হবিগঞ্জের সাংবাদিক জুনাইদ হত্যা মামলায় ৩ জনের যাবজ্জীবন

0
400
হবিগঞ্জের সাংবাদিক জুনাইদ হত্যা মামলায় ৩ জনের যাবজ্জীবন
সাংবাদিক জুনাইদ। ছবিঃ মঈনুল হাসান রতন, হবিগঞ্জ প্রতিনিধি।

খবর৭১ঃ

মঈনুল হাসান রতন, হবিগঞ্জ প্রতিনিধিঃ হবিগঞ্জের নবীগঞ্জ উপজেলার সাংবাদিক জুনাইদ আহমদ হত্যা মামলায় তিন জনকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দিয়েছেন আদালত। এছাড়া প্রত্যেককে ১০ হাজার টাকা করে জরিমানা অনাদায়ে আরও এক মাসের কারাদণ্ড প্রদান করা হয়েছে।সোমবার (২৩ সেপ্টেম্বর) সকাল ১১টার দিকে এ রায় ঘোষণা করেন অতিরিক্ত জেলা ও দায়রা জজ মোহাম্মদ নাসিম রেজা।

দণ্ডপ্রাপ্তরা হলেন- উপজেলার সাতাইল গ্রামের বাবুল মিয়ার ছেলে বাদশাহ মিয়া (৪০), দেবপাড়া গ্রামের হাছিল মিয়ার ছেলে রাহুল মিয়া (৩৫) ও ফরিদ মিয়া। রায় ঘোষণার সময় বাদশাহ ও রাহুল আদালতে উপস্থিত ছিলেন। ফরিদ মিয়া যুক্তরাজ্যে পলাতক রয়েছেন।বাদীপক্ষে মামলা পরিচালনা করেন অ্যাডভোকেট আব্দুল আহাদ ফারুক, অ্যাডভোকেট এম আকবর হোসেইন জিতু, অ্যাডভোকেট আজিজুর রহমান ও অ্যাডভোকেট শাহ ফখরুজ্জামান।আসামিপক্ষে যুক্তিতর্কে অংশ নেন অ্যাডভোকেট হাবিবুর রহমান, অ্যাডভোকেট আবুল ফজল ও অ্যাডভোকেট মোফাজ্জল হোসেন।পলাতক হয়ে বিদেশে চলে যাওয়া প্রধান আসামি ফরিদ মিয়ার পক্ষে স্টেইট ডিফেন্স হিসেবে যুক্তিতর্ক উপস্থাপন করেন অ্যাডভোকেট জাকারিয়া।প্রসঙ্গত, ২০১২ সনের ১০ জুলাই সাংবাদিক জুনাইদ আহমদ বাড়ি থেকে বের হয়ে হবিগঞ্জ জেলা সদরে যান। ওই দিন রাতেই দুর্বৃত্তরা তাকে হত্যা করে আলামত নষ্ট করার জন্য শায়েস্তাগঞ্জ ডিগ্রি কলেজের কাছে রেল লাইনে ফেলে রাখে। পরদিন ১১ জুলাই সকালে সাংবাদিক জুনাইদ আহমদের মরদেহের প্রায় ২০ টুকরা রেললাইন থেকে উদ্ধার করে রেল পুলিশ।

ঘটনার শুরুতেই জুনাইদ আহমদের পরিবার এটাকে পরিকল্পিত হত্যাকাণ্ড বলে দাবি করে আসছিল। একপর্যায়ে জুনাইদের ভাই মোজাহিদ আহমদ বাদী হয়ে হবিগঞ্জের আদালতে একই গ্রামের ফরিদ উদ্দিনকে প্রধান আসামি করে চার জনের বিরুদ্ধে একটি হত্যা মামলা দায়ের করলে আদালত মামলাটি এফআইআর হিসেবে রুজু করার জন্য জিআরপি থানা পুলিশকে নির্দেশ দেন। মামলার খবর পেয়েই প্রধান আসামি ফরিদ ইংল্যান্ডে পালিয়ে যায়। অপর আসামিরাও আত্মগোপন করে।এদিকে পুলিশের রহস্যজনক ভূমিকায় জুনাইদের পরিবার তৎকালীন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী মহিউদ্দিন খান আলমগীরের কাছে উক্ত হত্যাকাণ্ডের বিচার ও আসামিদের গ্রেফতারের আবেদন করেন। মন্ত্রী এক মাসের মধ্যে আসামিদের গ্রেফতারে সংশ্লিষ্ট পুলিশকে নির্দেশ দিলেও কোনো ফল হয়নি। একপর্যায়ে পুলিশ গোপন সংবাদের ভিত্তিতে বাহুবল থেকে মামলার ২ নম্বর পলাতক আব্দুল হামিদকে গ্রেফতার করে। পরে রেলওয়ে পুলিশ শ্রীমঙ্গল জোনের তদন্ত কর্মকর্তা রিমান্ডের আবেদন করে তাকে তিন দিনের রিমান্ডে নেন।

রিমান্ডে নিয়ে ওই কর্মকর্তা হত্যাকান্ডের কোনো ক্লু উদঘাটন না করে আসামিদের সঙ্গে সখ্যতা গড়ে তোলেন বলে অভিযোগ উঠে। এরই পরিপ্রেক্ষিতে জুনাইদের পরিবার বাংলাদেশ রেলওয়ে পুলিশের ডিআইজি সোহরাব হোসেনের কাছে অভিযোগ দিলে তিনি নিহত সাংবাদিকের পরিবারকে সান্তনা দিয়ে এ হত্যাকাণ্ডের বিচারের আশ্বাস দেন। এরই পরিপ্রক্ষিতে ডিআইজি সোহরাব হোসেন শায়েস্তাগঞ্জে আসেন। তিনি এ সময় বলেন-সাংবাদিক জুনাইদ আহমদ হত্যাকাণ্ডের বিষয়ে কারো সঙ্গে আপস হবে না। প্রয়োজনে সংঘবদ্ধভাবে পলাতক আসামিকে গ্রেফতার করে পুলিশকে জানানোর জন্য সাংবাদিকসহ সুশীল সমাজের প্রতি আহ্বান জানান।এ মামলার প্রধান আসামি ফরিদ লন্ডনে পলাতক, অপর আসামি বাহুবলের মাদক সম্রাট আব্দুল হামিদকে স্থানীয় জনতা আটক করে উত্তম মধ্যম দিয়ে পুলিশে সোপর্দ করে। প্রায় বছর খানেক জেল খেটে বের হলে স্থানীয় লোকজন তার অত্যাচারে অতিষ্ঠ হয়ে গণপিটুনি দিয়ে মেরে ফেলেন। ৩য় আসামি বাদশা ছয় মাস জেলে থাকার পর জামিনে মুক্তি পায়। ৪র্থ আসামি রাহুলও ছয় মাস জেলে থাকার পর জামিনে মুক্ত রয়েছে।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here