আসাদুল ইসলাম সবুজ, লালমনিরহাট প্রতিনিধি: এক সময় পেটের খাবার জোগার করা যার জন্য ছিল পৃথিবী জয় করার আদন্দ। সেই পরিবারের তিন সন্তানই সরকারের গুরুত্ব পুর্ন দায়িত্ব পালন করছেন। প্রতিবেশীরা তো নয়, নজরুল ইসলাম নিজেও ভাবেননি তাদের সন্তানরা সশিক্ষায় শিক্ষিত হয়ে তাদের ঘর আলোকিত করবে। তবে নজরুল ইসলামের আশা ছিল সন্তানরা মানুষের মত মানুষ হবে। সে ইচ্ছা পুরন হয়েছে, কষ্ট স্বর্থক হয়েছে বলেই সুখে দিন কাটছেন তারা। নজরুল ইসলাম লালমনিরহাটের আদিতমারী উপজেলার পলাশী ইউনিয়নের নামুড়ি এলাকার বাসিন্দা। তিন সন্তানের জনক তিনি। বসত ঘর টুকু ছাড়া কোন সম্পদ ছিল না নজরুল ইসলাম ও ছামছুন্নানাহার বেগম বেলী দম্পত্তির। তিন সন্তান ছিল তাদের সম্পত্তি। সম্পত্তিকে মজবুত করতে নিজে অনাহারে অর্ধাহারে থেকে হাড় ভাঙ্গা পরিশ্রমে ছেলে মেয়ের পড়ালেখা চালিয়েছেন তারা। সামান্য চাল বিক্রেতা ছিলেন নজরুল ইসলাম। ইচ্ছা ও সাহস মানুষকে গন্তব্যে পৌছায় এটাকে আবারো প্রমান করেছেন তিনি। কাক ডাকা ভোরে ক্রয় করা ধান সিদ্ধ করে শুকাতে দিতেন স্ত্রী ছামছুন্নাহার বেগম বেলী। নজরুল ইসলাম গ্রাম গঞ্জে কৃষকদের ধান কিনে বাইসাইকেল বহন করে নিয়ে আসতেন। আবার সিদ্ধ ধান চাল বানিয়ে বাজারে বিক্রি করে যা আয় হত তা দিয়ে এক ছেলে দুই মেয়ে পড়াশুনার খরচ মিটিয়ে যা থাকত তা দিয়েই রুটি রুজি। এ ভাবে রোদে পুড়ে বৃষ্টিতে ভিজে হাড় ভাঙ্গা পরিশ্রমে বড় ছেলে ডেন্টিষ্ট বেলাল হোসেন বুলবুলকে স্বাস্থ্য সহকারী, মেঝ মেয়ে নিলুফা আক্তার পলিকে পরিবার কল্যাণ সহকারী পদে সরকারী চাকুরী বাগিয়ে দেন। ছোট মেয়ে জিবিন জিনিয়াকে পড়াচ্ছে নার্সিং এ। তিনিও শেষ বর্ষের ছাত্রী। মুলতই বাবা মা হিসেবে নিজেদেরকে স্বার্থক মনে করেন নজরুল ও বেলী দম্পত্তি। বড় ছেলে আদিতমারী উপজেলা স্বাস্থ্য সহকারী ডেন্টিষ্ট বেলাল হোসেন বুলবুল জানান, নিজেরা কষ্ট করলেও সন্তানদের কখনই বুঝতে দেন নি। তাদের বিশ্বাস ছিল কষ্টে কামানো অর্থে সন্তানরা একদিন সমাজে প্রতিষ্ঠিত হবে। সন্তানদের প্রতিষ্ঠিত করার মিশনে তারা স্বার্থক। এমন বাবা মা পৃথিবীতে অদ্বিতীয় বলেও দাবি করেন তিনি। নজরুল ইসলাম জানান, কষ্টের আয়ে সম্পদ গড়তে পারতেন। কিন্তু সন্তানরা প্রতিষ্ঠিত না হলে সে সম্পদ মুহুর্তেই শেষ হয়ে যেত। সম্পদ না হোক সন্তানরা প্রতিষ্ঠিত হলে তা সম্পত্তিতে পরিনত হয়। যা সহসায় নষ্ট হয় না বরং বৃদ্ধি পায়। তাদের কষ্ট স্বার্থক বলে দাবি করেন তিনি। বর্তমান প্রজন্মের অভিভাবকদের প্রতি তার উপদেশ, “সম্পদ নয়- সন্তানদের প্রতিষ্ঠিত করুন। তবে মরেও শান্তি পাবেন। ”
খবর ৭১/ইঃ