খবর৭১: জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট দুর্নীতি মামলায় দলীয় প্রধান বেগম খালেদা জিয়ার বিপক্ষে রায় গেলে নেতারা কঠোর আন্দোলনের হুঁশিয়ারি দিলেও নীতিনির্ধারকরা আপাতত সেদিকে যাচ্ছেন না। এমনকি আগে থেকেই কঠোর কোনো কর্মসূচির দিকেও যাওয়ার বিপক্ষে তারা। রায়ের আগে দলের কেন্দ্রীয় নির্বাহী কমিটির সভা ডেকে, স্থায়ী কমিটির সঙ্গে আবারো বৈঠক করে কর্মসূচি ও আগামী দিনে দল পরিচালনার কর্মপরিকল্পনা ঠিক করবেন বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়া।
জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট দুর্নীতি মামলার রায় ঘোষণার তারিখ নির্ধারিত হওয়ার প্রেক্ষাপটে শনিবার রাতে স্থায়ী কমিটির বৈঠকে এমন সিদ্ধান্ত হয়েছে বলে বৈঠক সূত্রে জানা গেছে।
বৈঠকে বেগম খালেদা জিয়াকে মামলায় সাজা দিয়ে নির্বাচনের বাইরে রাখার ষড়যন্ত্র হলে সেই নির্বাচনে অংশ না নেয়ার ব্যাপারে শীর্ষ নেতারা একমত পোষণ করেছেন বলে বৈঠক সূত্রে জানা গেছে।
জানা গেছে, রায়কে ঘিরে পরবর্তী করণীয় এবং কেন্দ্রীয় নেতাদের প্রতি দিকনির্দেশনা দিতে আগামী ৮ ফেব্রুয়ারি দলের জাতীয় নির্বাহী কমিটির সভা ডাকার চিন্তা করেছেন বিএনপি চেয়ারপারসন। এর আগে আগামী ১ ফেব্রুয়ারি আবারো দলের জাতীয় স্থায়ী কমিটির সদস্যদের নিয়ে বসবেন বিএনপির প্রধান।
২০১৬ সালের ১৯ মার্চ অনুষ্ঠিত দলের ষষ্ঠ জাতীয় কাউন্সিলের পর গঠিত কেন্দ্রীয় নির্বাহী কমিটির কোনো বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়নি।
সেনা সমর্থিত তত্ত্বাবধায়ক সরকারের আমলে ২০০৮ সালের জুলাইয়ে দুর্নীতি দমন কমিশনের করা জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট দুর্নীতি মামলার রায় ঘোষণা হচ্ছে আগামী ৮ ফেব্রুয়ারি। খালেদা জিয়া, তার ছেলে তারেক রহমানসহ আসামি করা হয়েছে ছয় জনকে।
মামলার সাড়ে নয় বছর পর গত বৃহস্পতিবার পুরান ঢাকার বিশেষ জজ আদালতের বিচারক আখতারুজ্জামান রায়ের তারিখ ঘোষণা করেন। এই মামলায় বিচারিক আদালতে শুনানি হয়েছে মোট ২৩৬ কার্যদিবস। আবার অভিযোগপত্র গঠন, বিচারের নানা বিষয় এবং দুইবার বিচারকের বিরুদ্ধে অনাস্থাসহ দেড়শ বারে মতো উচ্চ আদালতে গেছেন বিএনপির নেতারা।
আর এই মামলায় সাক্ষ্যগ্রহণ ও আত্মপক্ষ সমর্থনে খালেদা জিয়ার দীর্ঘ বক্তব্য শেষে রাষ্ট্রপক্ষ এক দিন, খালেদা জিয়া ১০ দিন, আরও দুই আসামি পাঁচ দিন যুক্তি উপস্থাপন করেছেন। আর তিন আসামি পলাতক থাকায় তাদের পক্ষে যুক্তি দেয়ার সুযোগ ছিল না।
