খবর ৭১:পাকিস্তানের একটি আদালত মিথ্যা ধর্ম-অবমাননার অভিযোগ তুলে এক ছাত্রকে হত্যা করার দায়ে এক ব্যক্তির বিরুদ্ধে ফাঁসির আদেশ দিয়েছেন। আরো পাঁচজনের যাবজ্জীবন কারাদণ্ড হয়েছে। মামলায় আসামিদের ২৫ জনকে বিভিন্ন মেয়াদে কারাদণ্ড দেওয়া হয়েছে। ২৬ জনকে খালাস করে দেওয়া হয়েছে।
২০১৭ সালের এপ্রিলে পাকিস্তানের উত্তর-পশ্চিমাঞ্চলীয় খাইবার পাখতুনখা প্রদেশের একটি বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্যাম্পাসে কয়েকশ ছাত্র মাশাল খানকে ইসলাম অবমাননার অভিযোগে তার ছাত্রাবাস থেকে টেনেহিঁচড়ে নামিয়ে এনে নৃশংসভাবে পেটায় এবং পরে গুলি করে হত্যা করে। সে সময় খবর বের হয় যে মাশাল খান বিভিন্ন সময়ে “ইসলামবিরোধী” মনোভাব প্রকাশ করত, এবং হত্যাকাণ্ডের কিছুদিন আগে এক ধর্ম নিয়ে বিরাট তর্কে জড়িয়ে পড়েছিল।
নিরাপত্তার ভয়ে মামলাটির বিচারকার্য একটি কারাগারের ভেতরে হয়েছে। বুধবার রায়ের দিন হরিপুর কেন্দ্রীয় কারাগারের আশপাশের রাস্তা বন্ধ করে দেওয়া হয় এবং কয়েক পুলিশ মোতায়েন করা হয়।
খাইবার পাখতুনখা প্রদেশের মারদান শহরের আব্দুল ওয়ালি খান বিশ্ববিদ্যালয়ে গণযোগাযোগের ছাত্র ছিল ২৫ বছরের নিহত যুবক। নিজেকে সে মানবতাবাদী হিসেবে পরিচয় দিত। ছাত্রাবাসে তার ঘরের দেয়ালে চে গুয়েভারা এবং কার্ল মার্কসের ছবি টাঙিয়ে রেখেছিল। স্বাধীন মতপ্রকাশের সপক্ষে তারা স্লোগান রেখা ছিল তার ঘরের দেয়ালে।
হত্যাকাণ্ডের পর সে সময় খবর বের হয় যে মাশাল খান বিভিন্ন সময়ে “ইসলামবিরোধী” মনোভাব প্রকাশ করত, এবং হত্যাকাণ্ডের কিছুদিন আগে এক ধর্ম নিয়ে বিরাট তর্কে জড়িয়ে পড়েছিল। বিশ্ববিদ্যালয়ের নেতৃত্ব নিয়েও সমালোচনা করত সে।
২১০৭ সালের ১৩ই এপ্রিল গুজব ছড়িয়ে পড়ে যে মাশাল খান অনলাইনে ধর্ম অবমাননাকারী লেখা পোস্ট করেছেন। পাকিস্তানে ধর্ম অবমাননার শাস্তি মৃত্যুদণ্ড। এই গুজবের পর, শত শত ছাত্র এবং বিশ্ববিদ্যালয়ের কর্মচারী তার খোঁজ করতে থাকে। তারপর তারা ছাত্রাবাসে তার কক্ষের দরজা ভেঙে ঢুকে তাকে টেনেহিঁচড়ে নিয়ে যায়। এরপর মোবাইল ফোনে ছড়িয়ে পড়া ফুটেজে দেখা যায়, তাতে নির্মমভাবে পেটানো হচ্ছে এবং পরে গুলি করা হয়। মৃত্যুর পর অনেক মানুষ তার নিথর দেহকে আঘাত করতে থাকে।
তদন্তের পর পুলিশ বলে, মাশাল খান কোনো ধর্ম অবমাননা করেননি। তাকে পরিকল্পিতভাবে হত্যা করা হয়েছে। বিচার চলাকালে প্রায় ৫০ জনের মতো মানুষ সাক্ষ্য দেয় যে বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিচালনা নিয়ে সমালোচনার করার জন্য প্রশাসন তার ওপর ক্ষুব্ধ ছিল।
খবর ৭১/ এস: