রাজাকারের তালিকা আর জামায়াতে ইসলামের বিচার প্রসঙ্গ

0
516
রাজাকারের তালিকা আর জামায়াতে ইসলামের বিচার প্রসঙ্গ
লেখকঃ অধ্যাপক ডাঃ মামুন আল মাহতাব স্বপ্নীল, চেয়ারম্যান, লিভার বিভাগ, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়, সদস্য কার্যনির্বাহী কমিটি ঢাকা মহানগর উত্তর, বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ, সদস্য সচিব, সম্প্রীতি বাংলাদেশ ও অর্থ সম্পাদক, কেন্দ্রীয় কমিটি, একাত্তরের ঘাতক দালাল নির্মূল কমিটি।

খবর৭১ঃ ১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধকালীন নয়টি মাসে যে গণহত্যা তা পৃথিবীর মানবতাবিরোধী অপরাধে একটি কলঙ্কজনক অধ্যায় সংযোজন করেছিল। এত অল্প সময় এত বেশী মানুষ এমনকি দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধেও হিটলারের হাতে এমন নির্মমতার মুখোমুখি হয়নি। আর একাত্তরে বাংলাদেশে এই যে মানবতাবিরোধী অপরাধ, এমনকি সেই নৃশংসতায়ও অন্য মাত্রা যোগ করেছিল ডিসেম্বরের ১৪-১৫ তারিখের নৃশংসতা।

পরাজয় অনিবার্য জেনে পরাজিত পক্ষের পোড়া মাটিনীতি অবলম্বনের উদাহরণ আছে পৃথিবীর ইতিহাসে ভুরি-ভুরি। বাংলাদেশেও এর ব্যতিক্রম ঘটেনি একাত্তরে। পাকিস্তানের ২৪ বছরে এদেশে অবকাঠামো তৈরি করা হয়েছিল সামান্যই। আর যা কিছুইবা উত্তরাধিকারসূত্রে এদেশে গড়ে উঠেছিল উপনিবেশিক শাসকদের করুণায়, তার সবকিছুই গুড়িয়ে দিয়েছিল পাকিস্তানিরা মুক্তিযুদ্ধকালীন নয়টি মাসে। কিন্তু পরাজয়ের দ্বারপ্রান্তে দাঁড়িয়ে দেশের শ্রেষ্ঠ সন্তানদের রাতের আধারে ঘর থেকে তুলে নিয়ে গিয়ে রায়েরবাজারের বধ্যভূমিতে পৈশাচিক নির্যাতনের পর হত্যার নজির পৃথিবীতে আর দ্বিতীয়টি আছে বলে অন্তত আমার জানা নাই। বুদ্ধিজীবি হত্যাকাণ্ডের মূল উদ্দেশ্যই ছিলো সদ্যস্বাধীন বাংলাদেশকে মেধাশূন্য করে দেওয়া। অবকাঠামো আর অর্থনীতির ক্ষতি কাটিয়ে ওঠা যায় কয়েক বছরে কিন্তু মেধার ঘাটতি পূরণ হয় না কয়েক যুগেও। এর খেসারত দিয়েছে বাংলাদেশও। ’৭১’র ভগ্নস্তূপের উপর দাঁড়িয়ে মাত্র তিন বছরে বঙ্গবন্ধু বাংলাদেশকে পরিণত করেছিলেন সাত শতাংশ প্রবৃদ্ধির ক্রমবিকাশমান অর্থনীতিতে। তারপরও সংগঠিত হয়েছিল ১৫ আগস্ট।

