২৫টি আসনে জামায়াত নেতারা বিএনপির প্রার্থী হিসেবে লড়বেন

0
319

খবর৭১:জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ২০ দলীয় জোটের শরিক জামায়াতে ইসলামীর নেতারা বিএনপির প্রার্থী হিসেবে ধানের শীষ প্রতীক নিয়েই অংশ নিচ্ছেন। গতকাল বুধবার মনোনয়নপত্র জমা দেওয়ার শেষ দিনে ২৫টি আসনে জামায়াত নেতারা বিএনপির প্রার্থী হিসেবে মনোনয়নপত্র জমা দিয়েছেন।

‘ধানের শীষ’ প্রতীকে নির্বাচন করার বিষয়ে জামায়াতের কেন্দ্রীয় প্রচার বিভাগের কর্মকর্তা মতিউর রহমান আকন্দ জানান, তাঁরা ধানের শীষ প্রতীক নিয়ে নির্বাচন করার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। এ জন্য বিএনপির কাছ থেকে প্রত্যয়নপত্র সংগ্রহ করে নির্বাচন কমিশনে দাখিল করেছেন। গতকাল সেগুনবাগিচায় ঢাকা-১৫ আসনে জামায়াতের সেক্রেটারি জেনারেল ডা. শফিকুর রহমানের পক্ষে মনোনয়নপত্র জমা শেষে তিনি সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে এ তথ্য জানান।

২০ দলীয় জোটের সিদ্ধান্তের বাইরে বহু আসনে জামায়াতের প্রার্থীরা স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে মনোনয়নপত্র জমা দিয়েছেন বলে আমাদের প্রতিনিধিরা জানিয়েছেন। কার্যত বিএনপিকে চাপে ফেলে আরো কয়েকটি আসন পাওয়ার লক্ষ্যেই এসব আসনে স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে মনোনয়নপত্র দাখিল করা হয়েছে বলে জানা গেছে।

ধানের শীষ নিয়ে জামায়াতের প্রার্থী হলেন যাঁরা

সমঝোতার ২৫টি আসনের মধ্যে ঢাকা-১৫ আসনে দলটির কেন্দ্রীয় সেক্রেটারি জেনারেল ডা. শফিকুর রহমান মনোনয়নপত্র দাখিল করেছেন।

চট্টগ্রাম বিভাগের তিনটি আসনের মধ্যে চট্টগ্রাম-১৫ আসনে আ ন ম শামসুল ইসলাম, কক্সবাজার-২ আসনে হামিদুর রহমান আযাদ ও কুমিল্লা-১১ আসনে ডা. আব্দুল্লাহ মো. তাহের মনোনয়নপত্র দাখিল করেছেন।

খুলনা বিভাগে ৯টি আসনের মধ্যে খুলনা-৫ আসনে মিয়া গোলাম পরওয়ার, খুলনা-৬ আসনে শাহ মুহাম্মদ রুহুল কুদ্দুছ, সাতক্ষীরা-২ আসনে মুহাদ্দিস আব্দুল খালেক, সাতক্ষীরা-৩ আসনে মুহাদ্দিস রবিউল বাসার, সাতক্ষীরা-৪ আসনে গাজী নজরুল ইসলাম, ঝিনাইদহ-৩ আসনে মতিয়ার রহমান, যশোর-২ আসনে মুহাদ্দিস আবু সাঈদ মুহাম্মদ শাহাদৎ হুসাইন, বাগেরহাট-৩ আসনে আবদুল ওয়াদুদ ও বাগেরহাট-৪ আসনে শহীদুল ইসলাম মনোনয়নপত্র দাখিল করেছেন।

রাজশাহী ও রংপুর বিভাগে ৯টি আসনের মধ্যে ঠাকুরগাঁও-২ আসনে আবদুল হাকিম, দিনাজপুর-১ আসনে মোহাম্মদ হানিফ, দিনাজপুর-৬ আসনে আনওয়ারুল ইসলাম, নীলফামারী-২ আসনে মনিরুজ্জামান মন্টু, নীলফামারী-৩ আসনে আজিজুল ইসলাম, রংপুর-৫ আসনে গোলাম রাব্বানী, গাইবান্ধা-১ আসনে মাজেদুর রহমান, সিরাজগঞ্জ-৫ আসনে মাওলানা রফিকুল ইসলাম খান ও পাবনা-৫ আসনে ইকবাল হুসাইন মনোনয়নপত্র দাখিল করেন।

সিলেট বিভাগে দুটি আসনের মধ্যে সিলেট-৫ আসনে অধ্যক্ষ মাওলানা ফরিদ উদ্দিন চৌধুরী এবং সিলেট-৬ আসনে মাওলানা হাবিবুর রহমান মনোনয়নপত্র দাখিল করেছেন।

বরিশাল বিভাগের পিরোজপুর-১ আসনে মনোনয়নপত্র জমা দিয়েছেন জামায়াতে ইসলামীর নায়েবে আমির যুদ্ধাপরাধে দণ্ডিত দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদীর মেজো ছেলে শামীম সাঈদী।

