খবর৭১ঃ
আব্দুল আওয়ালঃ নেত্রকোনার মদনে মাল্টিমিডিয়ার মাধ্যমে শিশু শিক্ষার উন্নয়নে নেই কোন অগ্রগতি। ল্যাপটপ ও প্রজেক্টর থাকলেও নেয়া হচ্ছে না মাল্টিমিডিয়া ক্লাস। আলমারিতেই তালাবদ্ধ থাকে ল্যাপটপ, প্রজেক্টর, প্রজেক্টর স্ক্রিন। এমন অবস্থায় শিক্ষকদের দায় সারা মনোভাবকে দায়ী করছেন উপজেলা ভারপ্রাপ্ত শিক্ষা কর্মকর্তা। মাল্টিমিডয়া ক্লাস পরিচালনার এসব সামগ্রী কেউ রেখেছেন বাক্সবন্দী করে।
অার কেউ বা ব্যবহার করছেন নিজের ব্যাক্তিগত কাজে। পরিত্যক্ত বা অব্যবহৃত ও যত্রতত্র ভাবে নিজেদের কাজে ব্যবহারের কারণে কারো নষ্ট হয়েছে ল্যাপটপ। কারো আবার প্রজেক্টর। এতে প্রাথমিক বিদ্যালয় গুলোতে হচ্ছে না মাল্টিমিডিয়া ক্লাস। ফলে মাল্টিমিডিয়ার ক্লাসের মাধ্যমে শিক্ষা লাভ থেকে বঞ্চিত হচ্ছে ছাত্রছাত্রীরা। এ ছাড়া প্রযুক্তি ব্যবহারের ক্ষেত্রে অন্ধকারেই থেকে যাচ্ছে শিশুরা। সম্প্রতি সরেজমিন ঘুরে কয়েকটি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় পরিদর্শণ করে ছাত্রছাত্রী, শিক্ষক, অভিভাবক ও বিদ্যালয়ের ম্যানেজিং কমিটিসহ শিক্ষা অফিসারের সাথে কথা বলে উঠে আসে এমন তথ্য। উপজেলা শিক্ষা অফিস সূত্রে জানা যায়, উপজেলার ৯৪টি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের মধ্যে এডুকেশন ডেভেলপমেন্ট প্রোগ্রাম (পিইডিপি-৩ ও ৪) এর আওতায় মদন উপজেলায় ৬৩টি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে ল্যাপটপ, মডেম, প্রজেক্টর, প্রজেক্টর স্ক্রিনসহ নানা সরঞ্জাম প্রদান হয়। ৬৩টি বিদ্যালয়ে মাল্টিমিডিয়ার মাধ্যমে পাঠদান করার কথা থাকলেও ৯৭ ভাগ বিদ্যালয়ে একেবারেই হয় না মাল্টিমিডিয়া ক্লাস। ৩ ভাগ বিদ্যালয়ে শুধুমাত্র শিশু শ্রেণিতেই দুই একটি ক্লাসে সীমাবদ্ধ থাকে। শিক্ষার্থীরা জানায়, স্যাররা মাল্টিমিডিয়া ক্লাস নেয় না।
যদি ছবিতে দেখে দেখে আমরা পড়তে পারতাম তাহলে পড়া বুঝতে আমাদের অনেক সুবিধা হতো। ফলে পরীক্ষায় ভাল করতে পারতাম। অন্যদিকে বিদ্যালয়ে মাল্টিমিডিয়া ক্লাসের প্রয়োজনীয় সরঞ্জাম থাকলেও বেশ কয়েকটি বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরাই জানেন না মাল্টিমিডিয়া ক্লাস কি? এমন চিত্র প্রায় সব সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের। শিক্ষকরা ইন্টারনেট থেকে ডাউনলোড ও ল্যাপটপে কনটেন্ট তৈরি করে প্রজেক্টরের মাধ্যমে ছবিসহ শিক্ষার্থীদের পাঠদান করার কথা। এতে শিশুদের আগ্রহ বাড়বে, ঘটবে প্রাথমিক শিক্ষা