লোকসান পুশিয়ে নিতে চৌগাছার কৃষকরা আগে ভাগেই ইরি ধান রোপনে ব্যস্ত হয়ে পড়েছেন

0
649

মুকুরুল ইসলাম মিন্টু চৌগাছা (যশোর)ঃ সবজি চাষে আশানুরুপ ফলন হয়েছে কিন্তু দাম পাইনি, অনুরুপ ভাবে আমন ধনের ফলনও বেশ ভাল হয়েছিল কিন্তু বাজারদর অনেক কম। পরপর দুই ফসলে কাংখিত মুল্য না পেয়ে আমরা অনেকটাই ক্ষতিগ্রস্থ্য। এবার আশায় বুক বেধেছি ইরি ধানের চাষ করে ওই লোকসানকে পুশিয়ে নিবো, কিন্তু সেটিও হবে কিনা জানিনা কথা গুলো বলছিলেন কৃষক বজলুর রহমান। পৌষের কনকনে ঠান্ডায় কষ্টকে কষ্ট মনে না করে সীমান্তবর্তী উপজেলা চৌগাছার কৃষকরা অনেক আশা নিয়ে চলতি ইরি বোরো মৌসুমের কিছুটা আগে ভাগেই ধান রোপনের কাজ শুরু করেছেন। চলতি মৌসুমে উপজেলাতে ১৮ হাজার হেক্টর জমিতে ইরি ধান চাষের লক্ষমাত্রা নির্ধারন করা হয়েছে বলে জানা গেছে।
সূত্র জানায়, চৌগাছার সব শ্রেনীর কৃষক প্রতি বছর শীত মৌসুম এলেই ইরি ধান রোপনে ব্যস্ত হয়ে পড়েন। এ বছরও তার বিন্দু মাত্র কমতি নেই। ইরি ধান রোপনের ভরা মৌসুম শুরু হতে এখনও বেশ দেরি, কিন্তু উপজেলার বেশ কিছু এলাকার কৃষকের যেন দোম ফেলার সময় নেই। পরপর দুইটি ফসলে লোকসান হওয়ায় ইরি ধানের মাধ্যমে ওই লোকসানকে পুশিয়ে নিতে তারা কিছুটা আগেই এবছর ধান রোপনের কাজ শুরু করেছেন। উপজেলা কৃষি অফিস সূত্রে জানা গেছে, চলতি মৌসুমে উপজেলায় প্রায় ১৮ হাজার হেক্টর জমিতে ইরি বোরো ধান রোপনের লক্ষ মাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে। এই লক্ষমাত্র গত বছর নির্ধারন ছিল ১৫ হাজার হেক্টর জমি। কৃষকের সুবিধার্থে উপজেলার প্রায় ৩শ কৃষককে কৃষি অফিসের পক্ষ হতে বিনামুল্যে সার ও বীজ বিতারণ করা হয়েছে। কোন প্রাকৃতিক দূর্যোগ দেখা না দিলে এই লক্ষ মাত্রা অতিক্রম করার সম্ভবনা রয়েছে বলে জানা গেছে। গতকাল উপজেলার বেশ কিছু এলাকার মাঠে যেয়ে দেখা যায় সেখানকার চাষিরা ইরি ধান রোপন, বীজতলা থেকে চারা তোলা, জমি প্রস্তুত, জমিতে পানি ও জৈব সার প্রয়োগ সহ নানা কাজে ব্যস্ত সময় পার করছেন। এ সময় কথা হয় তারনিবাস গ্রামের সফল চাষি বজলুর রহমানের সাথে। তিনি বলেন, পরিবার পরিজন নিয়ে বেঁচে থাকার তাগিদে কৃষি কাজই আমাদের এক মাত্র অবলম্বন। তাইতো হাঁড় কাঁপানো শীতে যখন মানুষ একটু গরমের পরশ নিতে ব্যস্ত ঠিক সেই সময় আমরা ক্ষেতে