খবর ৭১: সুষ্ঠু নির্বাচনের আহ্বান জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা এবং দলটির সাধারণ সম্পাদক এবং সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদেরের কাছে চিঠি দিয়েছে জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট। আজ রবিবার (২৮ অক্টোবর) সন্ধ্যায় জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের অন্যতম প্রধান নেতা ও গণফোরাম সভাপতি ড. কামাল হোসেন স্বাক্ষরিত এ চিঠিটি আওয়ামী লীগ সভাপতির রাজনৈতিক কার্যালয়ে নিয়ে আসেন গণফোরামের প্রেসিডিয়াম সদস্য এ কে এম জগলুল হায়দার আফ্রিক ও দলটির যুগ্ম সেক্রেটারি আ হ ম শফিকুল্লাহ। চিঠিটি গ্রহণ করেন আওয়ামী লীগের দফতর সম্পাদক আব্দুস সোবহান গোলাপ।
ঐক্যফ্রন্টের প্যাডে ড. কামাল স্বাক্ষরিত এ চিঠিতে সাত দফা ও ১১টি লক্ষ্য সংযুক্ত করে দেওয়া হয়। এ চিঠিতে জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের পক্ষ থেকে ৭ দফা ও ১১ লক্ষ্য উল্লেখ করে সুষ্ঠু নির্বাচনের স্বার্থে সংলাপ আয়োজনের দাবি করা হয়েছে।
চিঠি পাওয়ার পর এর সত্যতা নিশ্চিত করে আব্দুস সোবহান গোলাপ বলেছেন, প্রধানমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা এবং সাধারণ সম্পাদক ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের বরাবর ঐক্যফ্রন্টের পাঠানো দুটি চিঠি আমরা পেয়েছি। আগামীকাল চিঠিগুলো খোলা হবে। এরপর এ বিষয়ে দলের পক্ষ থেকে জবাব দেওয়া হবে কিনা তা ঠিক করা হবে।
পূর্ব ঘোষণা অনুযায়ী গতকাল শনিবার এ চিঠি শেখ হাসিনা ও ওবায়দুল কাদেরের কাছে পৌঁছে দেওয়ার কথা জানিয়েছিলেন ঐক্যফ্রন্টের নেতারা। তবে চট্টগ্রামে ঐক্যফ্রন্টের সমাবেশের কারণে একদিন পিছিয়ে আজ রবিবার এ চিঠি দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেয় ঐক্যফ্রন্ট।
চিঠি গ্রহণের সময় আওয়ামী লীগ কার্যালয়ে দলটির ত্রাণ ও সমাজকল্যাণ সম্পাদক সুজিত রায় নন্দী, কার্যনির্বাহী সংসদের সদস্য আমিরুল আলম মিলন ও এস এম কামাল হোসেন উপস্থিত ছিলেন।
এদিকে, এ চিঠি দেওয়াকে কেন্দ্র করে নাটকীয় পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়। চিঠি দেওয়ার জন্য ঐক্যফ্রন্টের নেতারা আসছেন-এমন খবর আওয়ামী লীগ কার্যালয়ে পৌঁছালে সেখানে থাকা আওয়ামী লীগ নেতারা কার্যালয় ত্যাগ করেন। পরে সেখানে এসে পৌঁছান সুজিত, কামাল এবং মিলন। সবশেষে কার্যালয়ে আসেন গোলাপ। ওদিকে চিঠি আওয়ামী লীগ কার্যালয়ে পৌঁছে দেওয়ার জন্য আগে থেকেই কার্যালয়ের উল্টোদিকের একটি কফিশপে অপেক্ষা করছিলেন গণফোরামের সাধারণ সম্পাদক মোস্তফা মহসিন মন্টু এবং ঐক্যফ্রন্টের নেতা সুলতান মনসুর আহমেদ। কিন্তু শেষ পর্যন্ত তারা আওয়ামী লীগ কার্যালয়ে যাননি। এ দু’জনই আওয়ামী লীগের সাবেক নেতা।
ঐক্যফ্রন্টের একটি সূত্র জানায়, এ দু’জনেরই চিঠি দিতে যাওয়ার কথা ছিল। কিন্তু আওয়ামী লীগ কার্যালয়ের উল্টোদিকে গিয়ে তারা অপেক্ষা করতে থাকেন। তারা ভেতরে গেলে তাদের নামে নেতিবাচক স্লোগান দেওয়াসহ বিব্রতকর পরিস্থিতির সৃষ্টি হতে পারে এমন সম্ভাবনা আঁচ করতে পেরে তারা নিজেরা যাওয়া থেকে বিরত থাকেন।
উল্লেখ্য, সুলতান মো. মনসুর ছাত্রলীগের হয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্র সংসদের ভিপি নির্বাচিত হয়েছিলেন। সর্বশেষ তিনি আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক ছিলেন। কিন্তু এক এগারোর সময় শেখ হাসিনা বিরোধী বলয়ে অবস্থান নিয়ে সংস্কারপন্থীর তকমা পান তিনি। এরপর ২০০৮ সালের নির্বাচনে মনোনয়ন হারান এবং ২০০৯ সালের সম্মেলনে দলের পদ হারান। আর মোস্তফা মোহসিন মন্টু এক সময় ছাত্রলীগের তুখোর নেতা ছিলেন। কিন্তু দলের অভ্যন্তরীণ কোন্দলে ছাত্রলীগ ভাঙার অপরাধে দোষী সাব্যস্ত হয়ে আওয়ামী লীগ থেকে বাদ পড়েন। পরে গণফোরাম গঠিত হলে দলটির সাধারণ সম্পাদকের পদ পান।
চিঠি হস্তান্তর করে ঐক্যফ্রন্টের নেতারা চলে যাওয়ার পর রাত সাড়ে সাতটার দিকে দলীয় কার্যালয়ে এসে পৌঁছান আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক। এরপর দেড় ঘণ্টারও বেশি সময় ধরে দলের অন্য নেতাদের সঙ্গে তিনি ঐক্যফ্রন্টের চিঠি নিয়ে আলোচনা করছিলেন।