খবর৭১:খাশোগি হত্যাকাণ্ড চাপা দেওয়ার যে চেষ্টা করা হয়েছে, সেটা এ ধরনের ইস্যুতে ‘ইতিহাসের সবচেয়ে বাজে চেষ্টা’, এমন মন্তব্য করেছেন যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। এ চেষ্টায় যে কাজ হয়নি, সেটা যুক্তরাষ্ট্র বুঝিয়ে দিয়েছে।
এ হত্যাকাণ্ডে জড়িত সন্দেহভাজন সৌদি নাগরিকদের যুক্তরাষ্ট্র ভ্রমণের ভিসা বাতিলের সিদ্ধান্ত নিয়েছে মার্কিন প্রশাসন। একই পদক্ষেপ নিয়েছে ব্রিটেন। এ ঘটনায় সৌদি আরবের জড়িত থাকার প্রমাণ পেলে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা গ্রহণের ঘোষণা দিয়েছে ফ্রান্স। এদিকে হত্যাকাণ্ডের সব ধরনের প্রমাণ যুক্তরাষ্ট্রের গোয়েন্দাপ্রধানকে দিয়েছে তুরস্ক।
সৌদি যুবরাজ মুহাম্মদ বিন সালমানের কট্টর সমালোচক খাশোগি গত ২ অক্টোবর তুরস্কের ইস্তাম্বুলে সৌদি কনস্যুলেটে ঢোকার পর তাঁকে হত্যা করা হয়। এ ঘটনায় জড়িত থাকার কথা প্রথমে অস্বীকার করলেও পরে সৌদি আরব দাবি করে, সৌদি নাগরিকদের হাতে খাশোগির মৃত্যু হয়েছে ‘অনিচ্ছাকৃতভাবে’।
খাশোগি ইস্যুতে সৌদি আরবের ব্যাখায় অসন্তুষ্ট পশ্চিমা দেশগুলো এরই মধ্যে নিন্দা জানিয়েছে। গত মঙ্গলবার থেকে শুরু হয়েছে শাস্তিমূলক পদক্ষেপ গ্রহণের প্রক্রিয়াও। যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্রমন্ত্রী মাইক পম্পেও গত মঙ্গলবার জানান, মার্কিন প্রশাসন ২১ সৌদি নাগরিককে শনাক্ত করেছে, যাদের ভিসা বাতিল করা হবে এবং ভবিষ্যতে তাদের ভিসা প্রদানের ক্ষেত্রে অযোগ্য ঘোষণা করা হবে।
শাস্তিমূলক ব্যবস্থার এখানেই শেষ নয় জানিয়ে তিনি বলেন, ‘এ ইস্যুতে যুক্তরাষ্ট্রের শাস্তিমূলক ব্যবস্থা গ্রহণ এখানেই শেষ নয়। দোষীদের বিরুদ্ধে আমাদের আরো পদক্ষেপ গ্রহণ অব্যাহত থাকবে। ’ সৌদি আরবের গোয়েন্দা বিভাগ, আদালত, পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় ও অন্যান্য মন্ত্রণালয়ের লোকজন খাশোগি হত্যায় জড়িত বলে তিনি জানান।
যুক্তরাষ্ট্রের এ সিদ্ধান্ত ঘোষণার দিন মন্তব্য এসেছে প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের কাছ থেকেও। খাশোগি নিখোঁজ হওয়ার পর প্রায় দুই সপ্তাহ পর্যন্ত সৌদি আরব যেভাবে এ ব্যাপারে নিজেদের সংশ্লিষ্টতার কথা অস্বীকার করে এসেছে এবং পরে যে ত্রুটিপূর্ণ ব্যাখ্যা দিয়েছে, সেসব ব্যাপারে তিনি ওভাল অফিসে সাংবাদিকদের বলেন, ‘নানা ঘটনা চাপা দেওয়ার যে ইতিহাস আছে, সেগুলোর মধ্যে এটা সবচেয়ে বাজে চেষ্টা। ’ গত মঙ্গলবার পরে তিনি আরো বলেন, এ চেষ্টা ‘পুরোপুরি ব্যর্থ’ হয়েছে।
খাশোগি ইস্যুতে সৌদি আরবের বিরুদ্ধে প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের এত স্পষ্ট বক্তব্য এটাই প্রথম। এর আগ পর্যন্ত তিনি নানাভাবে এ ঘটনায় সৌদি আরবের জড়িত থাকার বিষয়কে খাটো করে দেখানোর চেষ্টা করে গেছেন। তবে গত মঙ্গলবার তিনি তাঁর প্রশাসনের সিদ্ধান্তের সঙ্গে সুর মিলিয়ে কথা বলেছেন।
খাশোগি হত্যাকাণ্ডে জড়িত সন্দেহভাজনদের বিরুদ্ধে শুধু যুক্তরাষ্ট্র পদক্ষেপ নিয়েছে, তা-ই নয়। মার্কিন প্রশাসনের সিদ্ধান্তের পর গতকাল বুধবার ব্রিটেনের প্রধানমন্ত্রী টেরেসা মে পার্লামেন্ট অধিবেশনে বলেন, ‘সন্দেহভাজন সবার যুক্তরাজ্যে প্রবেশের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিচ্ছে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়। এসব ব্যক্তির যদি বর্তমানে ভিসা থাকে, সেগুলো আজ (গতকাল) বাতিল করা হবে। ’ খাশোগি হত্যাকাণ্ডের ব্যাপারে ‘দ্রুত ও স্বচ্ছ’ তদন্ত সম্পন্ন করার জন্য সৌদি প্রশাসনের ওপর কূটনৈতিক চাপ অব্যাহত রাখার অঙ্গীকার করে মে আরো জানান, তিনি সৌদি বাদশাহ সালমানের সঙ্গে কথা বলবেন এবং গতকালই তা করার কথা।
এ ছাড়া ফ্রান্স সরকারের মুখপাত্র গতকাল মন্ত্রিসভার বৈঠক শেষে জানান, খাশোগি হত্যাকাণ্ডে সৌদি আরবের জড়িত থাকার প্রমাণ পাওয়া গেলে তাঁর সরকার ‘শাস্তিমূলক ব্যবস্থা’ নেবে। এ ছাড়া ফ্রান্সের গোয়েন্দা সংস্থা নিজেদের মতো করে ওই ঘটনা খতিয়ে দেখবে বলেও তিনি জানান।
খবর৭১/জি