ব্যবস্থার উন্নয়ন। ধুবাওয়ালা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে গেলে ল্যাপটপ, প্রজেক্টর, স্ক্রিন দেওয়া হলেও সেখানেই সীমাবদ্ধ রয়েছে সব কার্যক্রম। বিদ্যালয়ে একদিনের জন্যও হয়নি মাল্টিমিডিয়া ক্লাস বলেন স্বয়ং বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষিকা মায়া রানী ভৌমিক।
দড়িবিন্নী মহারাজ খান সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মাজহারুল ইসলাম চৌধুরী বলেন, একজন নারী শিক্ষক কয়েকদিন প্রশিক্ষণ দিয়েছিল সে কিছুই জানে না। তাই আমি কম্পিউটার নিজের বাড়িতেই রেখেছি। সেখানেই কাজ করছি। তাছাড়া বিদ্যালয়ে কম্পিউটার রাখা নিরাপত্তা নেই। তবে জাহাঙ্গীরপুর মডেল সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মাহবুবুল হাসান জানান, আমাদের দু’জন প্রশিক্ষণ প্রাপ্ত শিক্ষক রয়েছে, সপ্তাহে তিন দিন মাল্টিমিডিয়ার মাধ্যমে ক্লাস নেন। বনতিয়শ্রী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ম্যানেজিং কমিটির সভাপতি খসরু রুমান বলেন, আমার বিদ্যালয়ে ল্যাপটপটি গত ৬ মাস যাবত প্রধান শিক্ষকের বাড়িতে ছিল। আমি বললে তিনি কয়েকদিন হল বিদ্যালয়ে নিয়ে এসেছেন। ল্যাপটপটি বিদ্যালয়ে ব্যবহার হয় না। উপজেলার সবকটি বিদ্যালয়ের একই অবস্থা বিরাজ করছে।
সনাতন পদ্ধতিতে ক্লাস পরিচালনায় অমনোযোগী হচ্ছে ছাত্রছাত্রীরা। ক্রমেই কমছে ছাত্র-ছাত্রীর হাজিরা। তবে কোনো কোনো বিদ্যালয়ের শিক্ষকরা অভিযোগ করে বলেন, শিক্ষা অফিসের মাধ্যমে আমাদের যে ১২ দিনের প্রশিক্ষণ দেওয়া হয় তা মাল্টিমিডিয়া ক্লাসের জন্য যথেষ্ট নয়। ফলে নিয়মিত ক্লাস নেওয়া যায় না। উপজেলা ভারপ্রাপ্ত শিক্ষা অফিসার মোজাহিদুল ইসলাম জানান, মাল্টিমিডিয়া ক্লাস নেওয়ার ক্ষেত্রে শিক্ষকদের আমরা সব সময় বলে আসছি। এ বিষয়ে প্রতি মাসে শিক্ষকদের সমন্বয় সভায় বলা হয়েছে।
তাও বলা হয়েছে প্রতিদিন কমপক্ষে একটি হলেও মাল্টি মিডিয়া ক্লাস নেয়া। এতে কিছু বিদ্যালয় নিচ্ছে। তবে কিছু অবকাটামোর সমস্যা রয়েছে। ডিজিটাল বাংলাদেশ গড়তে সরকার প্রাথমিক শিক্ষাকে আধুনিকায়ন করছে। এমন পরিস্থিতিতে সকল সুযোগ-সুবিধা দেওয়ার পরেও শিক্ষকদের গাফিলতির কারণে অন্ধকারে থেকে যাচ্ছে প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ছাত্রছাত্রীরা। এ জন্য মনিটরিং জোরদার করে মাল্টিমিডিয়ার ক্লাস পরিচালনা করবে শিক্ষকরা। এর সুবিধা পাবে শিশুরা। এমন প্রত্যাশা অভিভাবক ও সচেতন মহলের।