ডোপ টেস্টের মুখোমুখি ১২ হাজার কারারক্ষী

0
260
ডোপ টেস্টের মুখোমুখি ১২ হাজার কারারক্ষী

খবর৭১ঃ
কারাগারে মাদকসেবী বন্দির সংখ্যা দিন দিন বেড়েই চলছে। দেশের ৬৮টি কারাগারে প্রায় ৭০ হাজার বন্দি রয়েছে। এর মধ্যে ২৫ হাজার বন্দি মাদক মামলার আসামি। মাদক মামলায় বন্দিদের মধ্যে বেশিরভাগই মাদকাসক্ত। এ কারণে কয়েদি ও হাজতিদের নিয়ে সব সময় বেকায়দায় থাকে কারা কর্তৃপক্ষ।

বন্দিদের পাশাপাশি বিভিন্ন সময়ে কারারক্ষীদের বিরুদ্ধে মাদক সেবন ও মাদক ব্যবসার অভিযোগ রয়েছে। মাদক ব্যবসার সঙ্গে জড়িত থাকার অভিযোগে বেশ কয়েক জন কারারক্ষীকে বরখাস্ত ও তাদের বিরুদ্ধে বিভাগীয় শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। কারারক্ষীসহ কারাগারের স্টাফদের বিরুদ্ধে মাদকাসক্তের অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে তাদের ডোপ টেস্ট করার উদ্যোগ নিয়েছে কারা অধিদপ্তর।

কারা অধিদপ্তর সূত্রে জানা গেছে, কারাগারের স্টাফ ও কারারক্ষীদের ডোপ টেস্টের জন্য স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে চিঠি দিয়েছে কারা অধিদপ্তর। মাদকাসক্ত কারারক্ষী ও স্টাফদের চিহ্নিত করে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ারও অনুরোধ করা হয়েছে।

এ ব্যাপারে কারা অধিদপ্তরের অতিরিক্ত মহাপরিদর্শক কর্নেল আবরার হোসেন বলেন, কারাগারের স্টাফ ও কারারক্ষীদের ডোপ টেস্টের জন্য স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে চিঠি দেওয়া হয়েছে। তবে ১২ হাজার স্টাফ ও কারারক্ষীর ডোপ টেস্ট করা একটি কঠিন। সে কারণে যেসব ব্যক্তি সন্দেহভাজন রয়েছেন, তাদের গতিবিধি, চলাফেরা মনিটরিং করা হচ্ছে। কারা হাসপাতালের চিকিত্সকরাও বিষয়টিতে নজর দিচ্ছেন।

সূত্র জানায়, কারাগারগুলোতে মাদকাসক্ত বন্দিদের আচরণ সব সময় স্বাভাবিক থাকে না। বন্দি ও অনেক হাজতি কয়েদি কারাগারের মধ্যে মাদক সেবন না করতে পারায় শৃঙ্খলা ভঙ্গ করে। কখনো কখনো কারাগারে দায়িত্বে থাকা নিরাপত্তারক্ষীদের আদেশ ও নিষেধ অমান্য করে তাদের সঙ্গেও তর্কে জড়ায়। মাদকের নেশা যখন উঠে তখন তারা কারাগারের মধ্যে লঙ্কাকাণ্ড ঘটায়। প্রায় সময় অন্যসব বন্দিদের সঙ্গে মারামারিতে জড়িয়ে পড়ে। কারারক্ষীদের সঙ্গে ঝগড়া করে। মাদকাসক্ত অনেক বন্দি কারাগারে মাদক ব্যবসায় চালায়। এর পেছনে কারারক্ষীদের সংশ্লিষ্টতা রয়েছে। মাদকাসক্ত বন্দিদের নজরদারি করতে গিয়ে অনেক কারারক্ষীরাও মাদকাসক্ত হয়ে পড়েন।

কারা অধিদপ্তর সূত্রে জানা গেছে, কারাগারগুলোতে প্রতিদিনই নতুন করে যুক্ত হচ্ছে মাদক মামলার আসামি। তারা কারাগারে আসার পরও মাদক সেবনের চাহিদা থাকে। এজন্য তারা আদালতে হাজিরা দেওয়ার সময় তাদের স্বজন বা বন্ধুদের কাছ থেকে পেট ও পায়ুপথে মাদক নিয়ে আসে কারাগারে। তাদের কারাগারে প্রবেশের সময় শরীর তল্লাশি করার পর কারাগারে ঢোকানো হয়। কিন্তু পেট বা পায়ুপথে বহন করা মাদক শনাক্তের কোনো স্ক্যানিং মেশিন কারাগারগুলোতে নেই। ফলে বিভিন্ন সময়ে কৌশলে বন্দিরা কারাগারের ভিতরে মাদক নিয়ে প্রবেশ করছে।

ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারের ৮ হাজার বন্দির মধ্যে ৩ হাজার বন্দিই মাদকাসক্ত। বন্দিদের সুপথে ফিরিয়ে আনার জন্য দেশের কোনো কারাগারে মাদকাসক্ত নিরাময় কেন্দ্র নেই। এসব বন্দিকে নেশার জগত থেকে ফিরিয়ে আনতে প্রতিটি ওয়ার্ডে একটি মনিটরিং টিম রয়েছে। আবার কারাগারের স্টাফ, কারারক্ষী ও মাদক মনিটরিং টিমের সদস্যদের বিরুদ্ধে মাদক ব্যবসা চালানোর অভিযোগ রয়েছে।

কারা অধিদপ্তরের অতিরিক্ত মহাপরিদর্শক কর্নেল আবরার হোসেন বলেন, মাদকাসক্ত বন্দিদের মোটিভেশন করার কাজ চলছে। তাছাড়া কারা অধিদপ্তরের বাইরের কিছু অর্গানাইজেশন আহছানিয়া মিশন, জিআইজেড ও আইসিআরসি এ ব্যাপারে প্রকল্প হাতে নিয়েছে। সম্প্রতি আহছানিয়া মিশন মাদক বিষয়ে বন্দিদের মোটিভেশন করার জন্য সেমিনার ও ওয়ার্কশপ পরিচালনা করেছে। তারা কারারক্ষীদের প্রশিক্ষণ দিচ্ছে যে কীভাবে মাদকাসক্ত বন্দিদের মাদক থেকে নিরাময় করা যায়। এ ব্যাপারে আমরা সুফলও পাচ্ছি।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here