অবশেষে ঢাবিতে ভর্তির সুযোগ পাচ্ছেন সেই হৃদয়

0
395

খবর৭১ঃঅবশেষে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির সুযোগ পাচ্ছেন মায়ের কোলে চড়ে ভর্তি পরীক্ষা দিতে আসা শারীরিক প্রতিবন্ধী হৃদয় সরকার। বৃহস্পতিবার ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ডিন’স কমিটির এক সভায় এই সিদ্ধান্ত নেয়া হয়। সভায় উপস্থিত থাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আর্থ এন্ড এনভায়রনমেন্টাল সায়েন্সেস অনুষদের ডিন অধ্যাপক মাকসুদ কামাল বাংলাদেশ জার্নালকে এই তথ্য নিশ্চিত করেছেন।

কলা অনুষদভুক্ত ‘খ’ ইউনিটের ভর্তি পরীক্ষা হয় ২১ সেপ্টেম্বর। মায়ের কোলে চেপে ভর্তি পরীক্ষায় অংশ নেয় হৃদয় সরকার। মায়ের কোলে চেপে পরীক্ষায় অংশ নেয়ার একটি ছবি সামজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ফেসবুকে ছড়িয়ে পড়লে বিষয়টি সবার নজরে আসে। সে সময় হৃদয় সরকারের বিষয়টির সম্পর্কে গণমাধ্যমে সংবাদও ছাপা হয়। পরে ভর্তি পরীক্ষায় হৃদয় সরকার ৩ হাজার ৭৪০ মেধাক্রম অর্জন করেন। তবে এই অনুষদের আসন সংখ্যা ছিলো ২ হাজার ৩৭৮ টি। ফলে হৃদয় সরকারের ভর্তির বিষয়টি অনিশ্চিত হয়ে পড়ে। মেধায় সুযোগ না পেলেও কোটায় সুযোগ পাবেন বলে ধারণা করেন অনেকে।

তবে ভর্তির জন্য কলা অনুষদের ডিন অফিসে যোগাযোগ করলে ‘প্রতিবন্ধী কোটার নিয়ম’ দেখিয়ে কোটায় আবেদনের ফর্মই দেয়া হয়নি তাকে। ডিন অফিস থেকে বলা হয়, বিশ্ববিদ্যালয়ের ভর্তির জন্য প্রতিবন্ধী কোটার নিয়মে শুধুমাত্র ‘বাক, শ্রবণ ও দৃষ্টি’ প্রতিবন্ধীরা ভর্তির সুযোগ হতে পারবে। হৃদয় এই ক্যাটাগরিতে পড়ে না। এর ফলে হৃদয় সরকারের ভর্তি অনিশ্চিত হয়ে পড়ে। তবে বৃহস্পতিবার ডিন’স কমিটির এক সভায় ‘বাক, শ্রবণ ও দৃষ্টি’ প্রতিবন্ধীর সঙ্গে ‘শারীরিক প্রতিবন্ধী’র বিষয়টি যোগ করা হয়। এর ফলে ঢাবিতে ভর্তির সুযোগ পাচ্ছেন হৃদয় সরকার।

এ বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের আর্থ এন্ড এনভায়রনমেন্টাল সায়েন্সেস অনুষদের ডিন অধ্যাপক এ এস এম মাকসুদ কামাল বলেন, হৃদয়কে ভর্তি করানোর বিষয়ে ডিন কমিটির সভায় সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে। এর আগে বিশ্ববিদ্যালয়ের নীতিমালা অনুযায়ী বাক, শ্রবণ ও দৃষ্টি প্রতিবন্ধীদের ভর্তি করানো হতো। কিন্তু এখন থেকে এর সঙ্গে শারীরিক প্রতিবন্ধীদের বিষয়টি যোগ করা হয়েছে। এর ফলে কেউ মেধাতালিকায় বা কোটায় ভর্তি হওয়ার যোগ্যতা থাকলে সে ভর্তির সুযোগ পাবে। এ বছর বিশেষ বিবেচনায় হৃদয় সরকার ভর্তির সুযোগ পাবে। প্রতিবন্ধী নীতিমালা সংস্কারের ফলে পরবর্তীতে ভর্তি সংক্রান্ত এ ধরণের জটিলতা আর সৃষ্টি না।

জানতে চাইলে কলা অনুষদের ডিন অধ্যাপক ড. আবু মো. দেলোয়ার হোসেন বলেন, বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসনিক ভবন থেকে লিখিত না আসা পর্যন্ত কোনো কিছু বলা যাচ্ছে না। তবে এটুকু বলতে পারি যে, এটা ইতিবাচক। সেক্ষেত্রে হৃদয় সরকার ভর্তির সুযোগ পাচ্ছে, এটা নিশ্চিত কিনা জানতে চাইলে তিনি বলেন, ইতিবাচক হলে সেটার ব্যাখ্যা তো তাই দাঁড়ায়। ভর্তি পরীক্ষার পজিশন অনুযায়ী যে বিভাগ পাওয়ার সে হয়তো সেটা প্রাপ্য হবে।

সার্বিক বিষয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসি অধ্যাপক ড. মো. আখতারুজ্জামান বলেন, আমরা প্রতিবন্ধী কোটার সংস্কার করেছি। এর আগে ভর্তি নীতিমালায় ‘শারিরীক প্রতিবন্ধী’ অংশটা ছিল না। আমরা নীতিমালার মধ্যে সংশোধনী এনে ‘শারিরীক প্রতিবন্ধী’ অংশটাকে অন্তর্ভুক্ত করেছি। বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন অনুষদের ডিনরা এ নীতিমালার আলোকে তাদের ভর্তি কার্যক্রম পরিচালনা করবেন।

এই বিষয়ে অনুভূতি জানতে চাইলে হৃদয় সরকার ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের কাছে কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন। শারীরিকভাবে যারা অক্ষম এই সিদ্ধান্তের মাধ্যমে তারা পড়ালেখায় আরো উৎসাহ পাবে বলে মনে করেন তিনি। তিনি বলেন, আজকের আমার এই পর্যন্ত আসার পিছনে সবচেয়ে বড় শক্তি আমার মা। তার অক্লান্ত পরিশ্রমের কারণেই আমি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সুযোগ পাচ্ছি।
খবর৭১/ইঃ

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here