১৫০ টাকার ভাড়া ৫০০!

0
392

খবর ৭১ঃ স্বজনদের সঙ্গে ঈদ উদযাপন করতে ছুটছে মানুষ। রাজধানীর কমলাপুর, গাবতলী, মহাখালী ও সদরঘাটের পাশাপাশি সায়েদাবাদেও নেমেছে ঘরমুখো মানুষের ভিড়।

ঢাকা থেকে দেশের দক্ষিণ-পূর্ব ও উত্তর-পূর্বাঞ্চলে যাওয়ার বাস টার্মিনাল সায়েদাবাদ। তবে যাত্রীর ভিড় ক্রমেই বাড়তে থাকলেও গাড়িরই সহসা দেখা মিলছে না টার্মিনালে। এরমধ্যে দু’চারটি বাস ছাড়লেও তারা যাত্রীদের জিম্মি করে আদায় করছে দ্বিগুণেরও অনেক বেশি ভাড়া।

বাস সংকটে যেমন যাত্রীরা পড়ছেন ভোগান্তিতে, তেমনি ‘পকেট কাটা’ ভাড়া আদায়ে প্রকাশ করছেন ক্ষোভও।

সায়েদাবাদ থেকে সাধারণত পাবর্ত্য চট্টগ্রাম ও তার আশপাশের অঞ্চল, বৃহত্তর নোয়াখালী, কুমিল্লা ও সিলেট অঞ্চলে ছেড়ে যায় বাস। শুক্রবার (১৫ জুন) সকাল সাড়ে ৭টায় টার্মিনালে গিয়ে দেখা যায়, হাজারো যাত্রী এ-কাউন্টার ও-কাউন্টার ঘুরছেন কাঙ্ক্ষিত বাসের টিকিট পেতে। কেউ একা, কেউবা স্ত্রী-সন্তান নিয়ে টার্মিনালে ঘণ্টার পর ঘণ্টা অপেক্ষা করছেন।

পরিবহনের হেলপার এবং কাউন্টার মাস্টারদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, ঢাকা-চট্টগ্রাম ও ঢাকা-সিলেট মহাসড়কে যানবাহনের যেমন চাপ পড়েছে, তেমনি দেখা দিয়েছে ধীরগতি। এজন্য বাস ঢাকায় ফিরতেও দেরি হচ্ছে।

বৃহস্পতিবার (১৪ জুন) সন্ধ্যার পর থেকে যাত্রীদের চাপ বেড়েছে উল্লেখ করে তারা বলছেন, বিগত দিনগুলোতে যাত্রীদের ভিড় কমছিলো, তখন গাড়িতে সিট খালি ছিলো। কিন্তু সব প্রতিষ্ঠান ছুটি হওয়ায় শুক্রবার যাত্রীর চাপ বেড়ে গেছে।

আর বাস সংকটের এই সুযোগেই যাত্রীদের কাছ থেকে হাতিয়ে নেওয়া হচ্ছে বাড়তি টাকা। নিরুপায় হয়ে যাত্রীরাও বাধ্য হচ্ছেন মাত্রাতিরিক্ত ভাড়া পরিশোধে।

ঢাকা থেকে কুমিল্লার নাঙ্গলকোট-দৌলতখানগামী জোনাকি পরিবহনের একটি গাড়ি টার্মিনালে ঢুকতেই হুমড়ি খেয়ে পড়তে দেখা যায় যাত্রীদের। সেখানে যাত্রীদের বলা হয়, সিটের ভাড়া একদাম ৫০০, দাঁড়িয়ে গেলে ৩০০। মুহূর্তের মধ্যেই দেখা গেলো গাড়ি ভর্তি হয়ে যেতে। একই অবস্থা কুমিল্লাগামী তিশা, প্রাইম, এশিয়াসহ ফেনী, নোয়াখালী, লক্ষ্মীপুরগামী পরিবহনগুলোতেও।

সাধারণত কুমিল্লার ভাড়া থাকে ১৫০-১৮০ টাকা, আর ফেনীর ভাড়া থাকে ২৩০-২৫০ টাকা। কিন্তু হেলপার ও কন্ডাকটররা সাফ বলে দিচ্ছেন, যেখানেই নামবেন ভাড়া একদাম ৫০০ টাকা।