সমঝোতার ২৫টি আসনের বাইরে আরো যাঁরা মনোনয়নপত্র দাখিল করেছেন তাঁরা হলেন দলটির কেন্দ্রীয় ভারপ্রাপ্ত আমির অধ্যাপক মুজিবুর রহমান, রাজশাহী-১, ঢাকা মহানগর দক্ষিণের আমির নুরুল ইসলাম বুলবুল চাঁপাইনবাবগঞ্জ-২ ও সেক্রেটারি ড. শফিকুল ইসলাম মাসুদ পটুয়াখালী-২ (বাউফল) আসনে মনোনয়নপত্র দাখিল করেছেন। কুড়িগ্রাম-৪ আসনে স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে মনোনয়ন জমা দিয়েছেন মোস্তাফিজুর রহমান। ময়মনসিংহ-৬ আসনে কেন্দ্রীয় মজলিসে শুরা সদস্য অধ্যাপক মো. জসিম উদ্দিন।

চট্টগ্রামে জামায়াতে ইসলামীর তিনজন নেতা স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে মনোনয়ন জমা দিয়েছেন। এর মধ্যে চট্টগ্রাম-১০ শাহজাহান চৌধুরী, চট্টগ্রাম-১৫ জাফর সাদেক ও চট্টগ্রাম-১৬ আসনে জহিরুল ইসলাম। মৌলভীবাজার-১ আসনে স্বতন্ত্র প্রার্থী হয়েছেন আমিনুল ইসলাম।

রাজশাহী বিভাগে জামায়াতের ছয়জন স্বতন্ত্র প্রার্থী রয়েছেন।

শর্ত পূরণ করতে না পারায় নির্বাচন কমিশনের নিবন্ধন হারিয়েছে জামায়াতে ইসলামী। এ কারণে এ দলটির প্রার্থীরা দলীয় প্রতীকে নির্বাচন করতে পারছেন না। তবে জামায়াত নেতাদের স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে কিংবা নিবন্ধিত অন্য কোনো দলের প্রার্থী হয়ে সেই দলের প্রতীক নিয়ে নির্বাচন করার সুযোগ রয়েছে।

ড. কামালের নেতৃত্বে জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের নেতারা যেখানে ধানের শীষ নিয়ে নির্বাচন করছেন সেখানে এই ফ্রন্টে থাকা যুদ্ধাপরাধের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট জামায়াতে ইসলামীর প্রার্থীরাও ধানের শীষ নিয়ে নির্বাচন করবেন কি না তা নিয়ে ধূম্রজাল ছিল। ধানের শীষ নিয়ে জামায়াতের নির্বাচন করা নিয়ে বিএনপি প্রভাবশালী একাধিক নেতার অনীহা রয়েছে। তাঁদের বক্তব্য বিতর্কিত এ দলটিকে দলীয় প্রতীক ব্যবহারের সুযোগ দিলে এ নিয়ে বিরোধী পক্ষ রাজনীতি করতে পারে। এ ছাড়া জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের দলগুলোর পক্ষ থেকে এ বিষয়ে ‘নেতিবাচক’ মনোভাব রয়েছে।

এ অবস্থায় আসন্ন একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে জামায়াতের কেন্দ্রীয় নেতারা স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে নির্বাচন করার সিদ্ধান্ত নেন। কিন্তু দলের তরুণ নেতা-কর্মীদের কাছে এ সিদ্ধান্ত মনঃপূত না হওয়ায় অব্যাহতভাবে কেন্দ্রীয় নেতাদের ওপর চাপ সৃষ্টি করা হয়।

এ বিষয়ে গত মঙ্গলবার রাতে গুলশানে বিএনপি ও জামায়াতের নেতাদের সঙ্গে এক অনানুষ্ঠানিক বৈঠক হয়েছে বলে সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে। সে অনুযায়ী বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের স্বাক্ষরিত পত্র নিয়ে নিজ নিজ রিটার্নিং অফিসারের দপ্তরে মনোনয়নপত্র দাখিল করেন দলটির নেতারা।

খুলনা বিভাগে জামায়াতের ১০ জনের মনোনয়নপত্র দাখিল : খুলনা বিভাগের ১০ জেলার মধ্যে পাঁচ জেলার ১০টি আসনে জামায়াতে ইসলামী বিএনপি জোটের প্রার্থী হয়ে মনোনয়নপত্র জমা দিয়েছেন। এর মধ্যে সর্বাধিক সাতক্ষীরায় তিনটি আসনে মনোনয়নপত্র জমা দিয়েছেন। মনোনয়নপত্র জমাদানকারীরা হলেন : যশোর-২ (ঝিকরগাছা-চৌগাছা) আবু সাঈদ মুহাম্মদ শাহাদত হোসাইন, বাগেরহাট-৩ (মোংলা- রামপাল) অ্যাডভোকেট আব্দুল ওয়াদুদ শেখ, বাগেরহাট-৪ (শরণখোলা-মোরেলগঞ্জ) অধ্যাপক আবদুল আলিম, খুলনা-৫ (ডুমুরিয়া- ফুলতলা-খানজাহান আলী থানার আংশিক) মিয়া গোলাম পরওয়ার, খুলনা-৬ (কয়রা- পাইকগাছা) আবুল কালাম আযাদ, সাতক্ষীরা-৩ রবিউল বাশার, সাতক্ষীরা-২ মুহাদ্দিস আব্দুল খালেক, সাতক্ষীরা-৪ (শ্যামনগর-আশাশুনি) গাজী নজরুল ইসলাম ও ঝিনাইদহ-৩ মতিউর রহমান।
খবর৭১/জি

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here