ফসল ফলানোর কাজে ব্যস্ত। তিনি বলেন, চলতি শীতের সবজির কাংখিত দাম না পেয়ে এ জনপদের কৃষকরা বেশ ক্ষতিগ্রস্থ্য। একই ভাবে আমন ধানের বাজার দর কম থাকায় কৃষক হতাশাগ্রস্থ্য। অধিকাংশ চাষি ধার দেনা হয়ে ক্ষেতে ফসল উৎপাদন করেন, সেই ফসল যদি বাজারে চাহিদা না থাকে তখন কৃষকের সমস্যার শেষ থাকেনা। তিনি বলেন, ইরি ধান রোপনের এখনও সেভাবে মৌসুম শুরু হয়নি। কিন্তু এ অঞ্চলের কৃষকরা ধান লাগানো শুরু করে দিয়েছে। ইরি ধানের দাম কি হবে তা ভাবছি না, ধান না লাগালে জমিটা অলস পড়ে থাকবে তাই বলা চলে বাধ্য হয়ে ধান লাগাতে হচ্ছে। এ ছাড়া ইরি ধান উঠার সময় অর্থাৎ চৈত্র বৈশাখে আবহাওয়া কৃষকের অনুকুলে থাকে না, এই দিকটা বিবেচনা করেও একটু আগেই রোপানের কাজ শুরু করেছি। কৃষক বজলুর রহমানের মত ওই মাঠে কৃষক হামজার রহমান ৩ বিঘা, আমিনুর রহমান ৭ বিঘা, শামীম রেজা আড়াই বিঘা, মজনুর রহমান ৬ বিঘা, জাহিদুল ইসলাম ৩ বিঘা, আশাদুল ইসলাম ২ বিঘা, কামারুল ইসলাম ২ বিঘা, আবুল হোসেন ৩ বিঘা, বাহার আলী ৪ বিঘা, মুক্তার হোসেন ৩ বিঘা জমিতে ইরি ধান চাষের লক্ষে নিরালস ভাবে কাজ করে যাচ্ছেন। মাটির গুনাগুন ও আবহাওয়া বিশ্লেষনে এ অঞ্চলের চাষিরা নানান জাতের ধান চাষ করে থাকেন। তবে চলতি মৌসুমে উপজেলাতে ব্রি-৫০, ব্রি-২৮, ব্রি-৬৩, ব্রি-৫৮, কাজললতা, শুভললতা, বাসমতি জাতের ধান চাষ বেশি হচ্ছে। তবে চলতি মৌসুমে ক্ষেতের পানি, ধান রোপন, সার ও কীটনাশকের দাম নিয়ে বেশ চিন্তিত কৃষকরা। তারা জানান, ১ বিঘা জমিতে ধান চাষ করতে শুরু করে ধান কৃষকের ঘরে আশা পর্যন্ত ১৪ থেকে ১৬ হাজার টাকা ব্যয় হয়। কোন প্রাকৃতিক দূর্যোগ দেখা না দিলে প্রতি বিঘাই ২৫ থেকে ২৮ মন ধান পাওয়া সম্ভব। বাজর দর ভাল থাকলে তখনই কৃষকের মুখে হাসি ফুটবে। কৃষকরা কৃষি কাজে ব্যবহৃত সব কিছুর দাম নাগালের মধ্যে রাখার আহবান জানান। উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা রইচ উদ্দিন বলেন, চলতি মৌসুমে উপজেলাতে ১৮ হাজার হেক্টর জমিতে ইরি ধান চাষের লক্ষমাত্রা নির্ধারন করা হয়েছে। মাটির গুনাগুনে এলাকা বিশেষ বিভিন্ন জাতের ধান চাষ হয়ে থাকে। তিনি বলেন, ধান চাষে কৃষককে বেশি বেশি মনোনীবেশ করতে কৃষি অফিস সর্বদা কৃষকের সাথেই আছেন।

খবর৭১/ইঃ

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here