সায়েদাবাদ থেকে খুলনাগামী বনফুল পরিবহন, চট্টগ্রাম-কক্সবাজারগামী সিডিএম ট্র্যাভেলস, সিলেটগামী মিতালী পরিবহনসহ বিভিন্ন পরিবহনও আদায় করছে দ্বিগুণ ভাড়া।

সিলেটের হবিগঞ্জগামী অগ্রদূত পরিবহনের টিকিট কেটে গাড়ির অপেক্ষায় বসে আছেন মনিরুজ্জামান নামে এক যাত্রী। ভোর থেকে তার সঙ্গে অপেক্ষায় পরিবারের অন্য সদস্যরাও। গাড়ি কখন আসবে কেউ বলতে পারছে না বলে জানান তিনি। মনিরুজ্জামান বলেন, মিতালী পরিবহনের টিকিট কাটতে গিয়ে শুনি ৪০০ টাকার ভাড়া ৮২০ টাকা দিতে হবে, তখন এখানে চলে আসি।

বোন-ভাগনিকে নিয়ে গ্রামের বাড়ি কুমিল্লার মুরাদনগর যেতে সায়েদাবাদ টার্মিনালে আসা দুলাল মিয়া বলেন, কারখানা গতকাল বন্ধ হওয়ায় আজ ভোরেই গাড়ি ধরতে এসেছি। দেখি গাড়ি নেই।

ভাড়া কত নিচ্ছে জানতে চাইলে তিনি বলেন, গাড়িই তো নেই, ভাড়ার কথা কী বলবো। এমনিতে ভাড়া ১৬০ টাকা। অনেক গাড়ি দাবি করছে ৫০০ টাকা।

বাড়তি ভাড়া আদায়ের ব্যাপারে জিজ্ঞেস করা হলে ঢাকা-কুমিল্লা রুটের তিশা পরিবহনের কাউন্টার মাস্টার আবুল হাশেম বলেন, সারা রাস্তায় জ্যাম, গাড়ি চলে না। আবার ওদিক থেকে গাড়ি ঢাকায় আসছেও ফাঁকা। তাই ভাড়া নিচ্ছি ‘একটু বেশি’।

এ বিষয়ে বিআরটিএ’র সায়েদাবাদ ভিজিল্যান্স টিমের মোটরযান পরিদর্শক (এমভিআই) মাহাবুবুল ইসলাম বলেন, অতিরিক্ত ভাড়ার বিষয়ে আমার তদারকি করছি। যারা যাত্রীদের কাছ থেকে অতিরিক্ত ভাড়ার নিচ্ছেন তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিচ্ছি।

এদিকে গাবতলী বাস টার্মিনালে দেখা যায়, গন্তব্যের বাসগুলো নির্ধারিত সময়ে না ছাড়ায় ভিড় বাড়ছে বাড়ি ফেরা যাত্রীদের। কাউন্টারগুলোর প্রতিনিধিরা জানান, দৌলতদিয়া ঘাটের পরে সাভারের নবীনগরে যানজটের কারণে কোনো বাসই নির্ধারিত সময়ে গাবতলী এসে পৌঁছাতে পারছে না। সে কারণে আমাদের গাড়িগুলো ছাড়তে দেরি হচ্ছে।

তবে লোকাল বাস সার্ভিসের যাত্রীদের গাবতলী বাস টার্মিনালে এসে অপেক্ষা করতে হচ্ছে না। বাসস্ট্যান্ডে আসার পরেই পদ্মা লাইনসহ অন্য সব বাসে উঠার সুযোগ পাচ্ছেন। লোকাল বাসগুলোতে যাত্রীদের কাছ থেকে ১শ টাকার ভাড়া আদায় করা হচ্ছে ৩শ-৪শ পর্যন্ত। তবে ছাদে যাওয়ার জন্য গুনতে হচ্ছে ১শ টাকা ভাড়া।

অতিরিক্ত ভাড়া নেওয়ার বিষয়ে পদ্মা লাইন বাসের সুপারভাইজার আজগর আলীর কাছে জানতে চাইলে তিনি বলেন, সবগাড়ি এখন গাবতলী থেকে যাত্রী নিয়ে গেলেও পাটুরিয়া থেকে খালি ছেড়ে আসছে। আসার সময় যাত্রী পাওয়া গেলে ভাড়া কমানো যেতো।
খবর ৭১/ই:

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here