নিঃসন্দেহে এটি গুটিকয় বিপদগামী সেনা কর্মকর্তার মাথামোটা কোনো উদ্যোগ ছিল না। এর পেছনে ক্রিয়াশীল ছিল দেশি-বিদেশি গভীর চক্রান্ত। কিন্তু তারপরও বাস্তবতা এই যে ১৫ আগস্ট ঘটানোর প্রেক্ষাপটই হয়তো সৃষ্টি করা সম্ভব হতো না যদি না বঙ্গবন্ধু তার আশপাশের ওই বুদ্ধিমান মানুষগুলো ডিসেম্বরের ওই দুইটি দিনে হারিয়ে না ফেলতেন। বুদ্ধিজীবী হত্যাকাণ্ডের খেসারত বাঙালি আর বাংলাদেশকে দিতে হয়েছে ধারাবাহিকভাবে, দিতে হচ্ছে এখনো। ’৭৫’র পর মিথ্যার যে গোয়েবলসিয়ো বেসাতি- ক্ষণে স্বাধীনতার ঘোষক জেনারেল জিয়া তো ক্ষণে জাতির পিতা ইখতিয়ারউদ্দিন মোহাম্মদ বিন বখ্তিয়ার খিল্জী, এসব মিথ্যাচারের বিরুদ্ধে সত্যটা মানুষের সামনে তুলে ধরার মানুষগুলো ’৭১’র ডিসেম্বরে হারিয়ে গিয়েছিল বলেই আমাদের বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট আর পদ্মা সেতু পেতে এতগুলো বছর লেগে গেলো। আর তারা হারিয়ে গিয়েছিলেন বলেই আজো অর্বাচীন ধর্ম ব্যবসায়ী সাহস পায় ভাস্কর্য আর মূর্তির বিতর্কে জড়িয়ে জাতিকে আরেকটু বিভ্রান্ত করতে।দুঃখের বিষয় বলা উচিত না ক্ষোভের জানি না, কিন্তু বাস্তবতা হচ্ছে এই যে, দেশের এতবড় ক্ষতি কিন্তু পাকিস্তািনদের হাতে হয়নি।

সেদিন বাংলাদেশের এই অপূরণীয় ক্ষতি হয়েছিল পাকিস্তানিদের দোসর এদেশের কিছু কুলাঙ্গারের হাতে। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সরকার ক্ষমতায় এসে তাদের অনেককেই বিচারের আওতায় এনেছে। প্রক্রিয়াটি এখনো চলমান। কিন্তু এখনো বিচার হয়নি জামায়াতে ইসলামের যারা ছিলো সেদিন বাংলাদেশের রাজনৈতিক প্রতিপক্ষ। বিচার হয়নি আলবদর, আলশামস, রাজাকারের মতো বাহিনীগুলোর যারা সেদিন বাংলাদেশ নামক রাষ্ট্রটির বিরুদ্ধে অস্ত্র ধারণ করেছিলো, সরাসরি জড়িত জাতির শ্রেষ্ঠ সন্তানদের হত্যাকাণ্ডে।

অপরিশোধিত জ্বালানি তেল আবারো মূল্যযুদ্ধ শুরু করবে সৌদি আরব? জাতিসংঘের বিশ্বব্যাপী অস্ত্র বিরতির আহ্বানে সমর্থন দিলো বাংলাদেশ ইরাকে নিরাপত্তাবাহিনীর সঙ্গে বিক্ষোভকারীদের সংঘর্ষে মৃতের সংখ্যা বেড়ে ১২ আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের একাধিক রায়ে রাজনৈতিক সংগঠন হিসাবে বিচারের আওতায় আনার পর্যবেক্ষণ এসেছে বারবার। মন্ত্রিসভায় সম্প্রতি সিদ্ধান্ত হয়েছে রাজাকারের তালিকা প্রকাশের।

ক্যালেন্ডারের পাতায় যখন আজকের তারিখটা ডিসেম্বরের ১৪, জাতি যখন আরও একবার শোকাতুর তার শ্রেষ্ঠ সন্তানদের শোকে, এই দুটি সিদ্ধান্তের বাস্তবায়নই সম্ভবত জাতি হিসাবে আমাদের শ্রেষ্ঠত্বের দাবিদার করতে পারে আর নিঃসন্দেহে এর মাধ্যমেই আমরা আমাদের শ্রেষ্ঠ মানুষগুলোর প্রতি যথার্থ সম্মান দেখাতে পারবো।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here