এশিয়ান ক্লিয়ারিং ইউনিয়নের (আকু) বিল বাবদ ১ দশমিক ৮৮ বিলিয়ন বা ১৮৮ কোটি ডলার পরিশোধ করেছে বাংলাদেশ। এতে সুদের হার ধরা হয়েছে ৪ দশমিক ৩২ শতাংশ। বিল পরিশোধের পর রিজার্ভ কমে ২০ বিলিয়নের ঘরে দাঁড়িয়েছে। মঙ্গলবার (৬ মে) এই আকুর বিল পরিশোধ করা হয়।
আকু হলো একটি আন্তঃদেশীয় লেনদেন নিষ্পত্তি ব্যবস্থা। এর মাধ্যমে বাংলাদেশ, ভুটান, ভারত, ইরান, মালদ্বীপ, মিয়ানমার, নেপাল, পাকিস্তান ও শ্রীলঙ্কার মধ্যকার লেনদেনের দায় পরিশোধ করা হয়। ইরানের রাজধানী তেহরানে আকুর সদর দপ্তর। এ ব্যবস্থায় সংশ্লিষ্ট দেশগুলোর কেন্দ্রীয় ব্যাংক প্রতি দুই মাস অন্তর আমদানির অর্থ পরিশোধ করে। তবে এখন আকুর সদস্য পদ নেই শ্রীলঙ্কার। অর্থনৈতিক সঙ্কটের কারণে দীর্ঘদিন ধরে আমদানি ব্যয় পরিশোধের বিভিন্ন শর্ত পূরণে ব্যর্থ হওয়ায় দেশটির আকু সদস্যপদ সাময়িক স্থগিত করা হয়েছে।
বাংলাদেশ ব্যাংক সূত্র জানিয়েছে, গত মার্চ ও এপ্রিল মাসের আমদানি ব্যয়ের বকেয়া বাবদ ১.৮৮ বিলিয়ন ডলার পরিশোধ করছে বাংলাদেশ, যা গত তিন বছরের মধ্যে সর্বোচ্চ। তথ্য অনুযায়ী, এর আগে ২০২২ সালের জুলাই মাসে মে-জুন সময়ের আমদানির বিপরীতে সর্বোচ্চ ১.৯৬ বিলিয়ন ডলার আকু’র বিল বাবদ পরিশোধ করা হয়েছিল।
এ বিষয়ে বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্বাহী পরিচালক ও মুখপাত্র আরিফ হোসেন খান বলেন, আকুর বিল পরিশোধের প্রক্রিয়া প্রক্রিয়া শুরু ও শেষ হতে সাধারণত দুই একদিন সময় লাগে।
বাংলাদেশ প্রতি দুই মাস অন্তর আকুর বিল পরিশোধ করে থাকে। সর্বশেষ গত ৯ মার্চ জানুয়ারি-ফেব্রুয়ারি মাসের আমদানির জন্য ১.৭৫ বিলিয়ন ডলার পরিশোধ করা হয়েছিল, যার ফলে বিপিএম৬ অনুযায়ী রিজার্ভ নেমে গিয়েছিল ২০ বিলিয়ন ডলারের নিচে। তবে এরপরের মাসগুলোতে রিজার্ভ আবারও বেড়েছে।
কেন্দ্রীয় ব্যাংকের এক শীর্ষ কর্মকর্তা জানান, ২০২২ সালের আগেও প্রতি মাসে গড়ে ২ বিলিয়ন ডলার আকুকে পেমেন্ট করতে হতো। কিন্তু ডলার সংকটের কারণে কেন্দ্রীয় ব্যাংক আমদানিতে নানা বিধিনিষেধ আরোপ করায় পরিমাণটি কমতে শুরু করে। সেই সঙ্গে আকু সদস্য দেশগুলো থেকে আমদানিও হ্রাস পাওয়ায় পেমেন্ট কমে যায়।
এদিকে, গত ৪ মে দেশে বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ ছিল ২১.৯৭ বিলিয়ন ডলার। এবারের আকুর বিল পরিশোধের পরও রিজার্ভ ২০ বিলিয়ন ডলারের ঘরে নামতে যাচ্ছে। গত সপ্তাহে দেশের বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ ছিল ২৭ দশমিক ৪১ বিলিয়ন ডলার। আর আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের (আইএমএফ) হিসাব পদ্ধতি বিপিএম-৬ অনুযায়ী দেশের রিজার্ভ উঠেছিল ২২ দশমিক শূন্য ৫ বিলিয়ন ডলারে।
অন্যদিকে রেমিট্যান্সের ইতিবাচক প্রবাহে চাঙ্গা রয়েছে রিজার্ভ। বিভিন্ন দায় দেনা পরিশোধের পরেও রিজার্ভ স্থিতিশীল থাকছে। দেশের ইতিহাসে দ্বিতীয় সর্বোচ্চ রেমিট্যান্স এসেছে গত এপ্রিল মাসে। সদ্য সমাপ্ত হাওয়া এই মাসে ২ দশমিক ৭৫ বিলিয়ন বা ২৭৫ কোটি ডলারের রেমিট্যান্স পাঠিয়েছেন প্রবাসীরা। বাংলাদেশি মুদ্রায় (প্রতি ডলার ১২২ টাকা হিসাবে) যার পরিমাণ ৩৩ হাজার ৫৫০ কোটি টাকার বেশি। সে হিসেবে প্রতিদিন রেমিট্যান্সে এসেছে ৯ কোটি ডলারের বেশি।
এর আগে, ইতিহাসের সর্বোচ্চ রেমিট্যান্স এসেছিল গত মার্চ মাসে। মার্চের পুরো সময়ে রেমিট্যান্স এসেছে ৩.২৯ বিলিয়ন (৩২৯ কোটি ডলার) ডলারের রেমিট্যান্স। বাংলাদেশি মুদ্রায় (প্রতি ডলার ১২২ টাকা হিসাবে) যার পরিমাণ ছিল ৪০ হাজার ১৩৮ কোটি টাকা। সে হিসাবে প্রতিদিন এসেছিল প্রায় ১০.৬১ কোটি ডলার বা ১২৯৫ কোটি টাকা করে।
চলতি অর্থবছরের দ্বিতীয় মাস আগস্ট থেকে টানা ৯ মাস দুই বিলিয়ন ডলারে বেশি রেমিট্যান্স আসছে প্রতি মাসে। রেমিট্যান্সের এই ধারা অব্যাহত থাকলে বিভিন্ন বিল পরিশোধের পরও রিজার্ভ শক্ত অবস্থানে থাকার সম্ভাবনা রয়েছে।