সারা রাত আমরা কেউ ঘুমাতে পারিনি : মাহমুদউল্লাহ

0
492

খবর ৭১ঃ ক্রাইস্টচার্চে গত শুক্রবারের ভয়াল দুপুরে অল্পের জন্য প্রাণে বেঁচে যাওয়া বাংলাদেশ জাতীয় দলকে বহনকারী সিঙ্গাপুর এয়ারলাইন্সের বিমান গতকাল রাত ১০টা ৪২ মিনিটে এসে ঢাকায় পৌঁছায়। ১৯ জনের বহরের প্রায় সবাই ভিআইপি লাউঞ্জের আরেক পাশ দিয়ে বের হয়ে যান।

রাত ১১টা ১০ মিনিটে ভারপ্রাপ্ত অধিনায়ক মাহমুদউল্লাহ রিয়াদ ও ম্যানেজার খালেদ মাসুদ পাইলটকে নিয়ে গণমাধ্যমের সামনে আসেন বিসিবি সভাপতি নাজমুল হাসান পাপন। তার সঙ্গে ছিলেন যুব ও ক্রীড়া প্রতিমন্ত্রী জাহিদ আহসান রাসেল, বিসিবি পরিচালক জালাল ইউনুস, বিসিবির সিইও নিজামউদ্দিন চৌধুরী সুজন।

এটা ঠিক সংবাদ সম্মেলন ছিলনা। কারণ মাহমুদউল্লাহ রিয়াদ ছোট্ট একটু বক্তব্য দিয়ে বের হয়ে যান। ভ্রমণক্লান্তি ছিল। সঙ্গে অধিনায়কের ভীতশ্রদ্ধ মুখ বলে দিচ্ছিল, সেই ভয়াবহতা তাড়িয়ে বেড়াচ্ছে ক্রিকেটারদের।

মাহমুদউল্লাহ বিমান বন্দরে বলেছেন, ‘এ ঘটনা একেবারেই অপ্রত্যাশিত। এমন ভয়ঙ্কর ঘটনা কারোরই কাম্য নয়। আমরা খুব ভাগ্যবান। এমন ঘটনার পরও আমাদের কিছু হয়নি।’

তিনি আরও বলেছেন, ‘কাল (শুক্রবার) সারা রাত আমরা কেউ ঘুমাতে পারিনি। আমাদের শুধু মনে হচ্ছিল, একটু এদিক-ওদিক হলে কী ভীষণ ঘটনাই না ঘটতো!’

তৃতীয় টেস্ট বাতিল করে গোটা দলকে ফিরিয়ে আনায় বিসিবিকে ধন্যবাদ জানিয়েছেন মাহমুদউল্লাহ। তিনি বলেছেন, ‘বিসিবিকে এবং পাপন ভাইকে ধন্যবাদ জানাচ্ছি। আমাদের দ্রুত দেশে ফিরিয়ে এনেছেন তারা। দেশবাসীর কাছে আমরা দোয়া চাই। আমরা যেন মানসিক ধাক্কা কাটিয়ে উঠতে পারি সেই দোয়াই চাই তাদের কাছে।’

পরে বিসিবি সভাপতি নাজমুল হাসান পাপন অপেক্ষমাণ সাংবাদিকদের জানান ক্রিকেটাররা সবাই মানসিকভাবে ভেঙে পড়েছেন। তিনি বলেন, ‘একটু আগে মাহমুদউল্লাহ বলেছে তারা ঘুমাতে পারেনি সারারাত। ওদের জন্য এটা ২২ ঘণ্টার ভ্রমণ। এতো লম্বা ভ্রমণে তারা সবাই ক্লান্ত। মানসিকভাবে ভেঙে পড়েছে অনেকেই। এখন ওদের সাথে কথা বলারও কিছু নেই।’

বিসিবি সভাপতি আরো বলেন, ‘আমরা সবাই ওদেরকে বলেছি, যাও বাসায় যাও। সবকিছু বাদ দিয়ে, ঠাণ্ডা মাথায়, নিজেদের মতো করে, যা ভালো লাগে সেভাবে কাটাও। সবকিছু ঠাণ্ডা হলে তারপর আমাদের সাথে যোগাযোগ করো। খেলাধুলা নিয়ে এই মুহূর্তে কোনো চিন্তা ভাবনা করবে না। পরিবারের সাথে সময় কাটাবে।’

সচরাচর এমনটি দেখা যায় না। গোটা নিউজিল্যান্ড সফর জুড়েই বাংলাদেশ দলের পারফরম্যান্সের খাতায় ছিল রাজ্যের হতাশা। যে কোনো ব্যর্থ মিশন শেষে দেশে ফেরা দলের অপেক্ষায় থাকে মূলত গণমাধ্যম কর্মী ও বিসিবির কয়েকজন কর্মকর্তা। কিন্তু গতকাল রাতে বাংলাদেশ জাতীয় ক্রিকেট দলকে অভ্যর্থনা জানাতে বিমানবন্দরে ছিল বহু মানুষের ভিড়।

সফরে মাঠের ক্রিকেটে ঠিকই ব্ল্যাক ক্যাপসদের কাছে হেরেছে বাংলাদেশ। কিন্তু জীবনের কাছে ২২ গজের লড়াই, রোমাঞ্চ সবই নস্যি! সেই জীবনই গত শুক্রবার ক্রাইস্টচার্চে বিপন্ন হতে যাচ্ছিল। জুমার নামাজ আদায় করতে আল-নূর মসজিদেই যাচ্ছিলেন বাংলাদেশের ক্রিকেটাররা। কয়েক মিনিট আগে সেই মসজিদেই সন্ত্রাসীর নির্বিচারে গুলি বর্ষণে ৪৯ মুসুল্লি নিহত হয়েছেন। কয়েক মিনিটের ব্যবধানে সেই বর্বর হত্যাকাণ্ড থেকে বেঁচে ফিরেন তামিম-মুশফিকরা।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here