২ সন্তান হারিয়ে বাকরুদ্ধ বাবা ঝড়ের কবলে সলীল সমাধী হওয়া ৮ জেলের পরিবারে শোকের মাতম

0
289

বাগেরহাট প্রতিনিধি:
বঙ্গোপসাগরে ঝড়ের কবলে ফিশিং ট্রলার ডুবে সলীল সমাধী হওয়া বাগেরহাটের শরণখোলা উপজেলার ৮ জেলের পরিবারে চলছে শোকের মাতম। বৃহস্পতিবার ভোর রাতে সুন্দরবন উপকূলে ১ নম্বর ফেয়ারওয়ে বয়ার কাছে ঝড়ের কবলে পড়ে এফবি মারিয়া -১ নামের ট্রলারটি ডুবে যায়। ওই ট্রলারে ছিলেন, শরণখোলার ছোমেদ ফরাজীর তিন ছেলে শহিদুল ফরাজী (৩৫), আনোয়ার ফরাজী (৪৫) ও কামরুল ফরাজী (৪২)সহ ১৭ জন জেলে। এদের মধ্যে ৯ জেলেকে ভারতীয় জেলেরা উদ্ধার করার পর তারা রবিবার বিকালে বাড়ী ফিরেছেন। বাকি ৮ জেলের বঙ্গোপসাগরে সলিল সমাধি হয়েছে। নিহত এই ৮ জেলের লাশ এখনো খুজে পাওয়া যায়নি। বেঁচে যাওয়া ৯ জনের মধ্যে এফবি মারিয়া -১ নামের ট্রলার মালিক শরণখোলা উপজেলার রাজৈর গ্রামের শহিদুল ফরাজী এবং প্রধান মাঝি নিজে বাচঁতে পারলেও আপন দুই সহোদর আনোয়ার ফরাজী (৪৫) ও কামরুল ফরাজীকে ( ৪২) হারিয়ে তিনি এখন বাড়ীতে ফিরে সঙ্গাহীন রয়েছেন। বাড়িতেই চিকিৎসা চলছে তাঁর। ছোমেদ ফরাজী তার দুই সন্তান আনোয়ার ফরাজী ও কামরুল ফরাজীকে হারিয়ে বাকরুদ্ধ। তাকে সান্তনা দেয়ার ভাষা খুজে পাচ্ছেনা কেউ।
এই ট্রলার ডুবিতে অন্য নিহত জেলেরা হলেন, শরণখোলা উপজেলার রাজৈর গ্রামের আশরাফুল গাজী, শহিদুল হাওলাদার, ডাবলু হাওলাদার, রাজাপুর গ্রামের মোদাচ্ছের হাওলাদার, নলবুনিয়া গ্রামের রিয়ারজ হাওলাদার এবং উত্তর তাফালবাড়ি গ্রামের আলমগীর হোসেন।
ট্রলার ডুবির লোমহর্ষক বর্ণনা দিলেন বেঁচে ফিরে আসা ওই ট্রলারের দ্বিতীয় মাঝি শরণখোলা উপজেলার রাজৈর গ্রামের আ. মজিদ হাওলাদারের ছেলে মো. কবির হাওলাদার (২২)। নিনি বলেন, মোরা সিগনাল পাইয়া কূলে (তীরে) আইতে রইছি । বৃষ্টি আর বাতাসে টেকতে (টিকতে) না পাইর‌্যা ওরা আস্টোজন (৮জন) বোডের (ট্রলারের) কেবিনে মইদ্যে যাইয়া হান্দে (ঢোকে)। বৃহস্পতিবার রাইত ৩টার দিকে মোরা ট্রলইয়া যহন ১ নম্বর বয়ার কাছাকাছি আইছি, তহন বিশাল এক লাহরে (ঢেউ) বোড (ট্রলার)ইলডাইয়া দেয়। মোরা উপরে থাহা ৯জন ট্রলারের প্লোট ধইর‌্যা (প্লাষ্টিকের ভাসনা) সাগরে ভাসতে থাকি। কিন্ত হেরা ৮ জন আর বাইরাইতে (বের হতে) পারেনাই। ২ দিন পর শুক্রবার রাইত সাড়ে তিনটা চাইট্টার দিক মোরা ভারতের সীমানায় কেতুয়ার চরে যাইয়া উডি। তহন ভারতের এফবি সূর্য্যসেন নামের একটা বোডে মোগো উডাইয়া নেয়। মোগো আতপাও (হাত-পা) পানিতে সাদা ওইয়া গ্যাছে। ভারতের বোডের মাঝি রবীন দাস মোগো ওষুদ ও খাওন দিয়া সুস্থ্য বানায়।
ট্রলার মাঝি কবির আরো জানান, ঝড়ের কবলে পড়ে ভারতের ওই এলাকায় ভেসে যাওয়া শরণখোলার বিলাশ রায় কালুর এফবি সাগর-১ ট্রলারে তাদের ৯জনকে শনিবার সকালে বাংলাদেশের উদ্যেশ্যে একটি ট্রলারে উঠিয়ে দেন ভারতের ট্রলারের মাঝি রবীন দাস। এসময় তাদের আশ্রয়ে থাকা ভোলার চরফেশন উপজেলার নূরাবাদ এলাকার আরো ১৪ জেলেকে শরণখোলার তহিদুল তালুকদারের এফবি আজমীর শরীফ-১ নামের একটি ট্রলারে উঠিয়ে দেয়।
এফবি সাগর ট্রলারের মালিক বিলাশ রায় কালু জানান, তাঁর এবং তহিদুল তালুকদারের ট্রলার দুটি ঝড়ে কবলে পড়ে ভারতের কেতুয়া এলাকায় চলে যায়। সেখান থেকে মারিয়া- ১ ট্রলারের ৯ জেলে ও চরফেশনের ১৪ জেলেকে তাদের ট্রলারে নিয়ে আসে। এসব জেলেদের সবাই কমবেশি অসুস্থ্য বলে তিনি জানান।
খবর ৭১/ই:

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here