সৈয়দপুরে রেলের জমি বরাদ্দে ফরম সংগ্রহে মানুষের চরম ভোগান্তি, সময় বাড়ানোসহ অনলাইন চালুর দাবি

0
819
সৈয়দপুরে রেলের জমি বরাদ্দে ফরম সংগ্রহে মানুষের চরম ভোগান্তি

খবর৭১ঃ

মিজানুর রহমান মিলন, সৈয়দপুর থেকেঃ জনদুর্ভোগ কমাতে সরকার বিভিন্ন পর্যায়ের ফরম বিতরণ অনলাইনে ডিজিটাল পদ্ধতি অনুসরণ করলেও রেলওয়ে ভূ-সম্পত্তি বিভাগের ফরম বিতরণ কার্যক্রম পুরোনো এনালগ পদ্ধতিতে চলছে। ফলে রেলওয়ে ভূমি বিভাগের জমি বরাদ্দের ফরম বিতরণে চরম দুর্ভোগের শিকার হচ্ছেন ফরম সংগ্রহকারীরা।

রেলওয়ে ভূমি-সম্পদ বিভাগ সূত্রে জানা যায়, সৈয়দপুরে রেল ভূমিতে বসবাসকারীদের জমি বরাদ্দ পেতে গত ৩০ সেপ্টেম্বর ফরম সংগ্রহের জন্য মাইকিং করা হয়। এতে ১০ অক্টোবরের মধ্যে পার্বতীপুরস্থ রেলওয়ে কাচারি অফিস থেকে ফরম সংগ্রহের সময় বেধে দেয়া হয়। ফলে সংক্ষিপ্ত সময়ের কারণে সৈয়দপুরের হাজার হাজার মানুষ ফরম সংগ্রহের জন্য ১৬ কিলোমিটার দূরে পার্বতীপুর অফিসে ছুটে যান।হুমড়ি খেয়ে পড়েন ফরম সংগ্রহে। কিন্তু ফরম বিতরণে সাবেকি এনালগ পদ্ধতিতে ধীরগতিতে ফরম দেয়ায় হয়রানি ও ভোগান্তিতে পড়ছেন ফরম সংগ্রহকারীরা।

এনালগ পদ্ধতিতে হাতে লিখে ফরম বিতরণ করার সময় ক্ষেপণে সকাল থেকে বিকাল পর্যন্ত লাইনে দাঁড়িয়েও সিংহভাগ মানুষ ফরম সংগ্রহে ব্যর্থ হচ্ছেন। ফলে বাধ্য হয়ে একজন মানুষকে ফরম সংগ্রহের জন্য ২ থেকে ৩ দিন লাইনে দাঁড়িয়ে ভোগান্তি পোহাতে হয়। অথচ এ হয়রানি বন্ধে রেলওয়ের উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের কোন মাথা ব্যথা নেই। ভূক্তভোগীরা অভিযোগে জানান, সরকারের সব দপ্তর ও প্রতিষ্ঠানের সরকারি ফরম বিতরণে ডিজিটাল অনলাইন পদ্ধতি অনুসরণ করা হলেও রেলওয়ে ভূমি বিভাগ চলছে সাবেকি এনালগ পদ্ধতিতে। এ কারণে তাদের দরকারি কাজ ফেলে ফরম সংগ্রহে ভোগান্তিসহ অযথা সময় অপচয় করতে হচ্ছে। অথচ এই ফরম ডিজিটাল পদ্ধতিতে অনলাইনে বিতরণে উদ্যোগ নিলে মানুষকে ভোগান্তিতে পড়তে হত না।

মানুষ নিজ উদ্যোগে সহজে ফরম সংগ্রহ করতে পারতেন। রেল কর্মকর্তারা সরকারের ডিজিটাল পদ্ধতির প্রতি বৃদ্ধাঙ্গুলী দেখিয়ে এনালগ পদ্ধতিতে ফরম বিতরণ বহাল রেখেছেন। ভূক্তভোগীরা ফরম বিতরণে ডিজিটাল পদ্ধতি দ্রুত চালু করতে সরকারের সর্বোচ্চ কর্তৃপক্ষের দৃষ্টি আকর্ষণ করেছেন। গতকাল রোববার সরেজমিনে পার্বতীপুর রেলওয়ে কাচারী অফিসে গিয়ে দেখা যায়, কাচারি অফিস চত্বরে হাজার হাজার নারী-পুরুষের ভীড়। সবাই লাইন ধরে দাঁড়িয়ে কাউন্টার ফরম সংগ্রহ করছেন। এতে এক একটি ফরম সংগ্রহ করতে ৫ থেকে ৭টি মিনিট ব্যয় হওয়ায় সারাদিন লাইনে দাঁড়িয়েও অধিকাংশ মানুষ ফরম সংগ্রহ থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন। এতে করে বেশীরভাগ মানুষকে হয়রান হয়ে খালি হাতে বাড়ি ফিরতে দেখা যায়। রেলয়ের কাচারী অফিস চত্বরে লাইনে দাঁড়ানো সৈয়দপুর শহরের বাঙ্গালীপুর এলাকার নুরুন নবী চৌধুরীর সঙ্গে কথা হয়।

