটনার পর থেকেই চলন্তিকার চেয়ারম্যান মো. খবিরুজ্জামানের সেলফোনটি বন্ধ পাওয়া যাচ্ছে।
খবর ৭১/ই: