ভাষা আন্দোলনে বঙ্গবন্ধুর অবদান অস্বীকার করা হতো: প্রধানমন্ত্রী

0
185

খবর৭১ঃ
ভাষা আন্দোলনে জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের অবদানের কথা একসময় অস্বীকার করা হতো বলে অভিযোগ করেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এজন্য তিনি বারবার সেই অবদানের কথা তুলে ধরতেন। তবে এখন এটা প্রতিষ্ঠিত হয়ে গেছে, তাই তিনি আর নতুন করে বলতে চান না বলে জানিয়েছেন বঙ্গবন্ধু কন্যা।

রবিবার বিকালে মহান শহীদ ও আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস উপলক্ষে আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা ইনস্টিটিউট আয়োজিত চার দিনব্যাপী অনুষ্ঠানমালা উদ্বোধনকালে প্রধানমন্ত্রী এসব কথা বলেন। প্রধানমন্ত্রী তার সরকারি বাসভবন গণভবন থেকে ভার্চুয়ালি এই অনুষ্ঠানে যোগ দেন।

শেখ হাসিনা বলেন, ‘ভাষা আন্দোলনে বঙ্গবন্ধুর অংশগ্রহণের বিষয়টি অনেক জ্ঞানী-গুণী বুদ্ধিজীবী মানতে রাজি হতেন না। তারা বলার চেষ্টা করেছেন- ‘সে তো জেলে ছিল, সে আবার ভাষা আন্দোলন করবে কীভাবে?’ কিন্তু আমার প্রশ্ন—জেলে তিনি গিয়েছিলেন কেন? তাকে জেলে যেতে হয়েছিল ভাষা আন্দোলন শুরু করার কারণেই। সে কারণে তিনি বারবার গ্রেপ্তার হন। দীর্ঘ কারাবাস তাকে করতে হয়।’

প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘ভাষা আন্দোলনে জাতির পিতার অবদানের কথা আমি বারবার বক্তব্যে বলেছি। যখন সবাই অস্বীকার করতো, তখন আমি এটা বেশি করেই বলতাম। আজ মনে হচ্ছে, আমার আর বলার প্রয়োজন নেই। এখন সবই জানতে পারবেন। পাকিস্তানের গোয়েন্দা রিপোর্ট থেকে এ সম্পর্কে অনেক বেশি জানতে পারবেন।’

সরকারপ্রধান বলেন, ‘আমরা যে চেতনা নিয়ে কাজ করছিলাম, বঙ্গবন্ধুকে হত্যার পর সেই চেতনা মুছে ফেলার চেষ্টা হচ্ছিল। বাংলাদেশের স্বাধীনতা সংগ্রাম থেকে বঙ্গবন্ধুর নাম মুছে ফেলার চেষ্টা হয়েছিল।’

তিনি ভাষা সংগ্রামের তাৎপর্য তুলে ধরে বলেন, ‘বিজাতীয় ভাষা চাপিয়ে দেয়ার অপচেষ্টা রুখে দিয়েছিল তৎকালীন ছাত্রসমাজ। ১৯৫২ সালের এই দিনে মাতৃভাষা বাংলার মর্যাদা রাখতে গিয়ে বুকের রক্ত ঢেলে দিয়েছিলেন বাংলার দামাল ছেলেরা।’

প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘রক্তের বিনিময়ে আমরা যে নিজের ভাষায় কথা বলার সুযোগ পেয়েছি, আজ তার আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি পেয়েছি। আজ কেবল বাংলাদেশ নয়, বিশ্বের বিভিন্ন দেশও এ দিবসটি পালন করছে। আন্তর্জাতিক যোগাযোগের ক্ষেত্রে অবশ্যই আমাদের অন্য ভাষা শিখতে হবে। কিন্তু সেই সঙ্গে মাতৃভাষাও শিখতে হবে।’

রবিবার বিকালে মাতৃভাষা সংরক্ষণ, পুনরুজ্জীবন, বিকাশ, চর্চা, প্রচার-প্রসারে অবদানের জন্য তিন ব্যক্তি এবং এক প্রতিষ্ঠানের কাছে প্রথমবারের মতো তুলে দেয়া হয় ‘আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা পদক’। প্রধানমন্ত্রীর পক্ষে শিক্ষামন্ত্রী ডা. দীপু মনি এই পদক তুলে দেন।

করোনাভাইরাসের কারণে সশরীরে উপস্থিত থাকতে পারেননি জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রী হলে স্বাধীনতা থাকে না, বন্দি জীবনযাপন করতে হয়।’ এ সময় তিনি তার শিক্ষক অধ্যাপক রফিকুল ইসলামের কাছে ক্ষমা চান এবং তাকে অভিনন্দন জানান।

অধ্যাপক মোহাম্মদ রফিকুল ইসলাম জাতীয় পর্যায়ে মাতৃভাষার সংরক্ষণ, পুনরুজ্জীবন ও বিকাশে অবদানের জন্য ২০২১ সালের এই সম্মননা পেলেন।

এছাড়া জাতীয় পর্যায়ে ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠীর ভাষা সংরক্ষণে অবদানের জন্য খাগড়াছড়ির জাবারাং কল্যাণ সমিতির নির্বাহী পরিচালক মথুরা বিকাশ ত্রিপুরা আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা পদক পেয়েছেন।

আন্তর্জাতিক পর্যায়ে উজবেকিস্তানের গবেষক ইসমাইলভ গুলম মিরজায়েভিচ এবং লাতিন আমেরিকার আদি ভাষাগুলো নিয়ে কাজ করা বলিভিয়ার অনলাইন উদ্যোগ অ্যাক্টিভিজমো লেংকুয়াস এ বছর বাংলাদেশ সরকারের এ সম্মাননা পেয়েছেন।

এ বছরই প্রথম এই সম্মাননা দেয়া হলো। দুই বছর পরপর জাতীয় পর্যায়ে দুটি এবং আন্তর্জাতিক পর্যায়ে দুটি পদক দেয়া হবে।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here