তিনি জানান, গত ২ দিন ধরে তিনি লাইনে দাঁড়িয়েও ফরম সংগ্রহ করতে পারেননি। একটি মাত্র কাউন্টারে ফরম দিতে দেরী হওয়ায় দুই আড়াইশ জনকে ফরম দিতে অফিস সময় শেষ হয়ে যাচ্ছে। তিনি ২ দিন দাঁড়িয়েও ফরম সংগ্রহ করতে পারেননি। একই কথা বলেন সৈয়দপুর থেকে আসা লাইনে দাঁড়ানো নবী হোসেন, আরমান, মাসুমসহ আরো অনেকে। ভুক্তভোগীরা বলেন অনলাইনে ফরম বিতরণ করা হলে আমাদের এমন দুর্ভোগ পোহাতে হত না। সৈয়দপুর থেকে ভোগান্তি ছাড়া ফরম সংগ্রহ করা যেত।

অথচ কর্তৃপক্ষ অনলাইন সেবার বদলে এনালগ সেবায় রয়ে গেছেন। মহিলাদের লাইনে দাঁড়ানো সৈয়দপুর শহরের স্কুল শিক্ষিকা ইয়াসমিন বেগম ক্ষোভ জানিয়ে বলেন, মহিলাদের আলাদা কাউন্টার না করায় মহিলাদের বিব্রত পরিস্থিতি শিকার হতে হচ্ছে। সকাল থেকে লাইনে দাঁড়িয়ে আছেন, কিন্তু ফরম বিতরণে গতি না থাকায় শেষ পর্যন্ত ফরম পাবেন কিনা এ নিয়ে সংশয় প্রকাশ করেন। তার মতে, হাজার হাজার ফরম প্রত্যাশীর জন্য অনলাইনে ফরম বিতরণ ছিল উত্তম।

কিন্তু কর্তৃপক্ষ তা না করে হাতে লিখে ফরম বিতরণ করায় ফরম সংগ্রহের জন্য একজনকে ২/৩ দিন লাইনে দাঁড়াতে হচ্ছে। এতে মহিলাদের বার বার আসা এবং দীর্ঘ সময় দাঁড়িয়ে থাকা কষ্টকর হয়ে উঠেছে। তিনি ফরম বিতরণ কার্যক্রমের সময় তারিখ বাড়ানোসহ অনলাইন পদ্ধতি চালু করতে রেলপথ মন্ত্রীর হস্তক্ষেপ কামনা করেন। জানতে চাইলে, পশ্চিম রেলওয়ের পাকশী বিভাগীয় ভূ-সম্পত্তি কর্মকর্তা ও নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট মো. নূরুজ্জামান জানান, রেলওয়ের উচ্ছেদ কার্যক্রম চলমান রয়েছে।

এ অবস্থায় রেলপথ মন্ত্রীর নির্দেশে দ্রুত সময়ের মধ্যে রেলের জমি বরাদ্দের ফরম বিতরণের কার্যক্রম শুরু করায় অনলাইন পদ্ধতি চালু করা সম্ভব হয়নি। কারণ অনলাইন পদ্ধতি চালুর জন্য কিছুটা সময়ের প্রয়োজন। তবে এ পদ্ধতি চালুর প্রক্রিয়া শুরু করা হয়েছে। পরবর্তী সময়ে অনলাইনে সেবা পাওয়া যাবে। ফরম সংগ্রহের ভোগান্তির প্রশ্নে তিনি বলেন, বিষয়টি নজরে রয়েছে, মানুষের ভোগান্তি কমাতে সংশ্লিষ্ট অফিসগুলোকে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে নির্দেশ দেয়া হয়েছে।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here