২৫ জানুয়ারি রায়ের দিন ঘোষণার পর থেকে বিএনপি এবং আওয়ামী লীগ নেতারা পাল্টাপাল্টি হুঁশিয়ারি দিচ্ছেন। এক পক্ষ বলছে খালেদার সাজা হলে দেশে আগুন জ্বলবে, অন্য পক্ষ বলছে, দেশে বিশৃঙ্খলার চেষ্টা হলে দমন হবে কঠোরভাবে।
এই পরিস্থিতিতে গতকাল শনিবার রাত সাড়ে নয়টার দিকে খালেদা জিয়া তার দলের সর্বোচ্চ নীতি নির্ধারণী পর্ষদ স্থায়ী কমিটির নেতাদের নিয়ে করণীয় বিষয়ে বৈঠকে বসেন।
স্থায়ী কমিটির সদস্যেদের নিয়ে করা দীর্ঘ বৈঠকে রায় ঘোষণার পর তা রাজনৈতিক ও আইনগতভাবে মোকাবেলারও সিদ্ধান্ত হয় বলে জানা গেছে। এছাড়া রায় বিপক্ষে গেলে তারপর কর্মসূচি নেওয়ার নীতিগত সিদ্ধান্ত নিয়েছে স্থায়ী কমিটি।
বৈঠক চলাকালে দলের মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলেন। এ সময় তার কাছে রায়কে নিয়ে দল কোনো কর্মসূচি গ্রহণ করা হয়েছে কি না জানতে চাওয়া হয়। জবাবে তিনি বলেন, ‘রায় ঘোষণা হওয়ার পর এটা জানাব। পুরো বিষয় আমরা জানাব রায় ঘোষণা হলেই।’
জানা গেছে, রায় বিপক্ষে গেলে জামিন না হওয়া পর্যন্ত রাজপথে থাকার পক্ষে মত দেন সবাই। তবে জ্বালাও পোড়াও বা ধ্বংসাত্মক কোনো কর্মসূচি না দেয়ার ব্যাপারে অনেকে মত দেন। তৃতীয় কোনো পক্ষ ফায়দা লুটতে না পারে এমন কর্মসূচি না দেয়ার পক্ষে তারা মত দেন।
অপর এক প্রশ্নের জবাবে ফখরুল বলেন, ‘রায় মোকাবেলা করার প্রশ্ন কেন আসবে? কারণ রায়তো আমার পক্ষেও আসতে পারে।’
বিএনপি মহাসচিব বলেন, ‘এই রায়ের তারিখ ঘোষণাকে কেন্দ্র করে গোটা জাতি আজ উদ্বিগ্ন ও ক্ষুব্ধ। আমরা মনে করি, এটা বাংলাদেশের গণতন্ত্রকে ধ্বংসের জন্য এবং সবার অংশগ্রহণে ইনক্লুসিভ ইলেকশন নষ্ট করার জন্য। এটি একটি গভীর ষড়যন্ত্র বলে আমরা মনে করি।’
জাতীয় নির্বাচন সামনে রেখে বিএনপি ও দেশনেত্রীকে নির্বাচন প্রক্রিয়া থেকে বাইরে রাখতে দ্রুত রায় ঘোষণা সেই অপচেষ্টার অংশ বলেই দেশবাসী মনে করে, যোগ করেন ফখরুল।
‘সরকারপ্রধান থেকে শুরু করে কয়েক দিন ধরে সরকারের মন্ত্রীরা এবং বিশেষ দূত এই মামলার রায় এবং তার সম্ভাব্য পরিস্থিতি মোকাবেলার বিষয়ে সরকার ও সরকারি দলের বিভিন্ন প্রস্তুতির কথা যে ভাষায় বলে চলেছেন, তাতে প্রমাণিত হয়, মামলা আদালতে বিচারাধীন থাকলেও তার রায় কী হবে তা সরকার ও সরকারি দলের জানা আছে।’
খবর৭১/জি: