খবর ৭১: বাংলাদেশের বেশ কয়েকটি জেলায় এক লাখেরও বেশি প্রান্তিক নারীকে উদ্যোক্তা হিসেবে গড়ে তোলার মাইলফলক অর্জন করেছে জনপ্রিয় কোমল পানীয় কোম্পানি কোকা-কোলা। বেসরকারি উন্নয়ন সংস্থা ইউনাইটেড পারপাস এর সহযোগিতায় কোকা-কোলার এই কর্মসূচি নারীর ক্ষমতায়নকে গুরুত্ব দিয়েছে, যা বাংলাদেশ সরকারের অষ্টম প বার্ষিকী পরিকল্পনার অন্যতম প্রধান উদ্দেশ্য। সরকারি ও বেসরকারি উদ্যোগের ফলে বাংলাদেশের নারীরা এখন অতীতের যেকোনো সময়ের চেয়ে অধিক ক্ষমতায়িত।
কোকা-কোলা বৈশ্বিক ‘৫/২০’ (ফাইভ বাই টোয়েন্টি) ক্যাম্পেইনের আওতায় তার অংশীদারদের সঙ্গে নিয়ে সারাবিশ্বে ৬০ লাখের বেশি নারীকে স্বাবলম্বী ও ক্ষমতায়িত করেছে। এই ক্যাম্পেইনের উদ্দেশ্য ছিল ২০২০ সালের মধ্যে বিশ্বের ৫০ লাখ নারীকে আর্থিক ও আনুষঙ্গিক সহায়তা দিয়ে স্বাবলম্বী করে তোলা।
‘ফাইভ বাই টোয়েন্টি’ ক্যাম্পেইনের অংশ হিসেবে ২০১৫ সালে, কোকা-কোলা বাংলাদেশে উইমেন বিজনেস সেন্টার (ডব্লিউবিসি) বা নারী ব্যবসা কেন্দ্র নামে অনন্য ও ব্যতিক্রমধর্মী মডেলের বাস্তবায়ন শুরু করে। এই প্রকল্পের লক্ষ্য নারী উদ্যোক্তাদের প্রয়োজনীয় ব্যবসায়িক দক্ষতা উন্নয়ন প্রশিক্ষণ, বাজার তথ্য, কৃষি প্রশিক্ষণ, মোবাইল ব্যাংকিং সহায়তা, স্বাস্থ্য পরামর্শ, দিক নির্দেশনা ও নেটওয়ার্কিং সুবিধা প্রদান এবং বিভিন্ন বিষয়ে পরামর্শ ও আর্থিক সহায়তা দেয়া।
নারী উদ্যোক্তারা সচরাচর যেসব বাধা-বিপত্তির সম্মুখীন হন, সেসব সমস্যা চিহ্নিত করার পাশাপাশি সমস্যা সমাধানে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপের কথা মাথায় রেখে নারী পরিচালিত এসব ব্যবসা কেন্দ্র গড়ে তোলা হয়েছে। দেশের উত্তরপশ্চিম ও দক্ষিণপশ্চিমের জামালপুর, খুলনা ও বাগেরহাট জেলায় বর্তমানে ৭০টির বেশি ডব্লিউবিসি কেন্দ্র ও ২০০ উপ-কেন্দ্র রয়েছে। এসব কেন্দ্র ও উপকেন্দ্রের মাধ্যমে ২০২০ সালে মধ্যে ১ লক্ষেরও বেশি নারীকে ক্ষমতায়িত করার মাইলফলক অর্জন করেছে কোকা-কোলা।
জামালপুর জেলার সিভিল সার্জন প্রণয় কান্তি দাস বলেন, “এই প্রকল্পের মাধ্যমে সমাজে নারীর ক্ষমতায়ন তৈরির প্রচেষ্টার জন্য কোকা-কোলা ও ইউনাইটেড পারপাসকে ধন্যবাদ জানাই। ডব্লিউবিসি প্রকল্প শুধুমাত্র প্রান্তিক নারীদের ক্ষমতায়িত করেনি, তাদের পরিবারের সদস্যরাও এই প্রকল্পের সুবিধা পাচ্ছেন। তাই এই প্রচেষ্টার জন্য আমরা তাদের কাছে কৃতজ্ঞ।”
ডব্লিউবিসি প্রকল্পের মাধ্যমে এক লাখ নারী স্বাবলম্বী হওয়ার পাশাপাশি এসব উদ্যোক্তার অর্থনৈতিক ক্ষমতায়নে পরোক্ষভাবে উপকৃত হয়েছেন চার লাখ মানুষ। প্রকল্পের শুরুতে নারীদের মূলধন প্রায় ৫০ হাজার টাকার মতো থাকলেও ২০২১ সালে তা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ১ লাখ ৩০ হাজার টাকায়।
৩০টি ডব্লিউবিসি কেন্দ্র থেকে ৫০০ জন উপকারভোগীকে নিয়ে করা এক জরিপে দেখা গেছে, জরিপে অংশ নেয়া ৬০ শতাংশ নারী জানিয়েছেন, ডব্লিউবিসি কেন্দ্র ছাড়া তারা আইটি বা তথ্যপ্রযুক্তি সুবিধা পেতেন না। জরিপে অংশ নেয়া শতভাগ নারী বলেছেন তারা ডব্লিউবিসি সেন্টারের স্বাস্থ্যসেবা পেয়েছেন। কৃষিকাজের জন্য ডব্লিউবিসি কেন্দ্র থেকে পণ্য কিনেছেন বলে জানিয়েছেন ৭০ শতাংশ নারী এবং ৪৩ শতাংশ নারী ডব্লিউবিসি কেন্দ্রে পণ্য বিক্রি করেছেন। জরিপে অংশ নেয়া একশ শতাংশ নারীরই বলেছেন তাদের পরিবর্তনকে ইতিবাচকভাবে দেখা হচ্ছে। ৭০ শতাংশ নারী উদ্যোক্তা জানিয়েছেন পরিবারে সিদ্ধান্ত নেবার দায়িত্ব তারা যৌথভাবে পালন করেন, বাকি ৩০ শতাংশ নারী একাই পরিবারে সিদ্ধান্ত নিয়ে থাকেন।
এছাড়া, ৯০ শতাংশ উদ্যোক্তা জানিয়েছেন আয় করা অর্থের পুরোপুরি নিয়ন্ত্রণ তাদের নিজের কাছে থাকে। শতভাগ উদ্যোক্তা ও কমিউনিটি সদস্যরা জরিপে বলেছেন, বাইরের অর্থসাহায্য ছাড়াই ডব্লিউবিসি কেন্দ্র টেকসই।
ইউনাইটেড পারপাসের কান্ট্রি ডিরেক্টর শ্রীরামাপ্পা গনচিকার বলেন, “ইউনাইটেড পারপাসের অভিজ্ঞতা বলছে, এই প্রকল্পে দেয়া প্রাথমিকভাবে সহায়তা ছাড়িয়ে ডব্লিউবিসি এখন টেকসই ও পরিমাপযোগ্য মডেলে পরিণত হয়েছে। প্রকল্পের সময়ে দেখা গেছে আগের চেয়ে নারীদের অর্থনৈতিক অবস্থার উন্নতি হয়েছে। এ ধরনের একটি উচ্চাকাঙ্খী প্রকল্প সামনে নিয়ে আসা ও তা বাস্তবায়ন করায় আমরা কোকা-কোলাকে বিশেষভাবে ধন্যবাদ জানাচ্ছি।”
কোকা-কোলা ১ লাখের বেশি প্রান্তিক নারীকে স্বাবলম্বী ও ক্ষমতায়িত করার এই অর্জন উদযাপন করেছে জামালপুরের ডব্লিউবিসি কেন্দ্রে। মঙ্গলবার (১৬ মার্চ) এই উপলক্ষে আয়োজিত অনুষ্ঠানে যোগ দেন ফারাহ শারমিন আওলাদ, কান্ট্রি ম্যানেজার পাবলিক এফেয়ার্স অ্যান্ড কমিউনিকেশন, কোকাকোলা বাংলাদেশ, শ্রীরামাপ্পা গনচিকার, কান্ট্রি ডিরেক্টর, ইউনাইটেড পারপাস, জামালপুর জেলার সিভিল সার্জন প্রণয় কান্তি দাস এবং প্রকল্পের ৫০ জন উদ্যোক্তা ও উপকারভোগী।
এই উপলক্ষে কোকা-কোলা বাংলাদেশ এক বিবৃতিতে জানায়, “বিশ্বের অর্থনৈতিক খাতগুলোর মধ্যে অন্যতম অপ্রচলিত উৎস হচ্ছে এই নারীরা। আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল- আইএমএফ এর ২০১৮ সালের এক প্রতিবেদন অনুসারে, নারীর ক্ষমতায়ন উৎপাদনশীলতা ও অর্থনৈতিক বৈচিত্র্যতার পাশাপাশি আয় সমতা ও অন্যান্য ইতিবাচক ফল বয়ে আনে। এই নারী উদ্যোক্তাদের তাদের সম্প্রদায়ে এবং বাংলাদেশে আমাদের ব্যবসায় আনা পরিবর্তন আমরা উদযাপন করছি।”
বিবৃতিতে আরো বলা হয়, “ইউনাইটেড পারপাস ও অন্য সহযোগীদের ধন্যবাদ জানাচ্ছি যারা ১ লক্ষেরও বেশি নারীর জীবন বদলে দিতে সাহায্য করেছে। যেমনটি আমাদের লক্ষ্য ছিল পৃথিবীকে আরো প্রাণবন্ত করা ও প্রতিটি দিনের ইতিবাচক পার্থক্য সামনে নিয়ে আসা।”
অংশীদারিত্বমূলক সুন্দর আগামী ভবিষ্যতের জন্য নারীর ক্ষমতায়ন ইস্যুতে কোকা-কোলা বাংলাদেশে তার সমর্থন অব্যাহত রাখবে।
কোকা-কোলা বাংলাদেশ সম্পর্কে:
কোকা-কোলা সমগ্র বাংলাদেশ জুড়ে হাজার হাজার ভোক্তার কোমল পানীয়ের চাহিদা পূরণ করছে, যা তাঁদের সতেজ ও চনমনে থাকতে বেশ সহায়ক। কোকা-কোলার পণ্যগুলোর মধ্যে রয়েছে- কোকা-কোলা, ডায়েট কোক, স্প্রাইট, ফান্টা, কিনলে পানি, কিনলে সোডা, কোকা-কোলা জিরো, স্প্রাইট জিরো, থামস আপ কারেন্ট ইত্যাদি। কোকা-কোলা এদেশে ৮ শতাধিক লোকের সরাসরি এবং পরোক্ষভাবে ৫ হাজারেরও বেশি মানুষের কর্মসংস্থান সৃষ্টি করেছে। কোকা-কোলা নানা ধরনের কর্মসূচির মাধ্যমে কমিউনিটি বা সমাজকে শক্তিশালী করে তোলার ব্যাপারে প্রতিশ্রতিব্ধ। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য দু’টি কর্মসূচি হলো: ‘এভরি ড্রপ ম্যাটারস’ ও ‘ওয়াশ’। এই দু’টি কর্মসূচির আওতায় দেশব্যাপী বিশুদ্ধ পানি সরবরাহ, স্যানিটেশন বা পয়ঃনিষ্কাশন, হাইজিন বা স্বাস্থ্যবিধি বা পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা এবং স্কুলে বৃষ্টির পানি সংরক্ষণের কার্যক্রম চলছে। এছাড়া নারীদের অর্থনৈতিক ক্ষমতায়নের লক্ষ্যে বাংলাদেশে কোকা-কোলা ‘উইমেন বিজনেস সেন্টার’ নামে তার ব্যতিক্রমধর্মী ফ্ল্যাগশিপ প্রোগ্রাম পরিচালনা করছে, যা ২০২০ সালের মধ্যে দেশটির ১,০০,০০০ নারীকে স্বাবলম্বী হয়ে উঠতে সহায়ক ভূমিকা পালন করছে।